শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন

প্রতিদিন ঢাকায় ৩০০ মোবাইল ছিনতাই হয়: ডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ৩০০ মোবাইল ফোন ছিনতাই হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।

গতকাল বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিনতাইকারী গ্রুপের ২ নেতাসহ ১৬ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা জানান।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মোঃ মিজান, আমিরুল ইসলাম বাবু, শরীফ হোসেন, রিদয়, রাজ, সুমন, সোহেল বাবু, রিদয়, মনিরুজ্জামান, নাজমুল, মনির, ইমরান, ফারুক, আশরাফুল ইসলাম সজিব, আরিফ ও হাসান।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি নম্বর বিহীন মোটরসাইকেল, ৫০টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল, ৪টি চাকু, দুই জোড়া স্বর্ণের দুল এবং নগদ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, রাজধানীতে ছোঁ-মারা এই পার্টির প্রায় ১০০ সদস্যের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রত্যেকের দিনপ্রতি অন্তত ৩টি মোবাইল ছিনতাইয়ের টার্গেট থাকে। সে হিসেবে ঢাকায় প্রতিদিন অন্তত ৩০০ মোবাইল ছিনতাই হয়।

বাস-ট্রেন বা প্রাইভেটকারে চলাচলরত যাত্রীরা মোবাইলে কথা বলার সময় জানালা দিয়ে ছোঁ-মেরে নিয়ে যায় চক্রটি। এছাড়া গাড়ির জানালা দিয়ে যাত্রীদের বা পথচারীদের ব্যাগ, স্বর্ণের চেন, ল্যাপটপও নিয়ে যায় তারা।

ছিনতাইয়ের পর নামমাত্র দামে মোবাইলসহ বিভিন্ন পণ্য ‘মহাজনের’ কাছে বিক্রি করে তারা। এরপর ‘মহাজনরা’ নির্ধারিত দোকানে সেসব বিক্রি করেন।

এসব দোকানি তুলনামূলক কমদামী মোবাইল ক্ষেত্রে খুচরা বাজারে বিক্রি করলেও দামী মোবাইলের যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করেন। অনেক ক্ষেত্রে দামী মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি, আবার কখনো দেশের বাইরেও পাচার করে দেন।

ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, উত্তরখানে বিসমিল্লাহ মোবাইল সার্ভিসিং নামে একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ছোঁ-মারা পার্টির দল নেতা ও চোরাইমাল ক্রয়-বিক্রয়কারীসহ চক্রের ১৬ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রটির নেতৃত্বে মহাখালী থেকে টঙ্গী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ১৫-১৬ টি স্পটে ছিনতাই কার্যক্রম চলতো।

চক্রের নেতা মিজান, জয়, বাবু ও শরীফের নেতৃত্বে ছিনতাইকারীরা বাস, প্রাইভেটকার ও সিএনজি অটোরিকশার যাত্রীদের কাছ থেকে ছোঁ-মেরে মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও গলার চেনসহ মূল্যবান মালামাল কেড়ে নেয়। এরপর সেসব চোরাইমাল ক্রয়-বিক্রয়কারী সুমন, ফারুক ও আশরাফুল ইসলাম সজিবের মাধ্যমে বিসমিল্লাহ মোবাইল সার্ভিসিং নামেও ওই দোকানে বিক্রয় করতো।

তিনি বলেন, গ্রেফতারদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। সাধারণত মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতেই তারা ছিনতাই করে। কখনো কখনো দলনেতা তথা মহাজনরাই তাদেরকে মাদক সরবরাহ করে। যাতে তাদেরকে দিয়ে ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যায়। চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হলে তাদের জামিন করানো এবং পরিবারকে অর্থ সহায়তাও করে থাকে এই মহাজনরা।

চক্রের প্রায় ১০০ সদস্য প্রতিদিন ছিনতাইয়ের জন্য বের হয়। তাদের প্রতিদিন অন্তত ৩টি মোবাইল ছিনতাইয়ের টার্গেট থাকে। তাহলে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ মোবাইল ছিনতাই করে থাকে।

ডিবি প্রধান বলেন, ছিনতাইকৃত এসব মোবাইলের মধ্যে দামী হলে সবকিছু আলাদা করে যন্ত্রাংশ বিক্রি করে, কখনো বাইরে পাঠিয়ে দেয়। আমরা অনেকের নাম পেয়েছি, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

এ সমস্যা সমাধানে আমাদের মূলে যেতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করলে জামিনে বের হয়ে আবার এ কাজে জড়িয়ে পড়ে। এজন্য তাদের শাস্তির পাশাপাশি রিহ্যাব সেন্টারে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আমাদেরও অন্ধকার জায়গা এড়িয়ে চলা কিংবা গাড়িতে চলাচলের সময় জানালার পাশে ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিৎ।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.