বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৫১ অপরাহ্ন

৮০টি লেবু বিক্রি করে ১ কেজি চাল!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ২০ হালি অর্থাৎ ৮০টি লেবুকে ঝালকাঠিতে স্থানীয় ভাষায় ১ পোন বলা হয়। ৮০টি লেবুর পাইকারি দাম আকার ও মানভেদে ৪০-৫০ টাকা। সে হিসেবে এক পোন লেবু বিক্রি করে মিলছে এক কেজি চাল (সর্বনিম্ন দাম ৪২-৫০ টাকা ধরে)। এতে চরম হতাশায় রয়েছেন লেবুচাষিরা। ঝালকাঠির সদর উপজেলার ডুমুরিয়া, খেজুরা, কীর্তিপাশা, মিরাকাঠি, বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষন্ডাসহ ২২ গ্রামের চাষিরা ভীমরুলী বাজারে লেবু বিক্রি করেন। কাগজি লেবুই এখানে বেশি জনপ্রিয়। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ সুগন্ধ ও রসে ভরা এই লেবুর চাহিদাও বেশি। এসব এলাকায় শুধু লেবু চাষ করেই প্রতি বছর অনেকের ভাগ্যের চাকা ঘুরে থাকলেও এবার তা থেমে গেছে। ঝালকাঠির শহর থেকে কীর্তিপাশা হয়ে সরু সড়ক ধরে এগিয়ে গেলেই বিখ্যাত ভীমরুলী বাজার। খালের পাড় ঘেঁষে বিখ্যাত ভাসমান বাজারে যেতে যেতে চোখ প্রশান্ত করবে চিরায়ত গ্রামবাংলার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। যদিও একসময়ের মেঠোপথ এখন পিচঢালা পাকা সড়ক। ঝালকাঠি শহর থেকেই মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা ও লেগুনাযোগে মাত্র ৩০ মিনিটেই পৌঁছা যায় ভীমরুলী বাজারে। পেয়ারার জন্য বিখ্যাত হলেও এখন ভীমরুলীর ভাসমান হাটে লেবুর রাজত্ব। পেয়ারা পরিপক্ব হয়ে পাকতে সময় লাগবে আরও ১৫ দিন। তখন থেকেই বসবে পেয়ারার হাট। এখন ভীমরুলী ব্রিজের ওপরে দাঁড়ালে দেখা যায় ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে হাটে আসছে সুগন্ধি ও রসে ভরপুর কাগজি লেবু। খালের মধ্যে যেন সবুজের এক সমারোহ। লেবুচাষিরা খুব সকালে বিভিন্ন বাগানের গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকায় নিয়ে আসছেন ভীমরুলী খালের ভাসমান হাটে। আশপাশের ২২ গ্রামের চাষিরা প্রতিদিন মিলিত হন এই হাটে। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এখান থেকে লেবু নিয়ে যান। তবে এখানে শুধু লেবুর বেচাকেনাই হয় না।

ভাসমান হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় সুমন জানান, পেয়ারার মৌসুমে পর্যটকের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। এখনো পেয়ারা পরিপক্ব হয়ে পাকতে শুরু করেনি। আরও ১৫ দিন লাগবে পরিপক্ব হয়ে পাকতে। তাই এখন লেবু বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন লেবুর ভরা মৌসুম। তবে ন্যায্য মূল্যে লেবু বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা। ৮০টি লেবু আকার ও মানভেদে ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তা দিয়ে এক কেজি চালই কেনা যায়।

সরেজমিন ভীমরুলীর ভাসমান হাটে দেখা যায়, লেবুচাষিরা ভীমরুলীর খালে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় লেবু নিয়ে পাইকারদের আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিছু কিছু পাইকারও দেখা গেলো খালপাড়ে। তারা নৌকা ডেকে কিনারে এনে লেবুর দরদাম করছেন। লেবুচাষিরা লেবু বিক্রি করছেন পোন হিসেবে। ৮০টি লেবুতে এক পোন হয়।

জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, ঝালকাঠি জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়। বছরে জেলায় ১৮৭৫ মেট্রিক টন লেবু উৎপাদন হয়। লেবুর উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা লেবুচাষে বেশ আগ্রহী। কিন্তু এ বছরের মূল্যস্ফীতিতে চরম হতাশ কৃষকরা। লেবুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর তারা এক পোন লেবু বিক্রি করেছেন ৪০০ টাকায়। বর্তমানে সেই লেবুর দাম ১০ ভাগ কমে গেছে। তারা ৪০-৫০ টাকায় এক পোন লেবু বিক্রি করছেন।

লেবুচাষি তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে কাগজি লেবু চাষ করেছি। উৎপাদন খরচ ছিল ৫০ হাজার টাকা। গত বছরে বিক্রি করেছি প্রায় চার লাখ টাকার লেবু। এ বছর উৎপাদন খরচ আরও বেড়েছে। কিন্তু লেবুর দাম আগের তুলনায় প্রায় ১০ ভাগ কমে গেছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, লেবু শরীরে ভিটামিন সি’র ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। লেবু চাষের পরিধি বাড়াতে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সার ও ঋণের সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.
Developed by DesigUs