ঢাকা ১০:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo নবীগঞ্জ শহরসহ ৭টি গ্রামের মানুষ জন শুন্য যৌথবাহিনী অভিযান ১৩ জন আটক Logo হবিগঞ্জে চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই Logo নবীগঞ্জে ভয়াবহ সংঘর্ষ নিহত ১ আহত কয়েক শতাধিক Logo জুলাই অভ্যুত্থানে নৃশংস হামলার আসামি ও দালাল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজারে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি Logo ৪দিনের উত্তেজনার পর নবীগঞ্জে কয়েক হাজার মানুষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত কয়েক শতাধিক Logo নবীগঞ্জ দফায় দফায় সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত Logo এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১০ জুলাই Logo হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক নেতা সাকিব গ্রেপ্তার Logo শায়েস্তাগঞ্জ থানার সাবেক ওসি কামালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা: সাংবাদিকসহ ২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ Logo হবিগঞ্জে ছুরিকাঘাতে এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত

আবর্জনায় বিপর্যস্ত মাধবপুরের সোনাই নদী

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি

সোনাই নদকে দেখলে এখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এটা একটা নদ। কোনো স্রোত নেই, প্রাণ নেই। নদের পাড়ের মানুষ প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ফেলছে নদে। ফলে এর বিভিন্ন জায়গা এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

ভারতের ত্রিপুরা থেকে উৎপত্তি হয়ে মাধবপুর খাষ্টি নদী হয়ে নাসিরনগর তিতাস নদীতে মিলিত হয়েছে সোনাই নদ। ভারত থেকে বয়ে এ নদটির দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার। গড় প্রস্থ ৮২ মিটার। আগে সারা বছর পানির প্রবাহ থাকলেও এখন সোনাই নদ যেন মরে যাবার উপক্রম।

সোনাই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে মাধবপুর বাজার। আজ যেন বাজারই সোনাই নদ ধ্বংসের কারণ। বাজারের সব ময়লা আবর্জনা যুগ যুগ ধরে ফেলা হচ্ছে সোনাই নদীতে । যেন ইচ্ছে করে তিলতিল করে নদীকে মেরে ফেলা হচ্ছে।

নদীপাড় ঘুরে দেখা গেছে, চৌমুহনী এলাকায় সোনাই নদীতে দুটো রাবার ড্যাম রয়েছে। রাবার ড্যাম এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার কারনে নদীর পাড় ভেঙ্গে গেছে। মাধবপুর থানার পূর্ব থেকে নদী সবচেয়ে দুষিত হয়েছে। মাধবপুর বাজারের বাসাবাড়ি সহ দুষিত পানি ছোট পাকা নালার মাধ্যমে সরাসরি নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে নদীর পানি কালো হয়ে গেছে।

নদের পাড়েই জন্ম ৭০ বছর বয়সি আৎকাপাড়ের জমির হোসেন বলেন, নদের এই অবস্থা দেখে তার মুখে শুধুই আফসোস। তার শৈশবের স্মৃতি বর্ণনা করে বলেন, একসময় এই নদে স্রোত ছিল। চোখের সামনে কীভাবে নদটি ধীরে ধীরে দূষণের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে গেল, তার কাছে অবিশ্বাস্যই মনে হয়। তিনি বলেন, আগে সোনাই নদ অনেক সুন্দর ছিল।

বর্তমানে এটা ড্রেনের উপযুক্ত হয়ে গেছে। তার মতো অনেকেই শৈশবে গোসল, সাঁতার কাটাসহ মাছ শিকার করেছেন এই নদে। নদে মাছ ধরে অনেকেই যেমন জীবন-জীবিকা চালিয়েছেন, তেমনি খাবারের পাতেও সোনাই মাছ ছিল একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু দূষণে বিপর্যস্ত এ নদে এখন মাছের দেখা মেলে না।

বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বাড়লে জেলেদের মাছ ধরতে দেখা গেলেও সেই মাছে থাকে দুর্গন্ধ। মাছ ধরে দু-চারদিন পানিতে না রেখে সে মাছ খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পানিতে দুর্গন্ধ।

কখনো কখনো দুর্গন্ধের মাত্রা এতটাই তীব্র যে নদী পাড়ে বাস করা মুশকিল। নদের দুই ধারে যেসব জনবসতি আছে, সেখানকার মানুষ আবর্জনা ফেলছে এই নদে। যেন সবাই জেনেশুনে নদটি মেরে ফেলছে। প্লাস্টিক, পলিথিন ব্যাগ, কাপড়, মরা পশুর দেহসহ নানা ধরনের আবর্জনা। কোথাও কোথাও নদে দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনা ফেলায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।গত কয়েক বছরে সোনাই তীরের বিভিন্ন জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হলেও দূষণের মাত্রা কমেনি বলে পরিবেশবাদীরা জানান।

পরিবেশ আইনজীবী সমিতি বেলার কর্মী ওমাইয়া ফেরদৌস জানান, মানুষ বিভিন্নভাবে সোনাই নদটি ধ্বংস করে দিয়েছে। নদটি বিষাক্ত পদার্থে ভরাট হয়ে ছোট খালে পরিণত হয়েছে। একটি নদীর পানির গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে প্রাণপ্রকৃতির জন্য খুবই মঙ্গলজনক। সোনাই নদকে বাঁচাতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। নদী খনন করে পাড় বেধে ময়লা ফেলা বন্ধ করা হলে সোনাই নদ বাঁচানো যাবে।

মাধবপুর পৌরসভার সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, বাজারের ময়লা নদে না ফেলতে বাজার ব্যবসায়ী সহ নাগরিকদের নিষেধ করা হয়েছে। তবে নদী দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে পরিবশেবাদীরা অনেক আন্দোলন করলেও বিষয়টি নিয়ে নদীতীরের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে কোনো সচেতনতাই নাই। নদী দূষণমুক্ত রাখতে হলে নদীতীরের মানুষকে সর্বাগ্রে সচেতন করাই জরুরি।

মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী জাহিদ বিন কাশেম বলেন, সোনাই নদীর একটি ঐতিহ্যবাহী নদী। কিন্তু মানুষ ধীওে ধীরে নদীটি ধ্বংশ করছে। নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারের সংশিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৫:৫৭:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
৪৮ বার পড়া হয়েছে

আবর্জনায় বিপর্যস্ত মাধবপুরের সোনাই নদী

আপডেট সময় ০৫:৫৭:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

সোনাই নদকে দেখলে এখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এটা একটা নদ। কোনো স্রোত নেই, প্রাণ নেই। নদের পাড়ের মানুষ প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ফেলছে নদে। ফলে এর বিভিন্ন জায়গা এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

ভারতের ত্রিপুরা থেকে উৎপত্তি হয়ে মাধবপুর খাষ্টি নদী হয়ে নাসিরনগর তিতাস নদীতে মিলিত হয়েছে সোনাই নদ। ভারত থেকে বয়ে এ নদটির দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার। গড় প্রস্থ ৮২ মিটার। আগে সারা বছর পানির প্রবাহ থাকলেও এখন সোনাই নদ যেন মরে যাবার উপক্রম।

সোনাই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে মাধবপুর বাজার। আজ যেন বাজারই সোনাই নদ ধ্বংসের কারণ। বাজারের সব ময়লা আবর্জনা যুগ যুগ ধরে ফেলা হচ্ছে সোনাই নদীতে । যেন ইচ্ছে করে তিলতিল করে নদীকে মেরে ফেলা হচ্ছে।

নদীপাড় ঘুরে দেখা গেছে, চৌমুহনী এলাকায় সোনাই নদীতে দুটো রাবার ড্যাম রয়েছে। রাবার ড্যাম এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার কারনে নদীর পাড় ভেঙ্গে গেছে। মাধবপুর থানার পূর্ব থেকে নদী সবচেয়ে দুষিত হয়েছে। মাধবপুর বাজারের বাসাবাড়ি সহ দুষিত পানি ছোট পাকা নালার মাধ্যমে সরাসরি নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে নদীর পানি কালো হয়ে গেছে।

নদের পাড়েই জন্ম ৭০ বছর বয়সি আৎকাপাড়ের জমির হোসেন বলেন, নদের এই অবস্থা দেখে তার মুখে শুধুই আফসোস। তার শৈশবের স্মৃতি বর্ণনা করে বলেন, একসময় এই নদে স্রোত ছিল। চোখের সামনে কীভাবে নদটি ধীরে ধীরে দূষণের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে গেল, তার কাছে অবিশ্বাস্যই মনে হয়। তিনি বলেন, আগে সোনাই নদ অনেক সুন্দর ছিল।

বর্তমানে এটা ড্রেনের উপযুক্ত হয়ে গেছে। তার মতো অনেকেই শৈশবে গোসল, সাঁতার কাটাসহ মাছ শিকার করেছেন এই নদে। নদে মাছ ধরে অনেকেই যেমন জীবন-জীবিকা চালিয়েছেন, তেমনি খাবারের পাতেও সোনাই মাছ ছিল একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু দূষণে বিপর্যস্ত এ নদে এখন মাছের দেখা মেলে না।

বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বাড়লে জেলেদের মাছ ধরতে দেখা গেলেও সেই মাছে থাকে দুর্গন্ধ। মাছ ধরে দু-চারদিন পানিতে না রেখে সে মাছ খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পানিতে দুর্গন্ধ।

কখনো কখনো দুর্গন্ধের মাত্রা এতটাই তীব্র যে নদী পাড়ে বাস করা মুশকিল। নদের দুই ধারে যেসব জনবসতি আছে, সেখানকার মানুষ আবর্জনা ফেলছে এই নদে। যেন সবাই জেনেশুনে নদটি মেরে ফেলছে। প্লাস্টিক, পলিথিন ব্যাগ, কাপড়, মরা পশুর দেহসহ নানা ধরনের আবর্জনা। কোথাও কোথাও নদে দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনা ফেলায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।গত কয়েক বছরে সোনাই তীরের বিভিন্ন জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হলেও দূষণের মাত্রা কমেনি বলে পরিবেশবাদীরা জানান।

পরিবেশ আইনজীবী সমিতি বেলার কর্মী ওমাইয়া ফেরদৌস জানান, মানুষ বিভিন্নভাবে সোনাই নদটি ধ্বংস করে দিয়েছে। নদটি বিষাক্ত পদার্থে ভরাট হয়ে ছোট খালে পরিণত হয়েছে। একটি নদীর পানির গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে প্রাণপ্রকৃতির জন্য খুবই মঙ্গলজনক। সোনাই নদকে বাঁচাতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। নদী খনন করে পাড় বেধে ময়লা ফেলা বন্ধ করা হলে সোনাই নদ বাঁচানো যাবে।

মাধবপুর পৌরসভার সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, বাজারের ময়লা নদে না ফেলতে বাজার ব্যবসায়ী সহ নাগরিকদের নিষেধ করা হয়েছে। তবে নদী দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে পরিবশেবাদীরা অনেক আন্দোলন করলেও বিষয়টি নিয়ে নদীতীরের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে কোনো সচেতনতাই নাই। নদী দূষণমুক্ত রাখতে হলে নদীতীরের মানুষকে সর্বাগ্রে সচেতন করাই জরুরি।

মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী জাহিদ বিন কাশেম বলেন, সোনাই নদীর একটি ঐতিহ্যবাহী নদী। কিন্তু মানুষ ধীওে ধীরে নদীটি ধ্বংশ করছে। নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারের সংশিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে।