রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৫২ পূর্বাহ্ন

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নারীরা নিজেদের পরিধেয় কাপড় কোমর তাঁত দিয়ে নিজেরাই বুনতো। পাহাড়ি নারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে এ কোমর তাঁত।

পাহাড়ের বেশিরভাগ নারীরাই কোমর তাঁত থেকেই অর্থ উপার্জন করে তাদের সংসার চালায়। বিশেষ করে চাকমা সম্প্রদায়ের পিনন-খাদি, লুঙ্গি, ওড়না, ব্যাগ, চাদরসহ বিভিন্ন বস্ত্র বুনন করা হয় কোমর তাঁতের মাধ্যমে। কিন্তু সুতাসহ কাঁচামাল বিভিন্ন উপকরণের দাম বৃদ্ধি এবং বাজারজাত করণের সমস্যার কারণে কাপড় বুননে লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁত। তাই সরকারি-বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোকষতার প্রয়োজন মনে করছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নারীরা।ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠিদের শত বছরের ঐতিহ্য কোমর তাঁত। নৃ-গোষ্টির নারীরা কোমর তাঁতে নিজেদের পরিধেয় কাপড় নিজেরাই বুনেন। বংশ পরস্পরায় তারা এ কাজ শিখেছেন। একটা সময় পাহাড়ি নারীদের বিয়ের সময় তাঁত বুনার যোগ্যতা বাধ্যতামূলক ছিলো। পাহাড়ে প্রায় সব নৃ-গোষ্টির মানুষ কোমর তাঁত বুনেন। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই ঐতিহ্য এখন আর নেই।

রাঙামাটির কুতুকছড়ির এলাকার সিমি চাকমা জানান, এটি চাকমাদের ঐতিহ্য। কোমড় তাঁত দিয়ে যুগ যুগ ধরে কাপড় বুনেন তারা। বর্তমানে উপকরণের দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে কাপড় তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সরকারি- বেসরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি করেন তিনি।রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের সোনাবী চাকমা জানান, আধুনিকতার ছোঁয়া আর যন্ত্রপাতির প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁত। সুতা ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং বাজারজাত সংকটের কারণে যারা এটিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তারাও লোকসানে পড়ছেন। এখন বাজারে মিলছে মেশিনে বানানো উপজাতীয় বস্ত্র।

তিনি আরো জানান, সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে পিনন খাদি বুনন করে বাজারে বিক্রয় করার মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন করতে পারবেন।

রাঙামাটি শহরের রাঙাপানি এলাকার সুমনা চাকমা জানান, সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আর কোমড় তাঁত দিয়ে কাপড় বুনে লাভ হচ্ছে না। এখন সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে।

সিএইচটি ট্যুরিজম অ্যান্ড কালচার রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, কোমর তাঁত পার্বত্য চট্টগ্রাম নৃ-গোষ্ঠিদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। এটিকে সংরক্ষণ করার জন্য সরকারি উদ্যোগ নেয়া খুবই জরুরি। কোমর তাঁত বুননে পাহাড়ি নারীদের যেসব সমস্যা আছে তা সমাধান করা দরকার। পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে কুটির শিল্পর বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে বিনামূল্যে তাদের প্রশিক্ষণ এবং পণ্যের বাজারজাত করার ব্যবস্থা করা দরকার।

তিনি আরো জানান, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে নৃ-গোষ্ঠিদের পণ্য প্রর্দশনীর জন্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে একটি করে বিক্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা প্রয়োজন। তাহলে কোমর তাঁতীরা তাদের তৈরি পণ্য খুব সহজেই বিক্রি করতে পারবেন এবং নৃ-গোষ্ঠির নারীরা খুবই লাভবান হবেন।বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প কর্পোরেশন রাঙামাটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন জানান, বিসিকের মাধ্যমে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদেরকে তাঁত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে কোমর তাঁতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো তাদের প্রদর্শণী কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রয় করার সুযোগ রয়েছে

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.
Developed by DesigUs