বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন

সিলেটের বন্যায় মৎস্য খাতে ৭৫ কোটি টাকার ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছেন সিলেট জেলার মৎস্যজীবিরা। সিলেট জেলা মৎস্য অফিসের প্রাথমিক হিসেবে বন্যায় জেলায় মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭৫ কোটি টাকা।

সিলেট জেলা মৎস্য অফিসের হিসাবমতে, শুধু চলমান বন্যাতেই ৭৫ কোটি ১৪ লক্ষ টাকার মৎস্যসম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষির সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার ৮৭৩। এছাড়া ভেসে গেছে ৩ হাজার ৫৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাভূমির মাছ। এরমাঝে সিলেটের ১৩টি উপজেলায় মোট ৩২ হাজার ৬৪৫টি পুকুর, দিঘী, হ্যাচারি ও মাছের খামার তলিয়ে গেছে। এতে ৩ কোটি ৭২ লাখ মাছের পোনা এবং ৩ হাজার ৬৯৫ টন মাছ বন্যার পানিতে ভেসে মাছ চাষিদের প্রায় ৭৫ কোটি ১৪ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

মাছ ভেসে যাওয়া ছাড়াও অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সিলেটভয়েসকে জানিয়েছেন সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, এবারের বন্যায় সিলেট জেলার ২৬ হাজার ৮৭৩ জন খামার মালিকের প্রায় ৭৫ কোটি ১৪ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, জৈন্তাপুর ও বিয়ানীবাজার উপজেলায়।

এদিকে জেলা মৎস্য অফিস সূত্রের তথ্যমতে সিলেট সদর উপজেলায় ১হাজার ৯শ মাছের খামার তলিয়ে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, বিশ্বনাথে ৩ হাজার ৮শ খামার তলিয়ে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, গোলাপগঞ্জে ২ হাজার ৫টি খামার তলিয়ে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা, জৈন্তাপুরে ২ হাজার ৯৫০টি খামার তলিয়ে ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, বালাগঞ্জে ২ হাজার ৮শ খামার তলিয়ে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, গোয়াইনঘাটে ২ হাজার ৭শ খামার তলিয়ে ২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, জকিগঞ্জে ৬ হাজার ৪শ মাছের খামার তলিয়ে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা, কানাইঘাটে ৩ হাজার ৩শ মাছের খামার তলিয়ে ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, ওসমানীনগরে ১ হাজার ৫শ মাছের খামার তলিয়ে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা, কোম্পানিগঞ্জে ৪৫০টি মাছের খামার তলিয়ে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা, বিয়ানীবাজারে ২ হাজার ৯৪০টি মাছের খামার তলিয়ে ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা, দক্ষিণ সুরমায় ১ হাজার ৫শ মাছের খামার তলিয়ে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও ফেঞ্চুগঞ্জে ৪শ মাছের খামার তলিয়ে ৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

তবে চলমান বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মৎস্যচাষিরা বলছেন, বন্যায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১ লাখ মৎস্যজীবী এ ক্ষতির শিকার হন। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবিরা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা ও দারিদ্র্যের মুখে পড়তে যাচ্ছেন বলে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের বন্যায় সিলেট জেলায় মৎস্যজীবীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলাগুলোতে ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় মন্ত্রণালয় থেকে মৎস্যচাষিদের এখন পর্যন্ত সে ধরণের কোনো সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের সহায়তা দিতে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কথাও হয়েছে। আশা করি, তাঁদের কাছ থেকে আমরা সহায়তা নিয়ে মৎস্যচাষিদের পুনর্বাসন শিগগিরই শুরু করতে পারব।’

জেলা মৎস্য অফিসের হিসাবে, সিলেটে প্রায় ২৫ লাখ পুকুর আছে। গ্রামের মানুষের ৮০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে মৎস্য চাষের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া উপজেলাগুলোর লক্ষাধিক মানুষ হাওর ও নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.
Developed by DesigUs