মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন

খবরের শিরোনাম:
রাজনগর সরকারি কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুর শায়েস্তাগঞ্জ ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক ভিডিওকলে মাধবপুরের রেহানাকে বাঁচানোর আকুতি, ‘আমি আর সহ্য করতে পারতেছি না’ মৌলভীবাজারে চা-শ্রমিকের ছেলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার নবীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির মাসিক সভায় এমপি কেয়া চৌধুরী আড়াই কোটি টাকার সার-বীজ বিনামূল্যে বিতরণ সার চাওয়ায় কৃষকদের হত্যা করে বিএনপি -এমপি আবু জাহির উপজেলা নির্বাচনে নবীগঞ্জে ১৯ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা নিয়মিত খেলাধূলা আয়োজনে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে-এমপি আবু জাহির দেশে হিটস্ট্রোকে আরও ৩ জনের মৃত্যু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্স উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

আজ ঐতিহাসিক বদলপুর যুদ্ধের ৫০ তম বছর পূর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ১৬ নভেম্বর ১৯৭১। দিনটি ছিল মঙ্গলবার। অগ্নিঝড়া এ দিনে ভাটি বাংলার অন্যতম অকুতোভয় গেরিলা কমান্ডার জগজ্যোতি দাস (শ্যাম) হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার নিজ জন্মভূমি জলসূখা থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে বদলপুর গ্রামের দক্ষিণে কৈয়ারবিল নামক স্থানে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে এক সহযোদ্ধাসহ
শহীদ হন।
এ উপলক্ষে আজমিরীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযুদ্ধের দুর্ধর্ষ গেরিলা বাহিনীর গাজী মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ১১টায় ‘ঐতিহাসিক বদলপুর যুদ্ধ \ বীর উত্তম জগৎজ্যোতি দাস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা আজমিরীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ-এর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।
মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের অধীনে বিস্তীর্ণ ভাটি অঞ্চল শত্রæমুক্ত রাখার দায়িত্ব পড়েছিল তার উপর। দিরাই, শাল্লা, ছাতক, আজমিরিগঞ্জ, বানিয়াচং, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার নৌপথ পাক দখলমুক্ত রাখার যুদ্ধে প্রাণ বাজি রেখে লড়ে যান দাস কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা। এসব অঞ্চলে তিনি ছিলেন পাক বাহিনীকে দলিত-মথিত করে এগিয়ে যাবার অগ্রপথিক।
শুধু তার সাহসী অভিযানের কারণে পাকিস্তান সরকার রেডিওতে ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়, ‘এই রুট দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের জানমালের দায়িত্ব সরকার নেবে না’। মাত্র ১৩ জন সহযোদ্ধা নিয়ে বানিয়াচংয়ে পাক বাহিনীর ২৫০ সেনা ও দোসরদের অগ্রগতি রোধ করে দেন, যুদ্ধে প্রাণ হারায় পাক বাহিনীর ৩৫ জল্লাদ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আল বদরদের কাছে জগৎজ্যোতি ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। বিশাল ভাটিবাংলায় পাক বাহিনীকে পরাভূত করতে দাবড়ে বেড়িয়েছেন তিনি।
১৬ নভেম্বর, ১৯৭১। জগৎজ্যোতি জানতেন না এই দিনে তার অন্তিম অভিযান পরিচালিত হবে। জগৎজ্যোতি ও তার সঙ্গীদের লক্ষ্যস্থল ছিল বাহুবল মতান্তরে বানিয়াচং। কিন্তু লক্ষ্যস্থলে যাবার আগেই বদলপুর নামক স্থানে হানাদারদের কূটকৌশলের ফাঁদে পা দেন জগৎজ্যোতি। বদলপুরে ৩-৪ জন রাজাকার ব্যবসায়ীদের নৌকা আটক করে চাঁদা আদায় করছিল। দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ জ্যোতি রাজাকারদের ধরে আনার নির্দেশ দেন।
কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেই পিছু হটতে থাকে কৌশলী রাজাকাররা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন জগৎজ্যোতি, ভাবতেও পারেননি কী ফাঁদ তাঁর সামনে। সঙ্গী ১০-১২ জন মুক্তিযোদ্ধা আর সামান্য গোলাবারুদ নিয়ে তাড়া করেন রাজাকারদের। অদূরেই কুচক্রী পাকসেনাদের বিশাল বহর আর প্রচুর সংখ্যক গোলাবারুদ নিয়ে অপেক্ষা করছিল তার।
অজান্তেই চক্রব্যুহে প্রবেশ করেন জগৎজ্যোতি। আগে থেকে প্রস্তুত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিশাল বহরের ফাঁদে পড়ে যান জগৎজ্যোতি ও তার সহযোদ্ধারা। বর্তমানে শাল্লা উপজেলা সদর ঘুঙ্গিয়ারগাঁও থানায় পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে রাজাকার আর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে ‘দাস কোম্পানি’।
তারা যুদ্ধ করতে থাকেন একটানা, কিন্তু হঠাৎ সহযোদ্ধা ইলিয়াস পাঁজরে গুলিবিদ্ধ হন। জ্যোতি পিছু না হটে তার মাথার লাল পাগড়ি খুলে শক্ত করে ইলিয়াসের বুকে এবং পিঠে বেঁধে দেন, যাতে তার রক্তক্ষরণ থেমে যায়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে বিকেলে জগৎজ্যোতি দাস নতুন ম্যাগজিন লোড করে পজিশন নিয়ে শত্রুর অবস্থান দেখার জন্য মাথা উঁচু করতেই একটি বুলেট তার বুকে বিদ্ধ হয়। জগৎজ্যোতি তখন ‘আমি আর নাই, আমি গেলাম’ বলে কৈয়ারবিলের পানিতে ডুবে যান।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.