সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে টমেটোর উৎপাদন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ  রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এবার টমেটোর উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকরা খুশি। টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে অর্থনীতি ব্যবস্থা। আর এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, রাজশাহীতে এবার ৩৬ জাতের টমেটো উৎপাদন হয়েছে। এরমধ্যে তিন জাতের আবাদ বেশি। জেলার তিন ভাগের দুই ভাগ বেশি টমেটো উৎপাদন হয় গোদাগাড়ীতে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ফলে টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ২শ’ কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি অফিস।এ বছর জেলায় ৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ২২ মেট্রিক টন। গত বছর ৩ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছিল পুরো জেলায়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে কিছু অসাধু চাষি ও ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ক টমেটো গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারজাত করেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার মতিহার থানা এলাকায় টমেটো চাষ হয়েছে ১৪ হেক্টর জমিতে, বোয়ালিয়া ৫ হেক্টর, পবায় ২৩৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া তানোরে ২৫ হেক্টর, মোহনপুরে ১৫ হেক্টর, বাগমারায় ২২৫ হেক্টর, দুর্গাপুরে ৯০ হেক্টর, পুঠিয়ায় ৬০ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর, চারঘাটে ২ হেক্টর ও বাঘায় ৪০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে।

সেই হিসেবে রাজশাহী জেলায় বরাবরের মতোই টমেটো চাষে প্রথমে রয়েছে গোদাগাড়ী। এ বছর দ্বিতীয়তে রয়েছে পবা উপজেলা। আর দুই হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ নিয়ে উপজেলারগুলো মধ্যে সবচেয়ে নিচে রয়েছে চারঘাট।

গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের টমেটো চাষি আবু তালেব বলেন, আমি এবার ‘বিপুল প্লাস’ জাতের টমেটোর চারা জমিতে রোপণ করেছি। এ জাতের ফলন ভালো হয়েছে।

কৃষি অফিস বলছে, টমেটোর বিভিন্ন জাতের মধ্যে গোদাগাড়ীতে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় ‘বিপুল প্লাস’। এ বছর ৮শ’ হেক্টর জমিতে এই জাতের টমেটোর চাষ হয়েছে। ‘ভিএল ৬৮২’ জাতের টমেটো চাষ হয়েছে ৬৬০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ‘ইউএল ৭৪২’ জাতের টমেটো চাষ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর জমিতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- গোদাগাড়ীতে আউশ ধান কেটে নেয়ার পরে টমেটো চাষ শুরু হয়। এটা মূলত বর্ষাকালীন টমেটো। এই উপজেলায় প্রায় ৩৬ জাতের টমেটো চাষ হয়। যার সবগুলো হাইব্রিড। অন্য যেকোনো মাঠ ফসলের তুলনায় টমেটো চাষ অত্যন্ত লাভজনক। বিঘায় ৬০ থেকে ৭০ মণ টমেটো উৎপাদন হয়। কম করে প্রতিমণ ১ হাজার টাকা করে হলেও ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। যা ধান কিংবা অন্য ফসল চাষে সম্ভব নয়।

চাষি নুর ইসলাম জানান, টমেটো চাষের প্রথম দিকে ভালোই দাম পাওয়া যায়। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা পুরো জমির টমেটো কিনে নেয়। দুই-তিন মাসের মধ্যে টমেটো নিয়ে জমি ছেড়ে দেয়। তবে বেশির ভাগ চাষি নিজেরাই টমেটো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে।

তিনি আরো জানান, টমেটো ব্যবসায়ীরা মূলত বাইরের। তারা এখানে এসে থাকেন। এরপরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে টমেটো কিনে ট্রাকে ভর্তি করে নিয়ে যান, সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও থাকেন। উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা জানান, গত বছর ১৫০ কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পরিবহন ও শ্রমিক মিলে আরো ২৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। টমেটো কেনা-বেচাকে কেন্দ্র করে সবমিলে ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় প্রতি বছর।

তিনি আরো জানান, টমেটো উৎপাদন মৌসুম সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (চার মাস) ধরা হয়। এই অঞ্চলে টমেটো দু’বারে চাষ হয়। এরমধ্যে একটি রবির আগে উঠে। এই টমেটোর বেশি দাম পান চাষিরা। যা বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। রবি মৌসুমের টমেটো বিক্রি হয় ৫০ থেকে সর্বনিম্ন ৫ থেকে ১০ টাকায়।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কেজেএম আব্দুল আউয়াল জানান, ৩৬ জাতের টমেটো চাষ হয় রাজশাহীতে। এক কথায় টমেটো অর্থকারী ফসল। জেলায় সবচেয়ে বেশি গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষ হয়। আগাম উঠিয়ে চাষিরা বাজারে ভালো দাম পান। চাহিদা বাড়ায় প্রতি বছরই চাষের পরিধি বাড়ছে। আধুনিক চাষের কলাকৌশল নিয়ে সবসময় মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পাশে আছেন

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.
Developed by DesigUs