শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৪ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট ঢাকা শহরের আবাসিকে ঢাকা ওয়াসা প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম রাখছে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা ও বাণিজ্যিকে ৪২ টাকা। সমপরিমাণ পানি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৬ টাকা ২৫ পয়সা, ফিলিপাইনের ম্যানিলায় ১৮৯ টাকা ১৬ পয়সা ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ২৭৯ টাকা ৪৪ পয়সা। রাজধানী শহরে পানির দরে এমন তুলনা দেখিয়ে ২৫ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
সম্প্রতি ওয়াসা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। অথচ গত ১৭ মে ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা বোর্ড।
ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, ৫ শতাংশের বেশি দাম বাড়ানোর এখতিয়ার বোর্ডের নেই। এর বেশি কেবল সরকার বাড়াতে পারে। এমডি কেন ২৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, তা তিনি ভালো বলতে পারবেন।
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গে টেনে গত ৪ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তাকসিম এ খানের চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে অবিলম্বে আবাসিক-সামাজিক খাতে পানি ও পয়ঃঅভিকর প্রতি হাজার লিটার ১৯ এবং বাণিজ্যিক-শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তবে ঢাকা শহরে বসবাসকারী নিম্ন আয়ভুক্ত মানুষের জন্য বর্তমান মূল্য ১৫ টাকা ১৮ পয়সা বিদ্যমান থাকবে। ২০২০ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়ানো হয়েছিল, যা ফুয়েল কস্ট রিকভারির জন্য যথেষ্ট নয়।
চিঠিতে বিভিন্ন শহরের পানির দামের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে প্রতি ইউনিট পানির মূল্য ৩১ টাকা ৬৩ পয়সা, কাঠমান্ডুতে ২১ টাকা ৭৩ পয়সা, সিউলে ৮৬ টাকা ২৫ পয়সা, ম্যানিলায় ১০ হাজার লিটার পর্যন্ত প্রতি ইউনিট ১৮৯ টাকা ১৬ পয়সা ও পরবর্তী ১০ হাজার লিটার পর্যন্ত প্রতি ইউনিটের মূল্য ২১২ টাকা ২১ পয়সা, লন্ডনে ১৫ হাজার লিটার পর্যন্ত প্রতি ইউনিটের মূল্য ২৭৯ টাকা ৪৪ পয়সা ও পরবর্তীতে ২৭ হাজার ২৪০ লিটার পর্যন্ত প্রতি ইউনিটের মূল্য ৩৯৯ টাকা ৫২ পয়সা। এ রকম আরও কয়েকটি শহরের পানির দামের চিত্র দিয়ে দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন তাকসিম এ খান।
চিঠির বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকসিম এ খানের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ওয়াসার প্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা মোস্তফা তারেক সমকালকে বলেন, এখনও দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দাম বাড়ানো হলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেব। সেটি না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহক বর্তমান মূল্যেই পানি পাবেন।
ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, সর্বশেষ বোর্ডসভায় এমডি ২০ শতাংশ প্রস্তাব করেছিলেন। এখন তিনিই ২৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন। আমাদের মতামত ছিল, সেপ্টেম্বর থেকে ৫ এবং আগামী বছর জানুয়ারি থেকে আরও ৫ শতাংশ বাড়ানো। বোর্ডের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এমডি এমন প্রস্তাব দিলে এ বোর্ড থাকার কী দরকার?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, দিল্লি, লন্ডন, স্টকহোম, ম্যানিলা শহরের সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার পানির দামের তুলনা খুবই বেমানান। ওইসব শহরের বিদ্যুতের দাম, শ্রমিকের মজুরি বা সরকারি কর্মীদের বেতন ভিন্ন রকমের। ওইসব শহরে পানির দামের সমান স্যুয়ারেজ বিল নেওয়া হয় না।
তিনি স্বীকার করেন, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনার চেয়ে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ দুর্নীতি এবং বিভিন্ন প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার দাশেরকান্দি প্রকল্প থেকে আগামী ১০ বছরেও জনগণ উপকার পাবে না। এটির মতো আরও কয়েকটি প্রকল্প থেকে পানি না পেলেও দাতাদের ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে। এ জন্যই ওয়াসা বারবার পানির দাম বাড়াচ্ছে।