শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন

ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পুরো দেশকে মুক্তিযোদ্ধের ১১টি সেক্টরে বিভক্ত, এস.কে ও জেড ফোর্স গঠন, স্বাধীনতা যুদ্ধের নকশা প্রণয়ন এবং যুদ্ধের শপথ গ্রহণ। এসবই হয়েছিল তেলিয়াপাড়া চা বাগান ব্যবস্থাপকের বাংলোতে। ওই গোপন বৈঠকে অংশ নেন ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৭ জন সেনা কর্মকর্তা।

আজ সেই ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই

দিনে তেলিয়াপাড়া চা বাগান ব্যবস্থাপকের বাংলোতে মুক্তিযোদ্ধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওই গোপন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওইদিন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম জি ওসমানীর নেতৃত্বে নেয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি। শপথবাক্য পাঠ করানোর পর নিজের পিস্তল থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথও সম্পন্ন করেন এম এ জি ওসমানী।

ওই বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানী, তৎকালীন মেজর সিআর দত্ত, মেজর জিয়াউর রহমান, কর্নেল এমএ রব, রব্বানী, ক্যাপ্টেন নাসিম, আব্দুল মতিন, মেজর খালেদ মোশাররফ, কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, ভারতের ব্রিগেডিয়ার শুভ্রমানিয়ম, এমপিএ মৌলানা আসাদ আলী, লে. সৈয়দ ইব্রাহীম, মেজর কেএম শফিউল্লাহ প্রমুখ।

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলাতে পড়েছে ঐতিহাসিক এই স্থানটি। জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে। চারপাশে শুধুই সবুজের বেষ্টনি। নির্জন এই স্থানকেই নিরাপদ মনে করেছিলেন স্বাধীনতাকামী ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মহান মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে এখানে ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল বসেছিলেন গোপন বৈঠকে।

প্রতি বছর ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’র উদ্যোগে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে দিনটি পালন করলেও করোনাভাইরাসের কারণে এবার নেই কোন কর্মসূচি। গত বছরও একই কারণে কোন কর্মসুচি পালন করা হয়নি।

হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার জুয়েল চৌধুরী জানান, মুক্তিযোদ্ধের ৩নং সেক্টরে পড়েছিল তেলিয়াপাড়া। ওই সেক্টরের কমান্ডার মেজর কে.এম শফিউল্লাহ্ তাঁর হেড কোয়ার্টার স্থাপন করেন তেলিয়াপাড়া চা বাগানে। সড়ক ও রেলপথে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখান থেকে মুক্তি বাহিনী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা ছাড়াও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে ওঠে। ম্যানেজার বাংলোসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনানায়কদের পদচারণায় মুখরিত।

১৯৭১ সালের ২১ জুনের পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণের কারণে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত সেক্টর হেড কোয়ার্টার তুলে নেয়া হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২, ৩ ও ৪নং সেক্টরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে তেলিয়াপাড়া চা বাগান ম্যানেজার বাংলোর পাশে নির্মিত হয় বুলেট আকৃতির মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মৃতিসৌধ। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে এ স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেন সেনাপ্রধান (অবঃ) মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ বীর উত্তম পিএসসি।

 

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.