সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৪:১০ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ভন্ড কবিরাজ আহাদুর রহমান। পড়াশুণা করেছেন মাত্র ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউব দেখে শিখেছেন তন্ত্রমন্ত্র। আর সেই তন্ত্রমন্ত্রই তার জীবনের বাজির ঘোড়া। তন্ত্রমন্ত্রের ফাঁদে পড়ে অনেকেই নিস্ব হলেও তার নিজের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে ৫ম
শ্রেণীর গন্ডি না পেরোনো আহাদুর রহমান। হয়েছেন লাখ লাখ টাকার মালিক। কিন্ত শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে র্যাবের জালে আটকা পড়ে যেতে হয়েছে কারাগারে। শনিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইমামবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
স্থানীয় ভোক্তভূগীদের অভিযোগ, ভন্ড কবিরাজ আহাদুর এ তন্ত্রমন্ত্রের সাথে একা জড়িত নয়। তার সাথে রয়েছে জীন মোল্লাসহ একাধিক ব্যক্তির সিন্ডিকেট। যারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সহজ সরল ব্যক্তিদের টার্গেট করে ফেলতো বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল প্রেম ভালবাসা, স্বামী স্ত্রী অমিল, মামলা মোকদ্দমা জয়, সন্তান ধারণ, গর্ভ নষ্ট না হওয়াসহ বিভিন্ন প্রলোভন। এছাড়াও সাধারণ লোকজনদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন যানবাহনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানো হতো চটকদার বিজ্ঞাপন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক স্থানীয় এক যুবক জানান, ভন্ড কবিরাজ আহাদুরসহ তার সাথে থাকা সিন্ডিকেটের লোকজন দীর্ঘদিন যাবত এমন প্রতারণা করে আসলেও কোন প্রতিকার পায়নি ভোক্তভূগীরা। প্রায়ই আহাদুরের আস্থানায় কাজ না হওয়ায় ভোক্তভূগীদের সাথে তাদের বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটতো।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু তন্ত্রমন্ত্রই নয়, অপচিকিৎসার পাশাপাশি সহজ সরল নারীদের বিভিন্ন কৌশলে ফাঁদে ফেলে অশ্লিল ভিডিও ধারণ করতো ওই চক্রটি। পরে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতো লাখ লাখ টাকা। এর মধ্যে তাদের প্রধান টার্গেট থাকতো প্রবাসির স্ত্রীরা। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি কম্পিউটার, মেমোরি কার্ড, দুটি মোবাইল ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করে র্যাব-৯ হবিগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা। যা থেকে উদ্ধার করা হয় অশ্লীল ভিডিও। এর মধ্যে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এ পর্যন্ত সে ৩০-৪০ জন নারীর অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে।
র্যাব-৯ হবিগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ মোহাম্মদ নাহিদ হাসান জানান, এক নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা তার খোঁজ খবর নিতে মাঠে নামে। তদন্তে তার সত্যতা পাওয়ায় অভিযান চালিয়ে আহদুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত দুই বছর যাবত সে এরকম কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে বলেও জানান তিনি। কমান্ডার লেঃ মোহাম্মদ নাহিদ হাসান আরো জানান, এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুরে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার। এ সময় তার দুই সহযোগি পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারকৃত ভন্ড কবিরাজ আহাদুর রহমান বানিয়াচং উপজেলার কুর্শা খাগাউড়া গ্রামের শোল্লুক মিয়ার ছেলে।