ঢাকা ০৮:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মাধবপুর বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০ Logo হবিগঞ্জে ভুয়া চিকিৎসকের একমাসের কারাদণ্ড Logo স্বৈরাচার পতনে ১৬ বছর অপেক্ষা নয়, তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Logo বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। Logo হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা Logo নবীগঞ্জ মসজিদে মাইকিং করে পুলিশের ওপর হামলা, আসামি ছিনতাই আটক ১৩ Logo চুনারুঘাটে হত্যা মামলার আসমী আ. মান্নান আটক-তাবলীগ জামাতে গিয়ে অপহরণ মামলা সাজিয়েছেন Logo আজমিরীগঞ্জ কালনী নদীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে পাড়ে বসে চোখ মুছছেন সুনিতী Logo কুলাউড়ায় হত্যাকান্ডের শিকার আনজুমের বাড়িতে আমিরে জামায়াত Logo মাধবপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ফার্মাসিস্ট নেই ৩০ বছর ধরে

দলে বিশৃঙ্খলা রোধে স্মার্ট অ্যাকশনে তারেক রহমান

শায়েস্তাগঞ্জের বাণী ডেস্ক ,

শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটাতে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে রাজপথে সোচ্চার ছিল বিএনপি। সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আন্দোলন-সংগ্রামের নানা ধাপ পেরিয়ে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগসহ অনেকের আশঙ্কা ছিল, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

কেউ কেউ ধারণা করেছিল দখল, চাঁদাবাজি ও প্রতিশোধমূলক হিংস্রতায় মেতে উঠবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে হাইকমান্ডের কঠোর অবস্থানের কারণে ব্যাপক মাত্রায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তার পরও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নাম ভাঙিয়ে কেউ কেউ নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন।

তবে যার বা যাদের বিরুদ্ধেই বিশৃঙ্খলা বা দখলদারিত্বে জড়িত থাকার ন্যূনতম সম্পৃক্ততা পেয়েছেন, তাদের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরই মধ্যে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের আইনের হাতে সোপর্দ করার আহ্বান জানিয়ে অঘোষিতভাবে সারা দেশে দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন তারেক রহমান।

প্রতিদিনই বক্তব্যে নতুনত্ব ও একের পর এক বাস্তবমুখী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তিনি। আগামী সপ্তাহে ৩ জেলায় সমাবেশে বক্তব্য দেবেন তারেক রহমান। তার এসব পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সহায়ক বলে দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছিল। শেখ হাসিনার পতনের পর তাদের সেই ক্ষোভের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারত। কিন্তু তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা, দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং প্রতিহিংসার পরিবর্তে সহনশীল রাজনীতির কারণে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ধৈর্য ধারণ করেন।

একই সঙ্গে দেশজুড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। বিশেষ করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীশূন্য দেশে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারেক রহমানের সেই ভূমিকা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও তারেক রহমানের এসব পদক্ষেপকে স্মার্ট অ্যাকশন মনে করছেন। তার প্রতিটি অ্যাকশন যেন স্মার্ট ও সময়োপযোগী।

এক কথায় বিএনপিকে তিনি গণমানুষের দলে পরিণত করেছেন। তার বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য শেয়ার করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, তারেক রহমানের এসব পদক্ষেপ ও নেতৃত্বের দক্ষতা যেন তার পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানেরই প্রতিচ্ছবি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেন, ‘যারাই বিএনপির নাম ভাঙিয়ে নৈরাজ্য ও অসাংগঠনিক কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূলের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

৫ আগস্টের পর তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে একাধিকবার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। তার নির্দেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি বাতিল করে কর্মসূচির খরচের টাকা বন্যার্তদের জন্য দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ তিনি ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন এমনকি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছেন। তারেক রহমানের এসব ত্বরিত পদক্ষেপ ও নেতৃত্বগুণ তার স্মার্ট অ্যাকশন এবং তার পিতা শহীদ জিয়াউর রহমানেরই প্রতিচ্ছবি।’

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না মর্মে তারেক রহমানের দেওয়া বক্তব্যকে অসাধারণ, সময়োপযোগী, পরিপক্ব আখ্যা দিয়ে প্রশংসা করছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তার বক্তব্য আলোচিত হয়। চায়ের দোকান থেকে গণপরিবহনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে সাধারণ মানুষের আলোচনায় তারেক রহমানের বক্তব্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন সবাই।

তারেক রহমানের যত স্মার্ট অ্যাকশন: গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই তাৎক্ষণিক বিজয় বার্তায় তারেক রহমান দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে হাজারো মানুষকে গুম, খুন ও অপহরণ করেছেন।

হামলা চালিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছেন। শেখ হাসিনার অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ। এ কারণেই গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালানোর পর নির্যাতিত-নিপীড়িতদের কারও কারও আচরণে হয়তো ক্ষোভের মারাত্মক বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। আমি খবর পেয়েছি, দেশের কোথাও কোথাও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমার বক্তব্য স্পষ্ট, কাউকে সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করার প্রয়োজন নেই।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, বিশ্বাসী কিংবা অবিশ্বাসী, কেউ সংখ্যালঘু নয়। আমাদের সবার একটাই পরিচয়, আমরা বাংলাদেশি। সুতরাং ব্যক্তি হিসেবে কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ থাকলে প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নিন। কিন্তু আপনারা কেউ নিজ হাতে আইন তুলে নেবেন না। অনুগ্রহ করে কেউ প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না।’

এরপর গত ৭ আগস্ট ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়াল বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার রক্তঝরা বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের সম্পদ ও সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয় রক্ষার জন্য নেতাকর্মীসহ সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ১১ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরিনের পদ স্থগিত করা হয়। তার বিরুদ্ধে বরিশাল নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় বিরোধ রয়েছে, এমন একটি পুকুর ভরাট করার পাঁয়তারা চালানোর অভিযোগ ওঠে। সরকার পরিবর্তনের পর টানা চার রাত ট্রাক দিয়ে বালু এনে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে পুকুর দখল করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকার বাসিন্দারা। তবে বিলকিস জাহান সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত ২১ আগস্ট আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হলে ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের পদ স্থগিত করা হয়। বগুড়াসহ কয়েকটি জেলায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। কয়েকটি জেলায় নতুনভাবে কমিটি দেওয়া হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। গত ২৯ আগস্ট রংপুর বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু হয়। সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিভাগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আবারও শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের পরিকল্পনার কথা পুনরায় জানান।

গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি বাতিল করে বিএনপি। দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জন্য যেসব টাকা খরচ হতো, সেই টাকা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার বন্যাদুর্গতদের জন্য বরাদ্দ দেয় দলটি। এর পরই কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ত্রাণ কমিটি গঠন ও ত্রাণ সংগ্রহ কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় কয়েক কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

এ ছাড়া দখল-চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফখরুদ্দিন বাচ্চুকে দল থেকে বহিষ্কার করাসহ ত্রাণ ফান্ডে দেওয়া ১০ লাখ টাকা ফেরত দেয় বিএনপি। পরে তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে মামলাও করা হয়। অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকায় ঢাকার কলাবাগান থানা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদককে বহিষ্কার ও তার বিরুদ্ধে দলীয় মামলা করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন স্থানে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বিএনপি।

গত ৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়া, ১১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির সমাবেশ এবং গত মঙ্গলবার ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। তিনি সেদিন জোর দিয়ে বলেছেন, ‘অনেক রক্তের বিনিময়ে, লাখো কোটি জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফসল এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের কোনো কোনো কার্যক্রম সবার কাছে হয়তো সাফল্য হিসেবে বিবেচিত না-ও হতে পারে। কিন্তু এই সরকারের ব্যর্থতা হবে আমাদের সবার ব্যর্থতা। বাংলাদেশের পক্ষের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। এটি আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে। সুতরাং এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।’

এ ছাড়া এই সময়ে তারেক রহমানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় করা, চাঁদাবাজি ও অপকর্মে জড়িত থাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীকে শোকজ-বহিষ্কার ও মামলা দায়ের এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং অসংখ্য আহতকে চিকিৎসাসেবা প্রদান।

জানা গেছে, তারেক রহমানের নির্দেশনায় বিএনপির পেশাজীবী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ) ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সেল এবং দলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে সহস্রাধিক মানুষকে সহযোগিতা করা হয়েছে।

বিএনপির ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘মাস খানেক ধরে তারেক রহমানের প্রতিটি অ্যাকশন স্মার্ট ও সময়োপযোগী মনে হয়েছে। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর ও গতিশীল করতে এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে তার নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার তারেক রহমানের বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে দেশবাসী তার রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনার কথা জানা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আমার দেখা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে তারেক রহমানের চিন্তা, চেতনা বা ভাবনার ধারে কাছেও কেউ নেই। তিনি যে ইতিবাচক ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতির যাত্রা শুরু করেছেন, তার সুফল বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণ পাবে।’

বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও বর্তমানে নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি বলেন, ‘এখন জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। আওয়ামী প্রেতাত্মারা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নাম ভাঙিয়ে দখল-চাঁদাবাজিসহ নৈরাজ্য করছে। তবে এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সবার উচিত সাধ্যমতো পাশে দাঁড়ানো।’

এই সপ্তাহে ৩ জেলায় সমাবেশ: এদিকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশের মাধ্যমে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারকে সহায়তা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন তারেক রহমান। তারই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল সিরাজগঞ্জে, ২৩ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির উদ্যোগে সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন তারেক রহমান।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের ও দেশের কল্যাণে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সমাবেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর হবে, ইতোমধ্যে সমাজে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সাধারণ নাগরিক হাটে-মাঠে-ময়দানে পরস্পরের সঙ্গে ইতিবাচক প্রশংসা করছেন। আগামীকাল শনিবার সিরাজগঞ্জ, সোমবার কিশোরগঞ্জ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ জেলায় গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। যেখানে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন।’

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম গতকাল বলেন, ‘বিগত ১৭ বছরে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী হতাহত হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে সর্বশেষ জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে শহীদ হওয়া ২০টি পরিবারকে সম্মানিত করার পাশাপাশি অঙ্গহানি হওয়া নেতাদেরও সম্মাননা দেওয়া হবে। কিশোরগঞ্জের পুরোনো স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় সমাবেশের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদ জানান, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ঝিনাইদহের সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিব হত্যার বিচার দাবিতে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় ঝিনাইদহ শহরের ওয়াজির আলী হাইস্কুল মাঠে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

এতে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সমাবেশস্থল লোকে লোকারণ্য হবে। সেখানে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে সহযোগিতা তুলে দেওয়া হবে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারেক রহমানের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় রয়েছে লাখো মানুষ।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৭:৫৫:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৭২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

দলে বিশৃঙ্খলা রোধে স্মার্ট অ্যাকশনে তারেক রহমান

আপডেট সময় ০৭:৫৫:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটাতে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে রাজপথে সোচ্চার ছিল বিএনপি। সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আন্দোলন-সংগ্রামের নানা ধাপ পেরিয়ে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগসহ অনেকের আশঙ্কা ছিল, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

কেউ কেউ ধারণা করেছিল দখল, চাঁদাবাজি ও প্রতিশোধমূলক হিংস্রতায় মেতে উঠবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে হাইকমান্ডের কঠোর অবস্থানের কারণে ব্যাপক মাত্রায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তার পরও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নাম ভাঙিয়ে কেউ কেউ নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন।

তবে যার বা যাদের বিরুদ্ধেই বিশৃঙ্খলা বা দখলদারিত্বে জড়িত থাকার ন্যূনতম সম্পৃক্ততা পেয়েছেন, তাদের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরই মধ্যে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের আইনের হাতে সোপর্দ করার আহ্বান জানিয়ে অঘোষিতভাবে সারা দেশে দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন তারেক রহমান।

প্রতিদিনই বক্তব্যে নতুনত্ব ও একের পর এক বাস্তবমুখী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তিনি। আগামী সপ্তাহে ৩ জেলায় সমাবেশে বক্তব্য দেবেন তারেক রহমান। তার এসব পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সহায়ক বলে দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছিল। শেখ হাসিনার পতনের পর তাদের সেই ক্ষোভের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারত। কিন্তু তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা, দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং প্রতিহিংসার পরিবর্তে সহনশীল রাজনীতির কারণে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ধৈর্য ধারণ করেন।

একই সঙ্গে দেশজুড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। বিশেষ করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীশূন্য দেশে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারেক রহমানের সেই ভূমিকা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও তারেক রহমানের এসব পদক্ষেপকে স্মার্ট অ্যাকশন মনে করছেন। তার প্রতিটি অ্যাকশন যেন স্মার্ট ও সময়োপযোগী।

এক কথায় বিএনপিকে তিনি গণমানুষের দলে পরিণত করেছেন। তার বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য শেয়ার করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, তারেক রহমানের এসব পদক্ষেপ ও নেতৃত্বের দক্ষতা যেন তার পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানেরই প্রতিচ্ছবি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেন, ‘যারাই বিএনপির নাম ভাঙিয়ে নৈরাজ্য ও অসাংগঠনিক কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূলের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

৫ আগস্টের পর তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে একাধিকবার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। তার নির্দেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি বাতিল করে কর্মসূচির খরচের টাকা বন্যার্তদের জন্য দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ তিনি ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন এমনকি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছেন। তারেক রহমানের এসব ত্বরিত পদক্ষেপ ও নেতৃত্বগুণ তার স্মার্ট অ্যাকশন এবং তার পিতা শহীদ জিয়াউর রহমানেরই প্রতিচ্ছবি।’

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না মর্মে তারেক রহমানের দেওয়া বক্তব্যকে অসাধারণ, সময়োপযোগী, পরিপক্ব আখ্যা দিয়ে প্রশংসা করছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তার বক্তব্য আলোচিত হয়। চায়ের দোকান থেকে গণপরিবহনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে সাধারণ মানুষের আলোচনায় তারেক রহমানের বক্তব্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন সবাই।

তারেক রহমানের যত স্মার্ট অ্যাকশন: গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই তাৎক্ষণিক বিজয় বার্তায় তারেক রহমান দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে হাজারো মানুষকে গুম, খুন ও অপহরণ করেছেন।

হামলা চালিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছেন। শেখ হাসিনার অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ। এ কারণেই গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালানোর পর নির্যাতিত-নিপীড়িতদের কারও কারও আচরণে হয়তো ক্ষোভের মারাত্মক বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। আমি খবর পেয়েছি, দেশের কোথাও কোথাও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমার বক্তব্য স্পষ্ট, কাউকে সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করার প্রয়োজন নেই।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, বিশ্বাসী কিংবা অবিশ্বাসী, কেউ সংখ্যালঘু নয়। আমাদের সবার একটাই পরিচয়, আমরা বাংলাদেশি। সুতরাং ব্যক্তি হিসেবে কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ থাকলে প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নিন। কিন্তু আপনারা কেউ নিজ হাতে আইন তুলে নেবেন না। অনুগ্রহ করে কেউ প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না।’

এরপর গত ৭ আগস্ট ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়াল বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার রক্তঝরা বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের সম্পদ ও সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয় রক্ষার জন্য নেতাকর্মীসহ সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ১১ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরিনের পদ স্থগিত করা হয়। তার বিরুদ্ধে বরিশাল নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় বিরোধ রয়েছে, এমন একটি পুকুর ভরাট করার পাঁয়তারা চালানোর অভিযোগ ওঠে। সরকার পরিবর্তনের পর টানা চার রাত ট্রাক দিয়ে বালু এনে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে পুকুর দখল করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকার বাসিন্দারা। তবে বিলকিস জাহান সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত ২১ আগস্ট আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হলে ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের পদ স্থগিত করা হয়। বগুড়াসহ কয়েকটি জেলায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। কয়েকটি জেলায় নতুনভাবে কমিটি দেওয়া হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। গত ২৯ আগস্ট রংপুর বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু হয়। সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিভাগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আবারও শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের পরিকল্পনার কথা পুনরায় জানান।

গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি বাতিল করে বিএনপি। দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জন্য যেসব টাকা খরচ হতো, সেই টাকা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার বন্যাদুর্গতদের জন্য বরাদ্দ দেয় দলটি। এর পরই কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ত্রাণ কমিটি গঠন ও ত্রাণ সংগ্রহ কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় কয়েক কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

এ ছাড়া দখল-চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফখরুদ্দিন বাচ্চুকে দল থেকে বহিষ্কার করাসহ ত্রাণ ফান্ডে দেওয়া ১০ লাখ টাকা ফেরত দেয় বিএনপি। পরে তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে মামলাও করা হয়। অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকায় ঢাকার কলাবাগান থানা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদককে বহিষ্কার ও তার বিরুদ্ধে দলীয় মামলা করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন স্থানে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বিএনপি।

গত ৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়া, ১১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির সমাবেশ এবং গত মঙ্গলবার ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। তিনি সেদিন জোর দিয়ে বলেছেন, ‘অনেক রক্তের বিনিময়ে, লাখো কোটি জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফসল এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের কোনো কোনো কার্যক্রম সবার কাছে হয়তো সাফল্য হিসেবে বিবেচিত না-ও হতে পারে। কিন্তু এই সরকারের ব্যর্থতা হবে আমাদের সবার ব্যর্থতা। বাংলাদেশের পক্ষের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। এটি আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে। সুতরাং এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।’

এ ছাড়া এই সময়ে তারেক রহমানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় করা, চাঁদাবাজি ও অপকর্মে জড়িত থাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীকে শোকজ-বহিষ্কার ও মামলা দায়ের এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং অসংখ্য আহতকে চিকিৎসাসেবা প্রদান।

জানা গেছে, তারেক রহমানের নির্দেশনায় বিএনপির পেশাজীবী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ) ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সেল এবং দলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে সহস্রাধিক মানুষকে সহযোগিতা করা হয়েছে।

বিএনপির ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘মাস খানেক ধরে তারেক রহমানের প্রতিটি অ্যাকশন স্মার্ট ও সময়োপযোগী মনে হয়েছে। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর ও গতিশীল করতে এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে তার নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার তারেক রহমানের বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে দেশবাসী তার রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনার কথা জানা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আমার দেখা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে তারেক রহমানের চিন্তা, চেতনা বা ভাবনার ধারে কাছেও কেউ নেই। তিনি যে ইতিবাচক ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতির যাত্রা শুরু করেছেন, তার সুফল বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণ পাবে।’

বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও বর্তমানে নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি বলেন, ‘এখন জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। আওয়ামী প্রেতাত্মারা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নাম ভাঙিয়ে দখল-চাঁদাবাজিসহ নৈরাজ্য করছে। তবে এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সবার উচিত সাধ্যমতো পাশে দাঁড়ানো।’

এই সপ্তাহে ৩ জেলায় সমাবেশ: এদিকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশের মাধ্যমে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারকে সহায়তা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন তারেক রহমান। তারই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল সিরাজগঞ্জে, ২৩ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির উদ্যোগে সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন তারেক রহমান।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের ও দেশের কল্যাণে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সমাবেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর হবে, ইতোমধ্যে সমাজে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সাধারণ নাগরিক হাটে-মাঠে-ময়দানে পরস্পরের সঙ্গে ইতিবাচক প্রশংসা করছেন। আগামীকাল শনিবার সিরাজগঞ্জ, সোমবার কিশোরগঞ্জ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ জেলায় গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। যেখানে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন।’

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম গতকাল বলেন, ‘বিগত ১৭ বছরে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী হতাহত হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে সর্বশেষ জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে শহীদ হওয়া ২০টি পরিবারকে সম্মানিত করার পাশাপাশি অঙ্গহানি হওয়া নেতাদেরও সম্মাননা দেওয়া হবে। কিশোরগঞ্জের পুরোনো স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় সমাবেশের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদ জানান, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ঝিনাইদহের সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিব হত্যার বিচার দাবিতে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় ঝিনাইদহ শহরের ওয়াজির আলী হাইস্কুল মাঠে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

এতে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সমাবেশস্থল লোকে লোকারণ্য হবে। সেখানে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে সহযোগিতা তুলে দেওয়া হবে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারেক রহমানের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় রয়েছে লাখো মানুষ।’