বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০৫ অপরাহ্ন

ঈদে ১০ লাখ পর্যটক যাচ্ছেন কক্সবাজারে, ৬০ শতাংশ হোটেল বুকিং

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে অবস্থিত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে যাচ্ছেন অন্তত ১০ লাখ পর্যটক। এরমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট, কটেজের ৬০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের আগেই অবশিষ্ট কক্ষগুলোও ভাড়া হয়ে যাবে বলে মনে করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

তারা জানিয়েছে, এবার কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে বিশেষ কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। তবে অতিরিক্ত চাপের অজুহাতে পর্যটকের কাছ থেকে যেন অতিরিক্ত কক্ষভাড়া আদায় না করা হয়, সে বিষয়ে তৎপর থাকবেন জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত ও হোটেলমালিকদের পৃথক পর্যবেক্ষক দল।হোটেল মালিকদের ধারণা, ঈদের পরদিন থেকে টানা সাত দিন পর্যটকের সমাগম থাকবে এই সৈকতে। এ সময় হোটেল, রেস্তোরাঁসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট নানা খাতে ব্যবসা হবে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার।

কক্সবাজার শহরের সাতটি পৃথক হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের সংগঠনের সমন্বিত মোর্চা ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ ১৬ দিনে সৈকতে সমাগম হয়েছিল অন্তত ১৫ লাখ পর্যটকের। এরপর উল্লেখযোগ্য হারে পর্যটকের তেমন সমাগম ঘটেনি। এবারের ঈদের ৭ দিনের ছুটিতে ১৫ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম আশা করা হয়েছিল। কিন্তু সেন্টমার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত বন্ধ থাকায় ১০ লাখ পর্যটক আসতে পারেন।

পর্যটকদের স্বাগত জানাতে এরমধ্যে হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সাজসজ্জা ও সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। সৈকতের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউসে দৈনিক ১ লাখ ৬০ হাজার পর্যটকের রাতযাপনের ব্যবস্থা আছে। চাপ বেড়ে গেলে হোটেলের কক্ষে পর্যটকদের গাদাগাদি করে রাখতে হয়।

৬০ শতাংশ হোটেল কক্ষ অগ্রিম বুকিং

গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা। সুগন্ধা সৈকতের পাঁচ তারকা হোটেল সি গাল। কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। হোটেলের অধিকাংশ কক্ষ ফাঁকা। হোটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী বলেন, ঈদের পরদিন থেকে শতভাগ কক্ষে অতিথি উঠবেন। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এই ঈদে কক্ষভাড়ার ওপর ছাড় নেই। হোটেলে ১৭৯টি কক্ষে প্রায় ৪০০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে।

বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের জায়গা টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পেঁচারদ্বীপ এলাকার পরিবেশবান্ধব পর্যটনপল্লী ‘মারমেইড বিচ রিসোর্ট’। এখানে ৫১টি কটেজে থাকার ব্যবস্থা আছে ১২০ জনের। রিসোর্টের ব্যবস্থাপক ইয়াছির আরাফাত রিসাত বলেন, ঈদের পরদিন থেকে শতভাগ কক্ষ অতিথিতে ভরপুর থাকবে। এরমধ্যে ৮০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। কক্ষ ভাড়ার ওপরও থাকছে না কোনো ছাড়। তবে ঈদের পর আগামী ৭ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বুকিং দেওয়া হলে কক্ষভাড়ায় ৪০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে।

সৈকতের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস, সায়মন বিচ রিসোর্ট, হোটেল লংবিচ, হোটেল কক্স টুডে, হোটেল কল্লোল, হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালসহ আশপাশের ৫০টির বেশি হোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ ও রিসোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরমধ্যে ৬০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।

কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে প্রতিটি হোটেলে কক্ষভাড়ার তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। অতিরিক্ত কক্ষভাড়া আদায় করা হলে ট্যুরিস্ট পুলিশের সেবাকেন্দ্রে অভিযোগ করা যাবে। পর্যটকেরা গাড়ি থেকে নামলেই কিছু দালাল লোভনীয় অফার দিয়ে পর্যটকদের চিহ্নিত কিছু রিসোর্ট ও গেস্টহাউসে নিয়ে প্রতারণা কিংবা অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়। কিছু ইজিবাইক ও টমটমচালক যাত্রীদের গাড়িতে তুলে প্রতারণা করে। এদের ব্যাপারে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে হবে। পর্যটকেরা নিজেরা হোটেল রিসোর্টে গিয়ে কক্ষভাড়া নিলে তাদের সুবিধা হবে।

সি-সেফ লাইফগার্ডের ব্যবস্থাপনা তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, পুরো সৈকতে এখন হাজারখানেক পর্যটক আছেন। ঈদের পরদিন থেকে হাঁটার জায়গা হবে না। একদিনে সমাগম ঘটবে অন্তত তিন লাখ পর্যটকের।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পর্যটক না থাকায় পুরো রমজান মাসে সৈকত দখল করে তৈরি পাঁচ শতাধিক দোকানপাট, ঘোড়া, বিচবাইক, চেয়ার-ছাতা (কিটকট), জেডস্কির ব্যবসা, ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রী, চা-কফি বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দোকান, ভাজা মাছ বিক্রির দোকানপাট অচল পড়ে আছে। ঈদের পরদিন থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে উঠবে। তখন জমজমাট হবে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে ইনানীর পাথুরে সৈকত, টেকনাফ সৈকত, রামুর বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরসহ দর্শনীয় ও বিনোদনের কেন্দ্রগুলো।

পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুহিউদ্দিন বলেন, ভ্রমণে আসা পর্যটকের নিরাপত্তায় প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্ধ্যার পর পর্যটকেরা যেন অন্ধকারে ডুবে থাকা সৈকতের তীরের ঝাউবাগানের ভেতরে একাকী কিংবা তিন চাকার যান নিয়ে একাকী মেরিন ড্রাইভ ভ্রমণে না যান, এ ব্যাপারে লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। এসব এলাকায় কৌশলে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারানোর সুযোগ থাকে বলে জানান তিনি।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.
Developed by DesigUs