বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের ১৩ উপজেলায় ৪০ হাজার ৯১টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩ পরিবার। বুধবার সিলেট জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির এ চিত্র ওঠে এসেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ হাজার ঘরবাড়ি মোরামতের লক্ষ্যে অর্থ বরাদ্দের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে তালিকা প্রেরণ করেছে জেলা প্রশাসন।
তবে বুধবার পর্যন্ত জেলা প্রশাসন বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির এ তথ্য জানালেও গ্রামাঞ্চলে এখনও শত শত ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, ওসমানীনগর ও ফেঞ্চুগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় এখনো লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। জেলার ১৩ উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনসহ ৪৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৮ হাজার ৩৬৫ জন মানুষ রয়েছেন। অনেকের ঘরবাড়ি থেকে পানি নামলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না। ফলে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার চেষ্ঠা অব্যাহত থাকলেও শঙ্কা কাটছে না বানভাসিদের। ফের থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটজুড়ে। এতে করে বিভিন্ন নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দুই নদীতে আগে থেকেই বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হবে। তবে এতে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানানো হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৮ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১০৯ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার পানি এখনো পুরো নামেনি। এখনো প্লাবিত জেলার বেশিরভাগ এলাকা। তবে গত কয়েকদিন ধরে পানি কমতে শুরু করে। তবে বুধবার এসে ফের বাড়ছে নদীর পানি। পানি আবার বাড়তে শুরু করায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সিলেটে।
এর আগে মঙ্গলবার রাতের ভারি বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পরে নগরের বেশিরভাগ এলাকা। উপশহর, তালতালা, তেররতণসহ, মির্জাজাঙ্গালসহ কিছু এলাকার ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পরে। এতে ফের দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের। পানি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে অনেকের। তবে বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় নগরের পানি কিছুটা কমেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার বেড়েছে। বেড়েছে লোভা নদীর পানিও।
পাউবো সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, সিলেটের পাশাপাশি উজানেও বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে নদনদীর পানি বাড়ছে।
এদিকে বন্যা দূর্গতদের মাঝে সরকারি বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বুধবার সিলেটের বালাগঞ্জে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান। অন্যদিকে সিলেটের গোয়াইনঘাটে বন্যা আক্রান্তদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন। এছাড়া বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিদের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বুধবার পর্যন্ত সিলেটের ১৩ উপজেলায় বন্যার্তদের মধ্যে ১৫৮৭ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৯ হাজার ৯১৮ বস্তা শুকনো খাবার ও নগদ ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে বলে জানায় জেলা প্রশাসন।