ঢাকা ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর উপহারে পেলেন ঘর কিন্তু বাসিন্দাদের কোনো খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই

নিজস্ব সংবাদ :

অলি আহমদ মাহিন, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট, টানা দুই দিন বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় ঘরবাড়ি, নদীর পাড়ে বসবাস করে যতটুকু আতঙ্কে থাকার কথা তার চেয়ে বেশি আতঙ্কে থাকেন একটু বৃষ্টি হলেই। বলছিলাম মৌলভীবাজারের মাইজপাড়া এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার পাওয়া বাসিন্দাদের কথা। অনাহারে দিনযাপন করছেন তারা।

খাবার নেই, নেই বিশুদ্ধ পানি। পাকা ঘর করে দিলেও পানির তোড়ে ভেঙে গেছে অনেকের ঘর, ঝড়ে নিয়ে গেছে অনেক ঘরের টিন, ঘরের চাল পর্যন্ত ছুঁই ছুঁই পানি। পানিতে ঘরের সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। খোলা আকাশের নিচে তারা দিনযাপন করলেও খবর নিচ্ছে না কেউ। প্রতিবেদক কে এভাবেই দুঃখের কথা জানাচ্ছিলেন এখানকার বাসিন্দারা।

ইমন আহমদ নামে এক বাসিন্দা বলেন, আমরা খুব কষ্টে আছি। বিশুদ্ধ পানি নাই। খাবার নাই, থাকার জায়গা নাই। ঘরবাড়ি ভাঙা। আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখি থাকার জায়গা নেই। আরেকজনের ভাঙা-চাঙা ঘরে থাকিয়া কোনো রকম জীবন রক্ষা করতেছি। কী করব আমরা কিছু বুঝতেছি না।

আলি আকবর নামের আরেকজন বলেন, আমার ঘরের কম্বল ও থালা-বাসন কিছুই নাই। সবকিছুই পানিতে ভেসে গেছে। এখন কোথায় রান্না করব আর কী খাব। এখন পর্যন্ত পৌরসভা বা অন্য কারো পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য পাইনি।

মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন জায়গায় কমতে শুরু করছে বন্যার পানি। বাড়িঘর ডুবে চরম বিপদগ্রস্ত হয়েছেন মানুষজন। এই বিপদে গবাদিপশু নিয়ে কী করবেন সেই মাথাব্যথাও তাদের ভোগাচ্ছে।

মৌলভীবাজার জেলার ৭ উপজেলার ৪৭ ইউনিয়নের ৪৫০টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। মৌলভীবাজার থেকে শমসেরনগর যাতাযাতায়াতের যে প্রধান সড়কটি রয়েছে সেটিও বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়, ফলে ভোগান্তিতে পড়েন অত্র এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।

তিন দিন পানিবন্দি থাকার পর এখনো অনেকেই নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে পারেননি ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্রের মায়ায়। অনেকে ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন, এছাড়া জেলার দুইশত পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার ঘর বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, মৎস্য খামার, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও হাটবাজার। গরু, মহিষ, হাঁস, মুরগি, ছাগল-গরু, ভেড়া মরে ভেসে গেছে। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকলে অপ্রতুল। গো-খাদ্য নেই। গো-খাদ্য, মাছ ও মাছের পোনা সব ভেসে গেছে। ভেঙেছে সেনিটেশন ব্যবস্থা।

গত বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড.উর্মি বিনতে সালাম, এ সময় বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার মানুষের মাঝে এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, আলু, লবণ, মরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, মৌলভীবাজারে গত দুই দিন ধরে বৃষ্টি কম হয়েছে। এ ছাড়া উজানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জেলার নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোতে বালু ভর্তি বস্তা ও মাটি দিয়ে ঝুঁকিমুক্ত রাখার কাজ চলমান রয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা যায়, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে রয়েছে। পানিবন্দি এলাকার মানুষের সাহায্যে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যাদের বাড়িতে বেশি পানি কয়েক হাজার পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। শুকনো খাবার ও চাল দেওয়া হচ্ছে তাদের। এ ছাড়াও পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

আরও জানা যায়, বর্তমানে বিপৎসীমার ওপরে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১১:১৫:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪
৪৯ বার পড়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রীর উপহারে পেলেন ঘর কিন্তু বাসিন্দাদের কোনো খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই

আপডেট সময় ১১:১৫:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪

অলি আহমদ মাহিন, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট, টানা দুই দিন বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় ঘরবাড়ি, নদীর পাড়ে বসবাস করে যতটুকু আতঙ্কে থাকার কথা তার চেয়ে বেশি আতঙ্কে থাকেন একটু বৃষ্টি হলেই। বলছিলাম মৌলভীবাজারের মাইজপাড়া এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার পাওয়া বাসিন্দাদের কথা। অনাহারে দিনযাপন করছেন তারা।

খাবার নেই, নেই বিশুদ্ধ পানি। পাকা ঘর করে দিলেও পানির তোড়ে ভেঙে গেছে অনেকের ঘর, ঝড়ে নিয়ে গেছে অনেক ঘরের টিন, ঘরের চাল পর্যন্ত ছুঁই ছুঁই পানি। পানিতে ঘরের সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। খোলা আকাশের নিচে তারা দিনযাপন করলেও খবর নিচ্ছে না কেউ। প্রতিবেদক কে এভাবেই দুঃখের কথা জানাচ্ছিলেন এখানকার বাসিন্দারা।

ইমন আহমদ নামে এক বাসিন্দা বলেন, আমরা খুব কষ্টে আছি। বিশুদ্ধ পানি নাই। খাবার নাই, থাকার জায়গা নাই। ঘরবাড়ি ভাঙা। আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখি থাকার জায়গা নেই। আরেকজনের ভাঙা-চাঙা ঘরে থাকিয়া কোনো রকম জীবন রক্ষা করতেছি। কী করব আমরা কিছু বুঝতেছি না।

আলি আকবর নামের আরেকজন বলেন, আমার ঘরের কম্বল ও থালা-বাসন কিছুই নাই। সবকিছুই পানিতে ভেসে গেছে। এখন কোথায় রান্না করব আর কী খাব। এখন পর্যন্ত পৌরসভা বা অন্য কারো পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য পাইনি।

মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন জায়গায় কমতে শুরু করছে বন্যার পানি। বাড়িঘর ডুবে চরম বিপদগ্রস্ত হয়েছেন মানুষজন। এই বিপদে গবাদিপশু নিয়ে কী করবেন সেই মাথাব্যথাও তাদের ভোগাচ্ছে।

মৌলভীবাজার জেলার ৭ উপজেলার ৪৭ ইউনিয়নের ৪৫০টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। মৌলভীবাজার থেকে শমসেরনগর যাতাযাতায়াতের যে প্রধান সড়কটি রয়েছে সেটিও বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়, ফলে ভোগান্তিতে পড়েন অত্র এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।

তিন দিন পানিবন্দি থাকার পর এখনো অনেকেই নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে পারেননি ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্রের মায়ায়। অনেকে ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন, এছাড়া জেলার দুইশত পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার ঘর বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, মৎস্য খামার, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও হাটবাজার। গরু, মহিষ, হাঁস, মুরগি, ছাগল-গরু, ভেড়া মরে ভেসে গেছে। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকলে অপ্রতুল। গো-খাদ্য নেই। গো-খাদ্য, মাছ ও মাছের পোনা সব ভেসে গেছে। ভেঙেছে সেনিটেশন ব্যবস্থা।

গত বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড.উর্মি বিনতে সালাম, এ সময় বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার মানুষের মাঝে এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, আলু, লবণ, মরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, মৌলভীবাজারে গত দুই দিন ধরে বৃষ্টি কম হয়েছে। এ ছাড়া উজানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জেলার নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোতে বালু ভর্তি বস্তা ও মাটি দিয়ে ঝুঁকিমুক্ত রাখার কাজ চলমান রয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা যায়, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে রয়েছে। পানিবন্দি এলাকার মানুষের সাহায্যে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যাদের বাড়িতে বেশি পানি কয়েক হাজার পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। শুকনো খাবার ও চাল দেওয়া হচ্ছে তাদের। এ ছাড়াও পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

আরও জানা যায়, বর্তমানে বিপৎসীমার ওপরে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে।