শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:১৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাঙ্গি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। তীব্র গরমে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে বাঙ্গির ভূমিকা অপরিসীম। চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় এ বছর বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। চৈত্রের বাহারি মৌসুমি ফল বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে।
পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাঙ্গা এলাকার কৃষকদের মুখে এখন তৃপ্তির হাসি। উৎপাদিত ফসল নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয় কৃষকরা। অল্প পুঁজিতে ভালো মুনাফা হওয়ায় প্রতি বছরই হাইমচরের চরাঞ্চলসহ প্রায় সব এলাকার মানুষ বাঙ্গি চাষে ঝুঁকছেন। এবছর বৃষ্টি না হওয়ায় সবুজ-হলুদ রঙে সেজেছে বাঙ্গির ক্ষেত। বাহারী এই মৌসুমী ফল বাঙ্গির বাজারে দরও চড়া। ফলন ও বাজার দরে খুশি চাষিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নয়ানী, বাংলা বাজার, চরভাঙ্গা ও চরভৈরবী এলাকার বেশিরভাগই মানুষই মৌসুমি এই কৃষিপণ্য বাঙ্গির চাষ করেছেন। দিগন্ত জোড়া বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বাঙ্গি আর বাঙ্গি। সবুজের মাঠজুড়ে হলুদের সমারোহ। যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই কেবল সবুজ-হলুদ সংমিশ্রণে বাঙ্গি চাষের সমারোহ দেখা যায়। বাঙ্গি ক্ষেতে সবুজ আর হলুদ বাঙ্গির সমাহার। কৃষক আনন্দ ভরে পাইকারদের কাছে তুলে দিচ্ছেন। তীব্র গরমে রোজা থাকার পর শরীরের ক্লান্তির ছাপ মুছতে বেশিরভাগ বাঙালির ইফতারেই বাঙ্গির চাহিদা থাকে। তাই বাজারে বাঙ্গির চাহিদা বেড়েছে। আর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে ক্ষেত থেকে বাঙ্গি নিয়ে যাচ্ছে।৩ নম্বর আলগী দক্ষিণ ইউনিয়ন চরভাঙ্গা গ্রামের বাঙ্গি চাষি রহিম শেখ জানান, গত সৃজনে মেঘনায় অনাকাঙ্ক্ষিত জোয়ারে যেমন ক্ষতি সাধন হয়েছে, তেমনি ফসলি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তাই এবার ব্যাপক বাঙ্গির ফলন হওয়ায় আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছি।
তিনি এ বছর প্রায় দেড় একর জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। প্রায় সাড়ে তিন মাস পরিচর্যার পর বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এখন বাঙ্গি পাকতে শুরু করেছে। প্রতিদিন পাকা বাঙ্গি তুলে বাজারে পাঠাচ্ছেন।একই গ্রামের শাহাজান শেখ, ইব্রাহিম শেখ, সৈয়দ আহমদ জমাদার জানান, বর্তমানে স্থানীয় বাজারে বড় আকারের (প্রায় পাঁচ কেজি) বাঙ্গি প্রতিটি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, মাঝারি আকারের (প্রায় তিন কেজি) প্রতিটি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা এবং ছোট আকারের (প্রায় দেড় কেজি) প্রতিটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে কেনা-বেচা চলছে।
হাইমচর উপজেলা সদর আলগী বাজারের পাইকারী বাঙ্গি ব্যাবসায়ী মো. বেলাল ও জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এখন গরমকালে বাঙ্গি ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। হাইমচরে উৎপাদিত বাঙ্গি ফল উপজেলার চাহিদা পূরণ করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলাশহর ও মহানগরের বাজারেও যাচ্ছে। আরো বেশি জমিতে বাঙ্গি চাষ হলে দাম কিছুটা কমতো। পাইকাররা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ক্ষেত থেকে বাঙ্গি নিয়ে যায়।হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার জানান, বাঙ্গি ফলে রয়েছে প্রচুর শর্করা, খনিজ, মিনারেল, ভিটামিন-এ এবং সি। এজন্য গরমে বাঙ্গি ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া বাঙ্গি ফলে সুগার কম থাকায় ডায়বেটিস রোগীদের জন্য এ ফল গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো জানান, শরীর ঠান্ডা রাখতে তরমুজের পর বাঙ্গি দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে। বাঙ্গি গাছ দেখতে অনেকটা শসা গাছের মতো লতানো। অনেকে কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসেবে রান্না করে খায়। এ ফল পাকলে হলুদ রঙ ধারণ করে। চলতি বছরে হাইমচর উপজেলায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ২৩/২৪ টন বাঙ্গি উৎপাদন হচ্ছে। বলা যায় বাঙ্গির ফলন ভালো হয়েছে।