মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০৭:৩২ অপরাহ্ন

ভালুকায় বাণিজ্যিকভাবে কুমির খামার, পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি ,দেশের প্রথম বাণিজ্যিক কুমির খামার ময়মনসিংহের ভালুকা অবস্থিত র‌্যাপটাইলস ফার্ম পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। নতুন আঙ্গিকে সাজানো এ কুমির খামারটি দেশি-বিদেশি পর্যটক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করবে এমনটাই ধারণা হাইকোর্টের নির্দেশনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালনা পর্ষদের।

আন্তর্জাতিক মানের এ খামারটিতে ২ হাজার ৫২৬টি ছোট-বড় ও বাচ্চা কুমির রয়েছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মসূচির পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন পিকনিক হল, সেমিনার রুম, ক্যান্টিন, রেস্টহাউজসহ নানা স্থাপনা।

খামারের পরিচালক ড. নাঈম আহমেদ বলেন, ‘২০২২ সালে কুমির খামারটি পরিচালনার জন্য হাইকোর্ট থেকে ৬ সদস্যের কমিটিকে দায়িত্ব দেয়ার সময় নানা অব্যবস্থাপনা, টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক সংকট ও খাদ্য সংকটে কুমির ফার্মটির অচলাবস্থা ছিল।

‘কুমিরগুলোর যথোপোযুক্ত পরিচর্যা না হওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছিল, কুমির মারা যাচ্ছিল। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ তড়িৎ পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় কুমিরের নানা রোগবালাই ও মৃত্যুরোধ সম্ভব হয়েছে।’

পর্ষদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হক জানান, নতুন মালিকানায় সংকট কাটিয়ে পুরোদমে শুরু হয় খামারের কাজ। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা বুঝে পেয়ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ব বাজারে কুমিরের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত চড়া দামে বিক্রি হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে এগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে খামারটিতে দুই হাজার ৫২৬টি ছোট-বড় ও বাচ্চা কুমির রয়েছে। খামারটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে এবং আয়ের উৎস বাড়াতে নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। খামারটি উন্মুক্ত করে দেয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করবে। এ থেকে ভালো টাকা উঠে আসবে।’

এর আগে ২০০৪ সালে মোস্তাক আহমেদ ১৫ একর জমিতে গড়ে তোলেন এই কুমিরের খামার। আর ৩৬ শতাংশ মালিকানা নিয়ে সঙ্গে ছিলেন মেজবাহুল হক। ২০১২ সালে খামারের শেয়ার ছেড়ে দিলে মালিকানায় চলে আসেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী পি কে হালদার। এরপর থেকে এ খামার দেখিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নেন বিপুল পরিমাণ ঋণ।

বাংলাদেশ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০০৪ সালের ৫ মে এ খামার প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। খামারের জন্য ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া থেকে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে আনা হয় ৭৫টি কুমির। এখানে কুমির প্রজনন ও লালন-পালন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। শুরুতে খামারের আয়তন ১৪ একর হলেও এখন তা গিয়ে ঠেকেছে ২১ একরে।

খামারটি প্রতিষ্ঠার শুরুতে ৩৬ শতাংশ শেয়ার ছিল মেজবাহুল হকের। আর ১৫ শতাংশ শেয়ার ছিল মুশতাক আহমেদের। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ প্রকল্পের ঋণ নেয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার ছিল তখন ৪৯ শতাংশ। কুমিরের খাবার, বাচ্চা প্রজনন ও পরিচর্যার কাজে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন পড়ায় কার্যত ভালুকার খামারটি সংকটে পড়ে। ২০১২ সালে খামারের শেয়ার ছাড়তে বাধ্য হন মূল উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ। মালিকানায় চলে আসেন প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার।

২০১৩ সালের দিকে খামারের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর রেপটাইলস ফার্মের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ বের করে নেন পিকে হালদার, যা এখন পর্যন্ত শোধ হয়নি। আর্থিক খাতের আলোচিত এই ঋণখেলাপি এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব সোমেরও হদিস নেই। সব মিলিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল খামারটি।

আদালতের নির্দেশে গত বছরের মার্চে খামার পরিচালনায় গঠন হয় ছয় সদস্যের পর্ষদ। এতে পরিচালকের দায়িত্ব পান ড. নাঈম আহম্মেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হক।

এ ছাড়া পরিচালক পদে দায়িত্বরতরা হলেন- রেজাউল সিকদার, ড. মো. রফিকুল আলম, ফখরুদ্দিন আহম্মেদ এবং শেখ মো. আব্দুর রশিদ। বর্তমানে ফার্মটিতে ব্রিডার কুমির রয়েছে শতাধিক, মাঝারি সাইজের রয়েছে এক হাজারেরও বেশি, বাচ্চা রয়েছে ৯শর মতো এবং রপ্তানিযোগ্য কুমির রয়েছে ৩শ।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.
Developed by DesigUs