বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন

বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রতীকী অনশন কার্মসূচি পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ এ উপকূলের দাবি নিশ্চিতকল্পে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রতীকী অনশন কার্মসূচি পালিত হয়েছে।
সোমবার দুপুরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগো নারী, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) ও এশিয়ান পিপলস্ মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি) যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচিতে বরগুনার ৩টি যুব সংগঠন- বিডি ক্লিন, ঈশানা নারী ফাউন্ডেশন ও কোস্টাল ইয়ুথ নেটওর্য়াক (সিওয়াইএন) অংশগ্রহণ করে।
সবুজ ও পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জ্বালানী রুপান্তরের বিষয়ে উপযুক্ত নীতি গ্রহণের জন্য গ্লাকসোতে চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই প্রতীকী অনশন পালন করা হয়।
কার্মসূচিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নেতিবাচক দিক এবং উপকূলীয় জনজীবনে এসবের প্রভাব সম্পর্কে যুব সংগঠন সমূহের সদস্যরা এবং স্থানীয় জনগণ উপস্থিত হয়ে পরিবেশ রক্ষায় তাদের মতামত, সিদ্ধান্ত ও দাবি তুলে ধরেন।
জাগোনারীর তাজমেরী জাহান লিখন বলেন, কয়লার ব্যবহার পরিবেশের ওপর ও মানুষরে জীবন যাত্রার ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে তাই কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।

বিডি ক্লিনের আয়শা সিদ্দিকা বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে যেনো পরিবেশের ওপর ক্ষতকির প্রভাব না পড়ে।

যুব নেতা অর্পিতা বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানীভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে পৃথিবীর তাপমাত্রা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

কোস্টাল ইয়থ নেটওয়ার্কের মহিউদ্দিন অপু বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে হবে।

বক্তারা অবিলম্বে কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জলবায়ু বিপদাপন্নের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা করা, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চত করার দাবি জানান।

গত ৩১ অক্টোবর শুরু হয়ে আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত স্কটল্যান্ডের রাজধানী গ্লাসগোতে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চারটি মূল দাবি তুলে ধরছেন।

দাবিগুলো হলো কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য উচ্চাভিলাষী পরকিল্পনা গ্রহণ করা, উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়া, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে নবায়নযোগ্য ও পরচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করা, জলবায়ু উদ্বাস্তু এবং জলবায়ু পরির্বতনের কারণে ক্ষতি ও ধ্বংসের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করা।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে পৃথিবী জুড়ে দুর্যোগের সংখ্যা ও ভয়াবহতা দুটোই বেড়ে গেছে। ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদশেরে মতো উপকূলীয় ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। গত ২০ বছরে যেসব দেশ জলবায়ু দুর্যোগ আক্রান্ত হয়েছে তার প্রথম পাঁচটি দেশরে মধ্যে বাংলাদেশ একটি। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে দেশের উপকূলীয় ও উত্তরাঞ্চলে লবণাক্ততা, খরা, বন্যা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, নদী ভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে জীবিকা হারিয়ে প্রতি বছর পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ বাতাসে অতিরিক্ত কার্বন নির্গমন ও তার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে প্যারিস জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্যারিস চুক্তির উদ্দেশ্য পূরণ করতে হলে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ এ লক্ষ্য পূরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল ও ভারতের মতো বড় নির্গমনকারী দেশ কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ফলে মানবজাতি রক্ষার উদ্যোগ অনেকটাই ব্যর্থ হবে।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.