বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৩ অপরাহ্ন

দু’বছর পরও ধোঁয়াশায় সিকৃবির সেই নিয়োগ পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ২০১৯ সালের ১৮ জুন মোট ১৮টি পদে কর্মচারী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়োগে হিসাবরক্ষক পদে আবেদন করেন রঞ্জন ঘোষ। আবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে মোবাইলে খুদেবার্তাও পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী তিনি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ পরীক্ষার আগের দিন ৯ জানুয়ারি রাতে অপর একটি খুদেবার্তা পাঠিয়ে পরীক্ষা স্থগিতের কথা জানানো হয়। নিয়োগ প্রকাশের তারিখ থেকে এ পর্যন্ত ইতোমধ্যে কেটে গেছে ২ বছর। আর নেয়া হয়নি পরীক্ষা। রঞ্জনের চাকরির বয়সও শেষ হয়ে গেছে।

কেবল এক রঞ্জনই না, অনেকে ইতোমধ্যে পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে চলে গেছেন প্রবাসে। কেউ হয়েছেন ব্যবসায়ী। আবার কেউ কেউ এখনো আশায় বুক বাঁধছেন। জানতে চাইছেন কবে হবে নিয়োগ পরীক্ষা।

সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী পরিষদের পক্ষ থেকে ‘নিয়োগে অনিয়মের নীলনকশা তৈরি করা হয়েছে’ উল্লেখ করে ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। তাদের অবরোধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরীক্ষার আগের দিন স্থগিত ঘোষণা করা হয় পরীক্ষা। তবে সে সময়কার আন্দোলনে অনিয়মের অভিযোগ আনার বিষয়টি অস্বীকার করে ভিন্ন কথা বলছে কর্মচারী পরিষদ।

আর সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে এতদিন পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়- মোট ১৮টি পদের মধ্যে কেয়ারটেকার পদে ১ জন, অটোমেকানিক (ইঞ্জিন) পদে ১ জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ২৬ জন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে ১ জন, হিসাবরক্ষক পদে ১ জন, ইস্যু কাম ডেসপাস সহকারী পদে ২ জন, ইলেক্ট্রিশিয়ান ২ জন, প্লাম্বার ২ জন, বাবুর্চি ১ জন, বুস্টার ২ জন, লাইব্রেরি অ্যাটেন্ডেন্ড ১ জন, সহকারী ইলেক্ট্রিশিয়ান ৩ জন, সহকারী বাবুর্চি ৮ জন, অফিস সহায়ক ১৭ জন, ফিল্ড অ্যাটেন্ডেন্ট ১ জন, ল্যাবরেটরি সহকারী ১ জন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৯ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ১৪ জন মিলে মোট ৯৩ জন লোকবল নেয়ার জন্য সর্ববৃহৎ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়োগে আবেদন করেন ২৪০০ চাকরিপ্রার্থী। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তক্রমে ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষার আগে অনিয়মের অভিযোগসহ বিভিন্ন দাবিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয় কর্মচারী পরিষদ। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় ছাত্রলীগ। দুপুর থেকে প্রায় অর্ধেক রাত অবরুদ্ধ করে রাখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যকে। বাধ্য হয়ে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।

তবে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ আনা হলেও একটি সূত্র জানায়, ছোট পদে থাকা কর্মচারীদের অনেকেই ফের বড় পদ দেখে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু অতীতে সিকৃবির কর্মচারী নিয়োগের সকল পরীক্ষা মৌখিক হলেও এটি ছিল প্রথম কোনো লিখিত পরীক্ষার সিদ্ধান্ত। তাই কর্তৃপক্ষের লিখিত পরীক্ষার সিদ্ধান্ত তারা মেনে না নিয়ে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে বড় পদগুলো ভাগিয়ে নেয়ার ‘কৌশল অবলম্বন করেন।’ তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ছাত্রলীগ। তাই বাধ্য হয়েই কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়।

সে সময়কার আন্দোলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্মচারী পরিষদের সভাপতি মো. সানারুল ইসলাম নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ এনে আন্দোলনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের কর্মচারীদের একটা নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমোদন না দিয়ে দীর্ঘদিন আটকিয়ে রেখেছিল তাই আমরা এটার অনুমোদনের জন্য আন্দোলন করেছিলাম।’

সে সময় আপনি নিয়োগে অনিয়মের নীল নকশা হচ্ছে মর্মে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন। দেশের সকল গণমাধ্যম আপনার বরাত দিয়ে অনিয়মের অভিযোগটি প্রচার করে- এমন প্রশ্নে সানারুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাপারটি আমার মনে পড়ছে না। তবে আমাদের একজন কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেবার কথা থাকলেও তার কার্ড প্রস্তুত করেনি কর্তৃপক্ষ। তাই আমরা অনিয়মের ব্যাপারটি উল্লেখ করে থাকতে পারি। পরে জেনেছিলাম তার পরীক্ষার কার্ডও প্রস্তুত হয়েছিলো এবং আমাদের কাছে আসা তথ্যটি ভুল ছিলো। তাই আমরা আন্দোলন সমাপ্ত করি।’

অপরদিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষাটি স্থগিত করা হলেও বাতিল করা হয়নি। করোনার কারণে এতদিন পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন আলোচনা করে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.