মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০৬:৫০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে দেশ। অথচ এখন পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলার বেশিরভাগ গণকবরই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। নেই দৃশ্যমান তেমন কোনো উদ্যোগও।
আবার যেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলোও পড়ে রয়েছে অযত্ন আর অবহেলায়। কোনো কোনোটিতে আবার চিহ্নিত করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও অরক্ষিত থাকায় পড়ে রয়েছে অযত্ন আর অবহেলায়। যার ফলে সেই স্থানগুলো এখন পরিণত হয়েছে বখাটেদের অভয়াশ্রম হিসেবে। এর মধ্যে আবার কোথাও কোথাও গণকবরের উপরে বসেছে সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড। তাই সুবর্ণজয়ন্তী এ বছরেই গণকবরগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণের দাবি বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর। এদিকে, হবিগঞ্জ জেলায় মোট কতটি বধ্যভূমি রয়েছে সেই তথ্য জানতে বার বার যোগাযোগ করা হলেও সঠিক কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেনি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় লোকজন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া তথ্যমতে জেলায় এ পর্যন্ত ২০টি গণকবরের সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জেলায় সব চেয়ে বড় গণকবরের সন্ধ্যান মিলেছে বাহুবল উপজেলার ফয়জাবাদ হিলে।
আরো পড়ুন নাকুগাঁও বধ্যভূমি অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
সেখানে অসংখ্য নারী পুরুষসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে নির্যাতনসহ হত্যা করেছে পাকহানাদার বাহিনী।
আপরদিকে, জেলা প্রশাসনের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও গ্রামবাসী ও স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আন্তরিকতার কারণে জেলায় মোট তিনটি বধ্যভূমি সংরক্ষিত রয়েছে।
সেগুলো হলো, বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি বধ্যভূমি, লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর বধ্যভূমি ও চুনারুঘাট উপজেলার লালচাঁন্দ চা বাগান বধ্যভূমি।সরেজমিনে ফয়জাবাদ হিল বধ্যভূমি ও শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমি ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও বছরের পুরোটা সময়ই থাকে অরক্ষিত। যার কারণে বখাটেরা সেখানে অবাধে ঘোরাফেরা করে বানিয়ে নিয়েছে তাদের অভয়াশ্রম হিসেবে। আবার শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে সিএনটি অটোরিকশার স্ট্যান্ড। যদিও ডিসেম্বর মাস আসলেই উপজেলা প্রশাসন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতায় সেখানে কিছুটা করা হয় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা। চুনারুঘাট সদরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ও গণকবরের একটি অংশ এখন অনেকটাই দখল হয়ে গেছে। সেখানে গড়ে উঠেছে বাসা-বাড়ি-মার্কেট। ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনও। এছাড়াও চুনারুঘাট সুরমা চা বাগান বধ্যভূমি, গাজীপুর সাগরদিঘি বধ্যভূমি, নালুয়া চা বাগান বধ্যভূমি, টেকারঘাট বধ্যভূমি, বানিয়াচং উপজেলার নজিপুর বধ্যভূমি এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা বধ্যভূমির কোনো চিহ্নই নেই।
বাহুবল উপজেলার ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুন নুর বলেন, বাহুবলের ফয়জাবাদ হিল বধ্যভূমিতে পাকহানাদার বাহিনী অসংখ্য নারী পুরুষকে ধরে নিয়ে নির্যাতনসহ হত্যা করেছে। স্থানটি জেলার শেষ সীমানা হওয়ায় সেখানে শুধু হবিগঞ্জ থেকেই নয় পার্শ্ববর্তী শ্রীমঙ্গল থেকে সাধারণ মানুষদের ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। তাই বধ্যভূমিটির চার পাশে দেয়াল নির্মাণসহ দৃষ্টি নন্দন করে সাজানোর দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, এখন যদি বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ না করা হয় তা হলে পরবর্তী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকালীন সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে না।
শায়েস্তা গঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক চৌধুরী মাহতাব বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে সেখানে শহীদদের নাম ফলক উদ্বোধন করা হয়েছে।
হবিগঞ্জের ডিসি ইশরাত জাহান জানান, এরই মধ্যে জেলার তিনটি বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাকিগুলো চিহ্নিত ও সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।