মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:০৫ অপরাহ্ন

উজান-ভাটি দু’দিক থেকেই হবিগঞ্জে ঢুকছে পানি দূর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃসিলেট ও সুনাগঞ্জের বন্যার পানি কালনি-কুশিয়ারা দিয়ে নামছে হবিগঞ্জে। অন্যদিকে মেঘনা নদীর পানি বেড়ে বইছে উজানে। এতে উজান-ভাটি দু’দিক থেকেই হবিগঞ্জে ঢুকছে পানি। সেই সাথে তিব্র হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। পানিবন্দি অন্তত আড়াই শ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ। এখনও পানিবন্দি সব জায়গায় পৌঁছায়নি খাদ্য সহায়তা। অনাহারে দিন কাটছে বানবাসীদের। যদিও জেলা প্রশাসন বলছে, বানবাসীদের উদ্ধার তৎপরাতা চলছে। সেই সাথে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে হচ্ছে।

গত তিনদিন ধরে বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়তে থাকে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। কালনি-কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। শনিবার কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ডুবে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। জেলার

আজমিরীগঞ্জ ও নবীগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু নিচুঁ এলাকা প্লাবিত হয়। রোববার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন অংশে দেখা দেয় ভাঙন। প্লাবিত হয় নতুন নতুন এলাকা। বিকেল থেকে সিলেট ও সুনাগঞ্জের পানি কুশিয়ারা দিয়ে নামতে থাকলে আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ, বানিয়াচং ও লাখাই উপজেলার ২২টি ইউনিয়নরে অন্তত আড়াই শ গ্রাম পানিবন্দি হয়। অধিকাংশ এলাকাতেই বন্যা দূর্গতরা এখনও বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তাদের কাছে পৌঁছায়নি খাদ্য সহায়তা। অনাহারে দিন কাটছে বন্যাকবলিত অনেক মানুষদের।

সোমবার সকাল থেকে দু’দিক থেকে হবিগঞ্জে ঢুকছে বন্যা। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার পানি কুশিয়ারা নদী দিয়ে হবিগঞ্জে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ও পৌর এলাকা দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। অন্যদিকে, মেঘনা নদীর পানি উজান বয়ে আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেও এবং লাখাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে- খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ও শহরের মাছুলিয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। তাই শহরবাসীকে সতর্ক থাকার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া কালনি-কুশিয়ারার পানি আজমিরীগঞ্জ অংশে বিপৎসীমার ১৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরক্তি) মিনহাজ আহমেদ শোভন জানান, ‘পানি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বৃষ্টি না হলেও রাত পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পাবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রতি ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি ১০ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে শহর রক্ষা বাঁধ ঝুকিতে রয়েছে। আমরা সেটি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি এবং বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। তবে পানি বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাঁধ উপচে শহরে পানি প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।’

জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে- বন্যা দূর্গতদের জন্য জেলায় ৯৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৭ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বন্যার্তদের মধ্যে শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। অনেকে গবাদি পশু রেখে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।’

এদিকে, গতকাল বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে নবীগঞ্জে যান জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। এসময় তিনি নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করা বন্যা দুর্গতদের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরিদর্শনকালে তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিন্টু চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ।নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.