রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:২২ অপরাহ্ন

লাউয়াছড়া বিরল প্রজাতির বৃক্ষ ‘আফ্রিকান টিকওক’ ৯২ বছর বয়সে মারা গেছে।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি,দেশের বিরল প্রজাতির বৃক্ষ ‘আফ্রিকান টিকওক’ ৯২ বছর বয়সে মারা গেছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষের মধ্যে ‘আফ্রিকান টিকওক’ প্রজাতির বৃক্ষ ছিল একটি। গাছটি মারা যাওয়ায় এ প্রজাতির বৃক্ষও দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেল।

লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ১০০ ফিট উচ্চতা ও ১২ ফিট গোলাকারের বিরল প্রজাতির ‘আফ্রিকান টিকওক’ গাছের পাতা সম্প্রতি ঝরে গাছটির গোড়ায় পচন ধরেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গাছটি মারা গেছে।

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে মোট দুটি আফ্রিকান টিকওক বৃক্ষ ছিল। দুটি বৃক্ষের মধ্যে ২০০৬ সালে ঝড়ে একটি উপড়ে পড়ে। একমাত্র যে গাছটি উদ্যানে ছিল সেটিরও পাতা ঝরে পড়া এবং গোড়ায় পচন ধরেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৃক্ষটির বয়স ৯০-৯২ বছর হবে।

জানা যায়, বহু চেষ্টা করেও বৃক্ষটি থেকে কোনো বংশবিস্তার করা সম্ভব হয়নি। ‘আফ্রিকান টিকওক’ বৃক্ষটির কোনো বিচি ছিল না। ফুল ধরলেও ঝরে পড়ে যেতো। কয়েক বছর আগে ওই বৃক্ষটি থেকে কাটিং সংগ্রহ করা হলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি।

জানা গেছে, ১৯৩০ সালে এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা কমলগঞ্জে অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আসেন। তখন প্রাকৃতিক এ সংরক্ষিত বনের অধিকাংশ গাছ কেটে কৃত্রিমভাবে চাপালিশ, সেগুন, গর্জন, লোহাকাট, রক্তনসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, এসব বৃক্ষের মধ্যে আফ্রিকান টিকওকের দুটি চারাও ছিল। বাংলাদেশের একমাত্র আফ্রিকান টিকওক বৃক্ষটি স্থানীয়দের কাছে ‘অজ্ঞান গাছ’ হিসেবে পরিচিত। লোকমুখে শোনা গেছে, এই বৃক্ষের পাশ দিয়ে কোনো পথচারি হেঁটে গেলে বা বৃক্ষের নিচে দাঁড়ালে অজ্ঞান হয়ে পড়তেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই বৃক্ষে কার্বলিক অ্যাসিড ও ক্লোরোফর্মের উপস্থিতি রয়েছে। এ কারণে বৃক্ষটির পাশে বেশিক্ষণ দাঁড়ালে অনেকেরই একটু ঘুম ঘুম ভাব তৈরি হতে পারে। আবার প্রতিক্রিয়া হিসেবে নাক ও গলা জ্বলা এবং হাঁপানির সম্ভাবনাও বিদ্যমান।

জানা গেছে, আফ্রিকান টিকওক প্রজাতির ক্লোফোরা এক্সেলসা ক্রান্তীয় আফ্রিকার একটি বৃক্ষ। এ জাতীয় বৃক্ষ আফ্রিকা মহাদেশের অ্যাঙ্গোলা, বেনিন, বুরুন্ডি, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গিনি, ইথিওপিয়া, গ্যাবন, ঘানা, আইভরি কোস্ট, কেনিয়া, মালাউই, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, রুয়ান্ডাসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এর প্রাকৃতিক বাসস্থান রেইন ফরেস্ট চিরহরিৎ বনে।

লাউয়াছড়া বন বিট কার্যালয়ের সামনেই বৃক্ষটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। আফ্রিকান টিকওক বৃক্ষটি মারা যাওয়ায় দেশ থেকে এ প্রজাতির বৃক্ষও বিলুপ্ত হয়ে গেল। মারা যাওয়া বৃক্ষটি হাজারো বৃক্ষের খিড়ে বর্তমানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.
Developed by DesigUs