মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শায়েস্তাগঞ্জের নছরতপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ৬ জনের স্বজনের নামে বরাদ্দকৃত সরকারী অনুদানের টাকা আত্মসাত করেছে একটি দালাল সিন্ডিকেট চক্র। চক্রটি নিহতদের স্বজনদের নামে বরাদ্দকৃত জন প্রতি ২ লক্ষ টাকা করে না দিয়ে ৪ জনের কাছ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহেরের মাধ্যমে (২য় পৃষ্ঠায়)
সালিশ বৈঠক বসিয়ে চক্রটি স্বজনদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চুনারুঘাট উপজেলার শ্রী বাউর গ্রামের মোছাঃ মিনারা খাতুন ও মোঃ আব্দুর রাহিম রাজ নামে নিহতদের দুই স্বজন।
এদিকে, ওই দালালদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহাত। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িতদের কোন ভাবেই ছাড় দেয়া হবে না, শীঘ্রই তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অভিযোগ সূত্র জানায়, গত বছরের ২১ আগষ্ট সকালে শায়েস্তাগঞ্জের নছরতপুরে ট্রাক ও সিএনজি অটোরিক্সা মুখোমুখি সংঘর্ষে ৬ শ্রমিক নিহত হন। বিষয়টি হবিগঞ্জ জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনের মাধ্যমে জানতে পেরে তাৎক্ষনিক জেলা প্রশাসক নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল অনুদান দেন এবং বিনা ময়নাতদন্তে নিহতের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন। এরপর শ্রম মন্ত্রনালয় থেকে জেলা প্রশাসক নিহতদের পরিবারকে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা করে সরকারী অনুদানের ব্যবস্থা করেন। পরে তাদের নামে বরাদ্দকৃত ওই টাকার চেক মৌলভী বাজারের শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদপ্তর থেকে ইস্যু করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে চুনারুঘাটের দালাল চক্রের মূল হোতা মোঃ আব্দুল্লাহর সহযোগিতায় তার আত্মীয় রমজান মিয়া, নুরুল আমিন ও ফারুক মিয়া ওই চেক ইসলামী ব্যাংক নোয়াপাড়া শাখায় জমা করে। এ সময় তারা জন প্রতি ২ লাখ করে ৬ লাখ টাকা টাকা উত্তোলন করে নিহতদের ৬ জনের মধ্যে উপজেলার শ্রী বাউর গ্রামের মোছাঃ মিনারা খাতুনসহ ৫ স্বজনকে ৬৫ হাজার টাকা করে বুঝিয়ে দিয়ে বাকি টাকা হরিলুট করে। তাৎক্ষনিক বিষয়টি জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনকে অবগত করেন ভুক্তভোগি স্বজনরা।
পরে মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবগত করলে তিনি তাৎক্ষনিক ওই টাকা উদ্ধারে শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে তৎপর কার্যক্রম গ্রহন করেন।
এদিকে, জেলা প্রশাসকের তৎপরতার বিষয়টি জানতে পেরে নড়ে-ছড়ে বসে ওই দালাল সিন্ডিকেট চক্রটি। তড়ি-ঘড়ি করে প্রায় সপ্তাহ খানেক চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহেরের মাধ্যমে সমঝোতা বৈঠক বসায় দালাল চক্রটি। বৈঠকে মিনারা খাতুনসহ নিহতদের ৪ স্বজনকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে বুঝিয়ে দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখে তারা। তাছাড়া মোঃ আব্দুর রহিম রাজ নামে নিহতের আরেক স্বজন জালাল উদ্দিনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবগত করলে তার পিতা ২ লাখ টাকা বুঝে পান। তবে সে দালালদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সিন্ডিকেট চক্রের মূল হোতা আব্দুল্লাহ তাকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে এবং বিভিন্ন ভাবে ক্ষয়-ক্ষতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভূক্তভোগি মিনারা খাতুন ও আব্দুর রাহিম রাজ জেলা প্রশাসকের কাছে আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধার ও দালালদের আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহের বলেন, ‘নিহতদের স্বজনদের টাকা পাইয়ে দিতে কয়েকজন শ্রমিক নেতা সহযোগিতা করে বলে দাবী করে। তারা আমার কাছে আসলে আমি নিহতদের স্বজনদের আমার কাছে ডাকি। সপ্তাহ খানেক পূর্বে উভয় পক্ষের লোকজন আমার কাছে আসলে অনেক আগেই বিষয়টি চেকের মাধ্যমে সমাধান হয়েছে বলে তারা আমাকে জানায়। তবে এ সময় শুধু একজন মহিলা টাকা পায়নি বলে অভিযোগ করেন। এ সময় আমি বিষয়টি সমাধান করার জন্য ভূক্তভোগি ওই মহিলাকে পরামর্শ দিলে তিনি চলে যান’।
আপনার মাধ্যমে ৪ জনকে জনপ্রতি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আমি কোন সমাধান করিনি এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। তবে আমার জানামতে বিষয়টি চেকের মাধ্যমে আগেই সমাধান করা হয়েছে’।
হবিগঞ্জ জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ৬ পরিবারকে ডিসি স্যারের মাধ্যমে সর্বাত্তম সহযোগিতা করি। সম্প্রতি শ্রম মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্দকৃত সরকারী অনুদানের টাকা একটি দালাল চক্র আত্মসাত করেছে বলে জানতে পেরে ডিসি স্যারকে অবগত করি। তাৎক্ষনিক তিনি হস্তক্ষেপ গ্রহন করলে চক্রটি কয়েকজনকে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা করে বুঝিয়ে দিয়েছে। বাকি টাকা উদ্ধারে ডিসি স্যার প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন’।