শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট উন্নয়ন দর্শনের ক্ষেত্রে আমরা প্রকৃতি ভিত্তিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছি। পানি সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্যে আমাদেরকে প্রকৃতি ভিত্তিক কৌশল খুঁজে বের করতে হবে’ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
আজ বিশ্ব পানি দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি যে কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বৃষ্টি ও বন্যার পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি জলাধার নির্মাণ এই দু’টি বিষয় মনে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি নির্দেশ দেন।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত নগরীর গ্রিন রোডের পানি ভবনের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদেরকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং ভূগর্ভে জলাধার নির্মাণের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকলকে খাল, বিল, হাওর ও বাওড়ের সাথে নদীর সংযোগবিন্দু সমূহ খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন তা না হলে নদীর নাব্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি এ সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বরোপ করেন।
শেখ হাসিনা নদী খননের সময় নাব্যতা সৃষ্টির পাশাপাশি অতিরিক্ত পানি কিংবা বন্যার পানি সংরক্ষণে বাফার জোন তৈরির ওপরও গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই পানি শীতকালে চাষাবাসে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, বন্যার সঙ্গে কিভাবে বাঁচতে হয়, সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয় সে সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। কারণ, বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ।
প্রধানমন্ত্রী সড়ক কিংবা বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প নেয়ার সময়ে গাছের চারা লাগানোরও নির্দেশ দেন কারণ এ পদক্ষেপ ভূমিধস থেকে রক্ষায় সহায়ক হবে।
তিনি সকলকে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোরও নির্দেশ দেন। কারণ, ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার ঘন ঘন ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। আর বাংলাদেশকে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে নদীর পানি বিশুদ্ধ করে জনগণের কাছে নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং সেচকাজে ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহারসহ নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে।
তবে তিনি গৃহস্থালী, নির্মাণ কিংবা সেচসহ সকল কাজে পানি ব্যবহারে কৃচ্ছতা সাধনের অনুরোধ জানান, কারণ, সরকারকে পানি বিশুদ্ধ করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশ কোন ভূমিকা না রাখলেও বাংলাদেশের মতো কিছু ছোট দ্বীপ ও দেশকে এর ব্যাপক খেসারত দিতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুতরাং দেশ রক্ষায় আমাদের নিজেদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সরকার ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ গ্রহণ করেছে যেখানে এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নিরাপদ ও উন্নত জীবন নিশ্চিত করার লক্ষে এর বাস্তবায়নও শুরু করেছেন।
এবারের বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘গ্রাউন্ডওয়াটার-মেকিং দি ইনভিজিবল ভিজিবল।’
বিশুদ্ধ পানির গুরুত্বের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত এবং বিশুদ্ধ পানি সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার সুপারিশের লক্ষে প্রতিবছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয়।
জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনের (ইউএনসিইডি) সুপারিশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ২২ মার্চ ওয়ার্ল্ড ডে ফর ওয়াটার ঘোষণা করা হয়, যা ১৯৯৩ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে।
শেখ হাসিনা নদীগুলো ড্রেজিং করে নাব্যতা বজায় রাখার পাশাপাশি অতিরিক্ত পানি বা বন্যার পানি সংরক্ষণের জন্য বাফার জোন তৈরির পরামর্শ দেন, যাতে করে ওই পানি শীতকালে চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের জানতে হবে কিভাবে বন্যার সঙ্গে বাঁচতে হয় এবং সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয় (যেহেতু বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ)।
প্রধানমন্ত্রী রাস্তা বা বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণের সময় গাছ লাগানোরও নির্দেশ দেন কারণ এগুলো ভূমিধস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
তিনি সকলকে ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা কমানোর নির্দেশ দেন কারণ বাংলাদেশকে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার ঘন ঘন ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে নদীর পানি বিশুদ্ধ করে সেচ কাজে ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহার করে জনগণকে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
তবে, তিনি দেশবাসীকে গৃহস্থালি, নির্মাণ বা সেচের মতো যেকোনো কাজে পানি ব্যবহারে সংযমী হওয়ার অনুরোধ করেন কারণ, পানি পরিশোধনে সরকারকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সৃষ্টিতে কোনো অবদান না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মতো কিছু ক্ষুদ্র দ্বীপ ও দেশকে এর প্রভাবের খেসারত বহন করতে হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, “সুতরাং, দেশকে বাঁচাতে আমাদের নিজেদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে। ”
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ায় ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’ এবং ‘ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি)’ প্রতিষ্ঠা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ফলোআপ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে জাতীয় পানি নীতি, ১৯৯৯, বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩ এবং নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের জন্য জাতীয় নীতি-১৯৯৮ প্রণয়ন করেছে।
অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বক্তব্য রাখেন এবং মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব কবীর বিন আনোয়ার স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব পানি দিবসের ওপর একটি অডিও-ভিডিও গান এবং বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি ডকুমেন্টরি প্রদর্শিত হয়।