শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন

বেপরোয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা অপরাধীচক্র।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা অপরাধীচক্র। খুন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, অপহরণ, মাদক পাচার, সোনা চোরাচালান এসব অপকর্ম যেন তাদের নিত্য নৈমত্তিক রুটিনে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া ক্যাম্প এলাকা থেকে দিনরাত কক্সবাজার শহরসহ সারাদেশে কারণে অকারণে তারা অবাধে বিচরণ করছে বিনা বাধায়। অনেকে গুপ্তচরের ভূমিকায় দেশদ্রোহী তৎপরতা চালাচ্ছেন।

গত ২৫ ডিসেম্বর রাত ১টার দিকে উখিয়ার পালংখালীর ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দীন চৌধুরী আপত্তিকর গতিবিধি দেখে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ১০ রোহিঙ্গাকে টাইংখালী বাজার থেকে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন।

অপরাধী চক্র বেশকিছুদিন ধরে বিভিন্ন ক্যাম্পে অগ্নি সংযোগসহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা করছে। ক্যাম্পের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অপরাধী চক্র। তাদের কর্মকাণ্ডে ভীত স্থানীয় লোকজন ও সাধারণ রোহিঙ্গারা।

কুতুপালং বর্ধিত ক্যাম্পে হামলায় আহত রোহিঙ্গারা বলেন, ক্যাম্পে কিছু খারাপ রোহিঙ্গা নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছে। কিছু এনজিও সহায়তা করছে অপরাধীদের।

অস্বাভাবিক কিছু হত্যাকাণ্ড, অপহরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে জনমনে। বিশেষ করে মুহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ড এবং রোহিঙ্গা ৩ নেতাসহ ২৫টি হত্যাকাণ্ডের পর ঘনিভূত হয়েছে সন্দেহ। টেকনাফ ও উখিয়াসহ কক্সবাজারের থানাগুলোতে বেড়েই চলেছে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত অভিযোগ।

গত তিন বছরে ৩৯ জন রোহিঙ্গা অপরাধী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়া সত্ত্বেও অপরাধের ধরন একটুও কমেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গা সংক্রান্ত প্রতিটি অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। উখিয়া টেকনাফে শুধুমাত্র ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন তথা এপিবিএনের ৩টি আঞ্চলিক অফিসের তত্ত্বাবধানে ২০টি ইউনিট আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে।

সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , ক্যাম্পে ওত পেতে আছে মিয়ানমারের অনেক গুপ্তচর। হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নেই, যা তারা করে না।

গুপ্তচর আকতার আলম নামে একব্যক্তি সম্প্রতি ২৭ রোহিঙ্গা হিন্দুকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে মিয়ানমার। আকতার আলম রোহিঙ্গা জঙ্গিগোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য হিসেবে চিহ্নিত। তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তার মতো ক্যাম্প থেকে কলকাঠি নাড়ছে অনেক রোহিঙ্গা গুপ্তচর। অভিযোগের তীর ক্যাম্পে গড়ে উঠা একাধিক রাখাইন স্বর্ণকারবারীদের দিকেও।

এদিকে সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দেশি বিদেশি একাধিক এনজিওর সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক রক্ষা করে অস্ত্র ব্যবসা, সোনা চোরাচালান, মাদক পাচারের পাশাপাশি হুন্ডিসহ দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডেও জড়িত রয়েছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৃতীয় কোনো শক্তি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ। গোয়েন্দা তৎপরতার পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর পরামর্শ সচেতন মহলের।

উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দিন দিন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের চর্চা হচ্ছে।

কক্সবাজারের মানবাধিকার কর্মী সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো উচিত।

রোহিঙ্গা নেতা আসলাম জানান, মিয়ানমার থেকে পাঠানো প্রত্যাবাসন তালিকায় রয়েছে অনেক গুপ্তচর পরিবারের নাম। যাদের সঙ্গে মিয়ানমার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এছাড়া অপহরণ, অগ্নিকাণ্ড এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

রোহিঙ্গা শিবিরের দায়িত্বে নিয়োজিত এপিবিএন ১৬ এর পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পগুলোতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে। অপরাধ দমন ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.
Developed by DesigUs