মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩৬ অপরাহ্ন

শহরে টানা ১৫ ঘন্টার বর্ষণে তীব্র জলাবদ্ধতা \ চরম দূর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ হবিগঞ্জ শহরে টানা ১৫ ঘন্টার বর্ষণে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শহরের প্রধান সড়কসহ পাড়া মহল্লার ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া অধিকাংশ সড়কই এখন পানির নিচে। অনেক বাসা বাড়ি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এমনকি মসজিদ মন্দিরের ভেতরেও বৃষ্টি পানি প্রবেশ করছে। ভেসে গেছে বহু পুকুরের মাছ। প্রধান সড়কে চলেছে নৌকাও। ফলে এমতাবস্থায় দেখা দিয়েছে চরম দূর্ভোগের। আবার অনেক বাসা বাড়িতে পানি প্রবেশ করার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকেই। এছাড়াও হবিগঞ্জ সদর থানা প্রাঙ্গণ, সার্কিট হাউজ ও জেলা প্রশাসকের বাসবভনের সামনেও লেগেছে হাটু পানি। যদিও সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়ায় তেমন দূর্ভোগ পোহাতে হয়নি সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী ও স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকেই হবিগঞ্জ

শহরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ভোর থেকে বাড়তে থাকে বৃষ্টির তীব্রতা। পরে তা শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত একটানা চলে। আর এতে করে টানা ১৫ ঘন্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় শহরের অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট। এর মধ্যে শহরের সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গন, সদর থানা এলাকা, জেলা প্রশাসকের বাস বভন প্রাঙ্গন, বেবিস্ট্যান্ড মোড়, মোহনপুর সিএনজি স্ট্যান্ড, শায়েস্তানগর পানি ভবন এলাকা, গণপূর্ত কোয়ার্টার, টাউন মডেল স্কুল, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সিনেমা হল রোড, নিউ মুসলিম কোয়ার্টার, বিদ্যুত অফিস, শ্যামলী, পুরান মুন্সেফী, আহসানিয়া মিশন, চিড়া কান্দি, শংকরের মুখ ও চৌধুরীবাজার এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় দিনেরও বেলায়ও অনেক যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের প্রধান সড়কের পাশ দিয়ে বড় ড্রেন নির্মাণ করা হলেও পাড়া মহল্লার ভেতরের ড্রেন গুলোর অবস্থা একেবারেই নাজুক। অনেক স্থানেই আবার কোন ড্রেন নির্মানই হয়নি। ফলে প্রধান সড়কে তেমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হলেও অলিগলিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। চরম দূর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ বাসিন্দারা। যদিও সচেতন মহল মনে করছেন, শুধু ড্রেন নির্মাণ নয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী টেকসই পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা গড়ে না তুলা ও পুকুর নদী বা জলাশয় অবৈধ ভাবে দখল ও ভরাট করার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই এর থেকে উত্তরণে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই জরুরি। এছাড়াও নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে ড্রেনগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার দাবীও জানান অনেকেই।

ব্যবসায়ী কাজল আহমেদ জানান, রাত থেকে বিকেল পর্যন্ত মুসলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে ছোট ছোট ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। তাই পানি উপচে দোকান পাঠে প্রবেশ করছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে পানি প্রবেশ করে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রোজিনা আক্তার নামে এক গৃহিনী জানান, টানা বৃষ্টির কারণে আমাদের বাসায় ভেতরে পানি চলে এসেছে। বাসায় থাকা সোফাসহ অনেক মালামাল বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। রিক্সা চালক ছালেক মিয়া জানান, বৃষ্টির দিনে যাত্রী নেই, পানিবন্দি থাকার কারনে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তাই তেমন একটা রুজিও হচ্ছে না। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে অনেক সময় রাস্তা দেখা যায় না। ফরে দূর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, পরিকল্পিত ভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। তবে, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে নালা ও জলাশয় ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। হবিগঞ্জ পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, সকাল থেকেই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। কেউ জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকলে অথবা খাদ্য বা ঔষধ সহায়তার প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ৩৩৩ এ কল করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।

এদিকে, দিনভর জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করেছে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম। তিনি বৃষ্টি উপক্ষো করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষন করেন।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.
Developed by DesigUs