বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৬ অপরাহ্ন
জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চাড়ালকান্দি গ্রামের যুবক জসিম উদ্দিন (২৬) । ৬ বছর আগে ২০১৬ সালে হঠাৎ চলাফেরা অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে তাঁর । বিষ পান করে পাশের একটি গ্রামে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন জসিম উদ্দিন। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করা হয় জসিম উদ্দিনকে। চিকিৎসা শেষে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। গত দুই বছর ধরে শিকলে বন্দী তাঁর জীবন।
শিকলে বন্দী যুবক জসীম উদ্দীনের বাড়ি মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের চাড়ালকান্দি গ্রামে। সে মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, জসিম উদ্দিন পড়াশোনায় ছিলেন অদম্য মেধাবী, এইচএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় রেজাল্ট করেছেন ভালো। জসিম স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় ভালোবেসে ছিলেন এক মেয়েকে। সেই প্রেমের সম্পর্ক বেশি দিন পর্যন্ত গড়ায়নি। প্রেমের সম্পর্ক হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাঁর পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। ভুলে থাকার সহজ সমাধান খুঁজতে আসক্ত হয়ে পড়েন নেশায় । পারিপার্শ্বিক নানা মানসিক চাপের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনও চলে তার উপর। হঠাৎ বিষ পান করে পাশের একটি গ্রামে গিয়ে। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা করে বাড়ি ফিরিয়ে আনলে পুরোপুরিভাবে হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্য। তারপর থেকেই শিকলে বাঁধা পড়ে মেধাবী জসীম ।
জসীম উদ্দীনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি একটি ঘরে নোংরা একটি কাপড় গায়ে দিয়ে শুয়ে আছেন। দুই পাশে বেড়া দেয়া ঘরের অন্য দুইপাশে নেই কোন বেড়া। পায়ে শিকল লাগিয়ে একটি খুঁটির সাথে বাঁধা। কোন কথা বলছে না শুধু এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে সে। চারপাশে মশার উপদ্রব। কিন্তু সেখানে মশা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি এলে ভিজতে হয়। জসিমকে পুরনো কোন স্মৃতির কথা বললে লজ্জায় মুখ ডেকে ফেলে।
জসিম উদ্দিনের বাবা নিজাম উদ্দিন তিন বছর আগে মারা গেছে। বাড়িতে বড় এক ভাই ও মা থাকেন। তাঁর ৪ ভাই বোনের মধ্যে জসিম উদ্দিন হলেন সবার ছোট।
এ বিষয়ে তাঁর মা জরিনা বেগম বলেন, ‘জসিম উদ্দিন ৬ বছর ধরে পাগলা হয়েছে, আমার ছেলে আর নেই, জীবিত থেকেও মরা, আগে কিছুটা ভালো ছিলো এখন আরো বেশি খারাপ হয়েছে। ছেলে বেলা থেকেই পড়াশোনায় ছাত্র খুব ভালো ছিলো। এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে এই সমস্যা তাঁর শুরু হয়। অসুস্থ হয়েও এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল ভালো রেজাল্ট করেছে। তাঁর চিকিৎসায় সংসারের সবকিছু শেষ করেছি। তাকে চিকিৎসা করার মতো আমাদের আর কিছুই নেই। বেসরকারি হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসা করেছি ১ লাখ টাকা লেগেছিল । কিছুটা ভালো হয়েছিল টাকার অভাবে সেখান থেকে আবার নিয়ে আসতে হয়েছে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা করলে ভালো হবে। কিন্তু অর্থের অভাবে আর চিকিৎসা পড়াতে পারছি না। মানুষজন দেখলেই মারধর গালাগালি ও বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করে। এই কারণে তাঁর পায়ে শিকল পরিয়ে সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে।’
জসিম উদ্দিনের চাচা আমজাদ আলী বলেন,”ছোটবেলা থেকে সে খুবই শান্ত ও মেধাবী ছিল। হঠাৎ করেই জসিম উদ্দিন পাগলা হলো। ৩ বছর আগে তাঁর বাবা টা ও মারা গেছে। অভাব অনটনের সংসারে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছেন না। চিকিৎসা পেলে সুস্থ হতে পারে সে।’
প্রতিবেশী মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও তিনি একটু ভালো ছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা বন্ধ হওয়ায় আরও বেশি অসুস্থতা হয়ে পড়ছে। উন্নত চিকিৎসা করা হয়। তাহলেই সে সুস্থ হয়ে উঠবে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ওই পরিবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সার্বিকভাবে সহায়তা করা হবে।’