মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০৭:২২ অপরাহ্ন

হবিগঞ্জে শিল্পদূষণ থেকে নদ-নদী ও জলাশয় রক্ষার দাবিতে বাপা’র আলোচনা সভায়

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ এনভারমেন্ট নেটওয়ার্ক বেন এর প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. নজরুল ইসলাম বলেছেন, হবিগঞ্জের গ্যাস সম্পদই এ জেলার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অল্প খরচে গ্যাস পাওয়ার আশায় কারখানাগুলো এখানে চলে আসছে এবং তারা তা পাচ্ছেও। যারা পরিবেশ দূষিত করছে তাদের সংখ্যা বেশি নয়, সাধারণ মানুষেরই সংখ্যা বেশি। তাই সাধারণ মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠতার শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। পুরাতন খোয়াই নদীকে বাঁধ দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। সেটা একটা অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্ত ছিল। এখন নদীটি দখল হয়ে যাচ্ছে। নদীতে বর্জ্য ফেলে দূষিত করে ফেলা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এখানেও এটা করা যায় কিনা দেখতে হবে। আর শিল্প দূষণ নিয়ে আপনার যে হৃদয় বিদারক বিবরণ দিলেন, তা থেকে পরিত্রান পেতে হলে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। দূষণের বিরুদ্ধে জনগণকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের আন্দোলনে জনপ্রতিনিধিরা সম্পৃক্ত না হলে ধরে নিতে হবে তারা জনগণের পাশে নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় স্থানীয় টাউন হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা আয়োজিত “হবিগঞ্জে শিল্পদূষণ থেকে নদ-নদী ও জলাশয় রক্ষার দাবিতে” আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বাপা কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মোঃ ইকরামুল ওয়াদুদ। শুরুতে বিষয়ের উপর ধারণা বক্তব্য রাখেন বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, বাপা জেলা শাখার সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন, সাংবাদিক শোয়েব চৌধুরী, হাফিজুর রহমান নিয়ন, চৌধুরী মাসুদ আলী ফরহাদ, সাবেক জনপ্রতিনিধি মোঃ হাবিুর রহমান, নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি পীযুষ চক্রবর্তী প্রমুখ। শিল্পদূষণে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন, মো: আলাউদ্দিন, মোঃ আব্দুল মতিন, বাহার হোসেন, এমএ ওয়াাহেদ, মোঃ লুৎফুর রহমান, শামিম আহমেদ, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, মোঃ সাদেকুর রহমান, আব্দুল কাইয়ুম, মোহাম্মদ লোকমান হোসেন, মোঃ দুলাল মিয়া, জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
বাপা কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, আইন দিয়ে শুধু পরিবেশ রক্ষা করা যাবে না। পরিবেশ রক্ষা করতে হলে এলাকার জনগণকে সচেতন হতে হবে। হয়তো ৫/৬ জন মানুষ পরিবেশ দূষণ করছেন, কিন্তু এর বিপরীতে যদি ৫০০ জন নিরব থাকেন তাহলে পুরু সমাজ শক্তিশূণ্য হয়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, আমরা কোন লাইসেন্স বা ঠিকাদারীর স্বপ্ন দেখছি না, আমরা কোন লাভ করার জন্য স্বপ্ন দেখছি না, আমরা স্বপ্নিল হবো, আমাদের নিজেদের জীবন, সম্মান, মর্যাদা এবং সবচেয়ে বড় কথা আমাদের সন্তান সন্ততির সুস্থ, সুন্দর জীবন নিশ্চিত করার জন্য। এটা যদি আমরা মনে রাখি নিশ্চয়ই আমরা খুবই শক্ত হয়ে দাঁড়াবো এবং অবশ্যই একটা না একটা সময় আমরা সফল হবো। ভবিষ্যত বংশধরদের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরকে শিল্পদূষণ রোধে সকলকে একাত্ব হয়ে কাজ করতে হবে। বাপা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, শিল্প কারখানার দূষণ ধীরে ধীরে সবকিছু ধ্বংস করছে। সকল রকম পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে দাঁড়াতে হবে। নিজেরা বাঁচতে চাইলে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে, পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে কাজ করতে হবে।
বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল ধারণা বক্তব্যে শিল্পদূষণের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত শিল্পকারখানা গড়ে উঠার চলমান প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে ব্যাপক পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। কৃষিজমিতে শিল্পকারখানা স্থাপন বন্ধ ও স্থাপিত কারখানাগুলোর ছড়িয়ে পড়া বর্জ্য দূষণ প্রতিরোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের পরিবেশ, প্রতিবেশ চরম সংকটজনক অবস্থায় পতিত হবে।

 

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.
Developed by DesigUs