ঢাকা ০৯:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo হবিগঞ্জে ৭০টি ইটভাটা বন্ধের আশঙ্কা কর্মহীন হওয়ার শঙ্কায় ৪০ হাজার শ্রমিক Logo হবিগঞ্জে ভিপি নুরুল হক নুর আশাকরি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে Logo হবিগঞ্জের রশিদপুরে আরো ২৯ বিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা Logo শহীদ নূর হোসেন দিবস আজ Logo হবিগঞ্জ-১: রেজা কিবরিয়ার যোগদানে বিএনপিতে এখন ত্রিমুখী লড়াই Logo হবিগঞ্জের নতুন ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন Logo ড. ফরিদুর রহমান বদলি, নতুন ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন Logo মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ছুরিকাঘাত করে খুন : অভিযুক্ত আটক Logo ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত: শায়েস্তাগঞ্জে তরুণী গ্রেপ্তার Logo ৭ই নভেম্বর ও একজন দেশ প্রেমিক জিয়াউর রহমান

খোয়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম ও ফসলি জমি

বানিয়াচং প্রতিনিধিঃ

হবিগঞ্জে বানিয়াচং উপজেলার রাধানগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক ছুয়েব আলী। খোয়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে তার একমাত্র বসতভিটা। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, ‘এক মাস আগে খোয়াই নদীতে গোলা (জোয়ার) আসে। পানি নেমে যাওয়ার পর নদীতে ভাঙন দেখা দেয়।

এ সময় আমার ঘরবাড়ি সব ভেঙে পড়ে। এখন আমি বউ-বাচ্চা নিয়ে গ্রামের আরেকজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘অন্যের বাড়িতে কতদিন থাকা যায়? এখন কী করব, কোথায় যাব, কিছুই মাথায় ধরছে না। নতুন করে আরেকটা বাড়ি বান্ধার (বানানোর) তৌফিক (ক্ষমতা) আমার নাই।’

এই গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। আগ্রাসী খোয়াই কেড়ে নিয়েছে অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই। সহায় সম্বল হারিয়ে এসব পরিবার এখন দিশাহারা। মূলত কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে রাধানগর গ্রামে খোয়াই নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। তবে সময় যত যাচ্ছে ভাঙনের তীব্রতা যেন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভারতের আসাম রাজ্যের আঠারোমুড়া পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে খোয়াই নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্ত দিয়ে। পরে জেলার পাঁচটি উপজেলার ওপর দিয়ে ১৬৬ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় গিয়ে পড়েছে।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজানের ঢল নেমে এলেই ভয়ংকর রূপ ধারণ করে খোয়াই। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খোয়াই যেন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। সর্বশেষ গত আগস্টে উজানের ঢলে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭৭ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে যায়; যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আর মাত্র আধা মিটার পানি বাড়লেই তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল হবিগঞ্জ শহর। তবে পানি নেমে যাওয়ার পরপর নদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত নদীর অন্তত ৫০টির বেশি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে চুনারুঘাটের রাজার বাজার, শায়েস্তাগঞ্জের আলাপুর, সদর উপজেলার তেঘরিয়া এবং বানিয়াচং উপজেলার রাধানগরসহ ১০ থেকে ১২টি স্থানের ভাঙন খুবই তীব্র। এসব ভাঙনে বিলীন হয়েছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

এমনকি কিছু কিছু অংশে খোয়াই নদীর বাঁধেও তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাধানগর গ্রামের অসহায় এক নারী বলেন, ‘নদীভাঙনে আমার ঘরবাড়িসহ সবকিছু শেষ। এখন সামান্য একটু ভিটে আছে। এখানেই থাকছি। যে অবস্থা, এ বছরই এই জায়গাটাও ভেঙে পড়বে। তখন কই যামু, কি করমু সেটাই চিন্তা করি।’ তিনি বলেন, ‘নদীভাঙন ঠেকাতে সরকার যদি আমাদের এখানে কিছু কাজ করত, তাহলে আমরা অসহায় মানুষগুলো বাঁচতাম।’ তেঘরিয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের এলাকায় নদী ভাঙে। তবে এ বছর একটু বেশি ভাঙছে। কিছুদিন আগে যে গোলা আইছিল (এসেছিল), তখন আমরা সবাই খুব আতঙ্কে আছলাম (ছিলাম)।

আমাদের এখানে যদি নদীর বাঁধ পুরোপুরি ভাঙে তাহলে পুরো গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাবে। এ কারণে সবাই জিনিসপত্র নিয়ে বাঁধের ওপরে এসে রাত কাটিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিনিয়ত নদী শুধু ভাঙছেই। এভাবে ভাঙতে থাকলে একসময় সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। এখন ফসলি জমি ভাঙছে, রাস্তা ভাঙছে। কিছুদিন পর ঘরবাড়ি ভাঙবে। এখনই যদি সরকার ভাঙন ঠেকাতে কোনো কাজ না করে, তাহলে আমরা নদীপাড়ের মানুষ শেষ হয়ে যাব।’ এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে রাধানগর গ্রামে।

তবে এই গ্রামসহ যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে আমরা তার তালিকা তৈরি করছি। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আমরা বাজেট পাই। এ বছর বাজেট পেলে এসব এলাকায় কাজ করা সম্ভব হবে।’ সম্প্রতি খোয়াই নদী পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। এ সময় ফারুক ই আজম বলেন, ‘আমি স্থানীয় প্রশাসনকে বলেছি, তারা যেন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা আমাদের জানায়। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১১:৫৭:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
১১৭ বার পড়া হয়েছে

খোয়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম ও ফসলি জমি

আপডেট সময় ১১:৫৭:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

হবিগঞ্জে বানিয়াচং উপজেলার রাধানগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক ছুয়েব আলী। খোয়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে তার একমাত্র বসতভিটা। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, ‘এক মাস আগে খোয়াই নদীতে গোলা (জোয়ার) আসে। পানি নেমে যাওয়ার পর নদীতে ভাঙন দেখা দেয়।

এ সময় আমার ঘরবাড়ি সব ভেঙে পড়ে। এখন আমি বউ-বাচ্চা নিয়ে গ্রামের আরেকজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘অন্যের বাড়িতে কতদিন থাকা যায়? এখন কী করব, কোথায় যাব, কিছুই মাথায় ধরছে না। নতুন করে আরেকটা বাড়ি বান্ধার (বানানোর) তৌফিক (ক্ষমতা) আমার নাই।’

এই গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। আগ্রাসী খোয়াই কেড়ে নিয়েছে অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই। সহায় সম্বল হারিয়ে এসব পরিবার এখন দিশাহারা। মূলত কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে রাধানগর গ্রামে খোয়াই নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। তবে সময় যত যাচ্ছে ভাঙনের তীব্রতা যেন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভারতের আসাম রাজ্যের আঠারোমুড়া পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে খোয়াই নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্ত দিয়ে। পরে জেলার পাঁচটি উপজেলার ওপর দিয়ে ১৬৬ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় গিয়ে পড়েছে।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজানের ঢল নেমে এলেই ভয়ংকর রূপ ধারণ করে খোয়াই। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খোয়াই যেন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। সর্বশেষ গত আগস্টে উজানের ঢলে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭৭ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে যায়; যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আর মাত্র আধা মিটার পানি বাড়লেই তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল হবিগঞ্জ শহর। তবে পানি নেমে যাওয়ার পরপর নদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত নদীর অন্তত ৫০টির বেশি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে চুনারুঘাটের রাজার বাজার, শায়েস্তাগঞ্জের আলাপুর, সদর উপজেলার তেঘরিয়া এবং বানিয়াচং উপজেলার রাধানগরসহ ১০ থেকে ১২টি স্থানের ভাঙন খুবই তীব্র। এসব ভাঙনে বিলীন হয়েছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

এমনকি কিছু কিছু অংশে খোয়াই নদীর বাঁধেও তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাধানগর গ্রামের অসহায় এক নারী বলেন, ‘নদীভাঙনে আমার ঘরবাড়িসহ সবকিছু শেষ। এখন সামান্য একটু ভিটে আছে। এখানেই থাকছি। যে অবস্থা, এ বছরই এই জায়গাটাও ভেঙে পড়বে। তখন কই যামু, কি করমু সেটাই চিন্তা করি।’ তিনি বলেন, ‘নদীভাঙন ঠেকাতে সরকার যদি আমাদের এখানে কিছু কাজ করত, তাহলে আমরা অসহায় মানুষগুলো বাঁচতাম।’ তেঘরিয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের এলাকায় নদী ভাঙে। তবে এ বছর একটু বেশি ভাঙছে। কিছুদিন আগে যে গোলা আইছিল (এসেছিল), তখন আমরা সবাই খুব আতঙ্কে আছলাম (ছিলাম)।

আমাদের এখানে যদি নদীর বাঁধ পুরোপুরি ভাঙে তাহলে পুরো গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাবে। এ কারণে সবাই জিনিসপত্র নিয়ে বাঁধের ওপরে এসে রাত কাটিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিনিয়ত নদী শুধু ভাঙছেই। এভাবে ভাঙতে থাকলে একসময় সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। এখন ফসলি জমি ভাঙছে, রাস্তা ভাঙছে। কিছুদিন পর ঘরবাড়ি ভাঙবে। এখনই যদি সরকার ভাঙন ঠেকাতে কোনো কাজ না করে, তাহলে আমরা নদীপাড়ের মানুষ শেষ হয়ে যাব।’ এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে রাধানগর গ্রামে।

তবে এই গ্রামসহ যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে আমরা তার তালিকা তৈরি করছি। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আমরা বাজেট পাই। এ বছর বাজেট পেলে এসব এলাকায় কাজ করা সম্ভব হবে।’ সম্প্রতি খোয়াই নদী পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। এ সময় ফারুক ই আজম বলেন, ‘আমি স্থানীয় প্রশাসনকে বলেছি, তারা যেন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা আমাদের জানায়। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’