বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৮ অপরাহ্ন

হবিগঞ্জ জেলায় ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যাচ্ছে টমটমের পেটে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ফিডারওয়ারী এলাকা ও হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৯টি উপজেলায় প্রতিদিন ১৫০ মেঘাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। তবে এসব এলাকায় প্রতিদিন ৯০ মেঘাওয়াট বিদ্যুতের বরাদ্দ রয়েছে। যে কারনে জেলা জুড়ে ৬০ মেঘাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের এ অসহনীয় ঘাটতি পূরণে প্রতিদিন গড় ৫-৬ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে অন্ধকার থাকতে হচ্ছে জেলাবাসীকে।
এদিকে, হবিগঞ্জ শহরসহ ৯টি উপজেলায় রয়েছে প্রায় ২ শতাধিক টমটম গ্যারেজ। প্রতিদিন এসব গ্যারেজে থাকা প্রায় ৫ হাজারের বেশি টমটম চার্জ দেয়া হচ্ছে। আর এসব টমটম গ্যারেজে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রায় ৬ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ। এতে প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের ঘাটতির সৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা পুরণে
হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ পৌর সভার অধিনে ১২শ টমটম থাকলেও শহরে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশী ব্যাটারী চালিত টমটম চলাচল করছে। এসব টমটমের ব্যাটারি চার্জ দেয়ার জন্য ছোট বড় মিলিয়ে শহরের বগলাবাজার, চিড়াকান্দি, মাছুলিয়া ব্রীজ এলাকা, খাদ্য গুদাম রোড, ২নং পুল, তেঘরিয়া আবাসিক এলাকা, বহুলা এবং কোর্ট স্টেশন এলাকা, পোদ্দার বাড়ি, মোহনপুর, তেঘরিয়া, পৈল রোড, অনন্তপুর, মাহমুদাবাদ, শ্যামলী, শ্মশানঘাট, নোয়াবাদ, উমেদনগর, রাজনগর, জালালাবাদ, আনোয়ারপুর, পাথাড়িয়া, আলমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৬০টি গ্যারেজ স্থাপন করা হয়েছে। আর এসব গ্যারেজে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টমটম চার্জ দেয়া হচ্ছে। এতে ব্যবহৃত হচ্ছে ১ হাজার ৮শ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। তাছাড়া কটিয়াদি, নন্দনপুর, মশাজান, কাজীহাটা, আব্দাবকাই, দাউদ নগর বাজার, চুনারুঘাট পৌর এলাকাসহ জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে কমপক্ষে আরও দেড় শতাধিক টমটম গ্যারেজ। আর এসব টমটম গ্যারেজে প্রতিদিন চার্জ দেয়া হচ্ছে ৩ হাজারেরও বেশি টমটম। আবার অনেকেই বাসা-বাড়িতে, দোকান পাটে ও রাস্তার পাশে টমটম চার্জ দিচ্ছেন। ফলে এসব টমটম চার্জ দিতে প্রতিদিন ৪ মেঘাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। যে কারণে প্রতিদিন বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তবে এসব টমটম গ্যারেজে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হলে নিমিষেই গ্যারেজ হয়ে যায় গুদাম ঘর। এতে নামমাত্র অর্থদÐ ও কয়েকটি লাইন বিচ্ছিন্ন করেই ধমকে যায় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের অভিযান। অন্যদিকে নাম মাত্র মিটার ব্যবহার করে এসব টমটম চার্জ দেয়ায় সরকার হারাচ্ছে হাজার হাজার টাকার রাজস্ব, বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীদেরকে ম্যানেজ করেই গ্যারেজ মালিকরা দেদারছে তাদের এসব ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন সচেতনবাসী।
হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শহরের ৭টি ফিডারওয়ারী এলাকায় প্রতিদিন ১৫-১৬ মেঘাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। তবে এসব এলাকার জন্য প্রতিদিন বরাদ্দ রয়েছে ৯-১০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ। যে কারনে প্রতিদিন ৫-৬ মেঘাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। আর বিদ্যুতের এ চরম ঘাটতি থাকায় প্রতিদিন ৫-৬ ঘন্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এতে করে প্রচন্ড গরম ও দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন শহরবাসী।
হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সুত্র জানায়, জেলার ৯টি উপজেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৩৫ মেঘাওয়াট। কিন্তু এসব এলাকার প্রতিদিন বরাদ্দ রয়েছে ৮০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ। যে কারণে ৫৫ মেঘাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর বিদ্যুতের এ ঘাটতি পুরণে উপজেলা গুলোতে অসহনীয় লোডশেডিংয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশল মোঃ ইমাম হোসেন জানান, ৭টি ফিডারওয়ারী এলাকায় প্রতিদিন ১৫-১৬ মেঘাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৯-১০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ। শহর এলাকায় কয়টি টমটম গ্যারেজ রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৬০টি টমমট গ্যারেজ রয়েছে। এতে প্রতিদিন ১.৮ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে’।
হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মামনু মোল্লা জানান, ৯টি উপজেলায় চাহিদার চেয়ে বিদ্যুতের বরাদ্দ কম। এতে প্রতিদিন অসহনীয় বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে করে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.
Developed by DesigUs