রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:১১ অপরাহ্ন

কমলগঞ্জের ২২টি চা বাগানে পুরোদমে কাজ শুরু

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি,মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ২২টি চা বাগানে পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকেরা। সোমবার (২৯ আগস্ট) সকাল থেকেই উপজেলার পাত্রখোলা, মৃর্ত্তিঙ্গা, শমশেরনগর, কানিহাটি, দেওছড়া, আলীনগর, ফুলবাড়ি, মাধবপুরসহ উপজেলার বাগানগুলোতে কাজে যোগ দিয়ে পাতা উত্তোলন শুরু করেন তারা। এতে আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে চা বাগানগুলো। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১৭০ টাকা মজুরিতে চা বাগান সমুহে শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ শুরু করেছেন। “দু’সপ্তাহ ধরে অনেক চা শ্রমিকের ঘরে খাবার নেই; কষ্ট বুকে চেপে কাজে যোগ দিয়েছেন চা শ্রমিকরা।

দেওছড়া চা বাগানের শ্রমিক ময়না রবিদাস ও নারীনেত্রী লক্ষীনারায়ণ সিং বলেন, ১৬ দিন পরে বাগানে ফিরে খুব ভালো লাগছে। তবে পাতার অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। যে পাতা গুলো আড়াই কুড়ি হলে তোলা হয় সেই পাতায় এখন ২০ থেকে ২২ কুড়ি হয়েছে। এখন যেগুলো বয়স বেশি হয়েছে ওই পাতাগুলো ফেলে দিতে হবে। এই চা পাতায় আমাদের ভালোবাসা আর আবেগ। বাংলাদেশে চা শিল্প টিকিয়ে রাখাটা আমাদের জরুরি। যেহেতু এখন চায়ের ভরা মৌসুম আমরা একটু কষ্ট হলেও দ্রুত পাতা উত্তোলনের চেষ্টা করবো। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, তিনি এমন উদ্যোগ না নিলে আমাদের মজুরির বিষয়টি সমাধান হতো না।

কানিহাটি চা বাগানের শ্রমিক নেতা ও মাসিক চা মজদুর সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, জেলার অধিকাংশ চা বাগানে অর্ধাহারে অনাহারে কাজে যোগ দিয়েছে চা শ্রমিকরা। তিনি প্রতিটি বাগানের বাগান পঞ্চায়েত কমিটিকে অনুরোধ করে বলেন, বাগান ব্যবস্থাপক বরাবরে আবেদন করে দ্বার হিসেবে ১ হাজার টাকা করে প্রতিটি চা শ্রমিককে দেওয়ার জন্য এবং সাপ্তাহিক তলব থেকে ১০০ টাকা করে কর্তন করে ঋণ পরিশোধ করে নিতে অথবা বকেয়া টাকা থেকে ১ হাজার টাকা দ্বার নিতে।

পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিক নেতা দুলাল ছত্রী বলেন- টানা ১৬ দিন পর বাগানে ফিরে যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছি। এর আগে একটানা এতদিন বাগানের বাইরে ছিলাম না। এতদিন কাজ করতে না পেরে নিজে নিজে খুব কষ্ট পেয়েছি কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারিনি। এখন যাতে সব কিছু আগের মতো ফিরেয়ে আনা যায় সেই চেষ্টা করছি।

শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানের শ্রমিক জমিলা খাতুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কারণে আমরা আবার কাজে ফিরতে পেরেছি। আমাদের মা আবার আমাদের কাজে ফেরার ব্যবস্থা করেছেন। ১৭০ টাকায় আমরা এখন মোটামুটি ভালো করে চলতে পারবো।

ফুলবাড়ি চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি মনোরঞ্জন পাল বলেন, এতদিন পর ফ্যাক্টরিতে ফিরে দেখি সব কিছু এলোমেলো৷ মেশিনে ধুলোময়লা পরেছে। চা পাতাগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এগুলো দেখে নিজের কাছে খুব খারাপ লেগেছে। সকালে এসেই আগে সবকিছু পরিষ্কার করেছি। এখন কাজ শুরু করবো। একটানা কাজ করবো।

প্রসঙ্গত, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানের শ্রমিকসহ দেশের ১৬৭ চা বাগানের শ্রমিকরা। দিনে দু’ঘণ্টা করে টানা চারদিন পালন করা হয় কর্মবিরতি। এরপর ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরোদমে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন চা শ্রমিকরা। পরে ১৯ আগস্ট রাতে মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার বিষয়ে একটি চুক্তি হলেও সেটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যান শ্রমিকরা। কয়েক দফা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে থাকা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করতে থাকেন। অবশেষে তাদের মজুরি ১৭০ টাকা করা হলে কাজে ফেরেন তারা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালী কমিটির সভাপতি ধনা বাউরী ও সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকা বলেন, রোববার থেকে ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ শুরু হয়েছে। তবে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেক বাগানে কাজ হয়নি। সোমবার থেকে তারা সেসব সুবিধা পাবেন। তাছাড়া চুক্তি স্বাক্ষরের দিনক্ষণ এখনো জানা যায়নি। বিগত চুক্তি শেষ হওয়ার পর থেকে ১৭০ টাকা এরিয়ার হিসাবে শ্রমিকরা যে টাকা পাওয়ার কথা সেটি চুক্তি স্বাক্ষরের পর সিদ্ধান্ত আসবে বলে তারা জানান। অন্যদিকে চা শ্রমিকদের ঘরে খাবার না থাকার বিষয়ে দ্রুত রেশন ও খাবার প্রদানের জন্য ম্যানেজমেন্টের সাথে বিষয়টি আলোচনাধিন রয়েছে বলে জানালেন।

এ ব্যাপারে মালিক পক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের মনু- ধলই ভ্যালী সার্কেলের চেয়ারম্যান ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির ডিজিএম শামসুল ইসলাম জানান, সোমবার থেকে চা শ্রমিকরা কাজ শুরু করেছেন। বুধবার তাদের মজুরি ও রেশন প্রদান করা হবে। তাছাড়া অনেকে পূর্বের মজুরিও নেননি। সেটিও দেয়া হবে। চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে এখনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি। চুক্তি স্বাক্ষরের পর সব ধরণের সুযোগ সুবিধার বিষয়টি পরিষ্কার হবে।কমলগঞ্জ প্রতিনিধি,

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.
Developed by DesigUs