মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

বানিয়াচঙ্গের লক্ষীবাওড় জঙ্গল নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বানিয়াচঙ্গের লক্ষীবাওড় জলাবন বা খরতির জঙ্গল দেখার মতো একটি পর্যটন স্পট হলেও দীর্ঘদিন এটি ছিলো প্রচার-প্রচারণার বাহিরে। বর্ষাকাল ছাড়া শুকনো মৌসুমে এই পর্যটন স্পটটিতে যাতায়াত করাও ছিলো একসময় কষ্টকর। কারণ পাকা সড়ক বা যানবাহন চলাচলের কোনও ব্যবস্থা ছিলো না।

তাই শুধুমাত্র বর্ষাকালে নৌকায় সহজে সেখানে যাতায়াত করা যেতো। লক্ষীবাওড় নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের একের পর এক লেখালেখির ফলে এই পর্যটন স্পটটি ক্রমে ক্রমে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠে। শুরু হয় পর্যটকদের আনাগোনা।

বর্ষাকালে দূরদূরান্তের পর্যটকরা বানিয়াচং এসে স্থানীয় নৌকা ভাড়া করে লক্ষীবাওড় দর্শনে যেতেন। যারা শুকনো মৌসুমে আসতেন তাদেরকে পায়ে হেটে হাওরের পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হতো। পর্যটকরা এভাবে লক্ষীবাওড় দর্শন করে মুগ্ধ হয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভ্রমণকাহিনী প্রকাশ এবং প্রচার করতে থাকেন।

এভাবেই দিনে দিনে বানিয়াচঙ্গের লক্ষীবাওড়ের প্রচার-প্রসার ও কদর বাড়তে থাকে। ফলে সরকারও এটি নিয়ে ভাবতে শুরু করে। একসময় বানিয়াচং আদর্শ বাজার থেকে লক্ষীবাওরের দিকে পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়। বর্ষাকালে পানিতে ডুবে যায় এবং শুকনো মৌসুমে পানি শুকিয়ে ভেসে উঠে এমন ডুবন্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়।

এই সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় শুকনো এবং বর্ষা উভয় মৌসুমে এখন পর্যটকে ভরপুর থাকে লক্ষীবাওড়। এছাড়া স্থানীয়রা যখন-তখন বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, টমটম, মিশুকসহ বিভিন্ন যানবাহনে চলে যান সেখানে। বনভোজন, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবকিছুর আয়োজন চলে হরদম।

এমন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হওয়ায় সম্প্রতি সরকারীভাবে লক্ষীবাওড়ের পাশে একটি রেস্ট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু রেস্ট হাউসটি এলাকাবাসীর সাথে পরামর্শক্রমে সুষ্ঠু পরিকল্পনার ভিত্তিতে নির্মাণ না করায় এটিতে বর্ষাকালে পানি উঠে যায় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ

শুধু আমলাতান্ত্রিক চিন্তা চেতনার ভিত্তিতে রেস্ট হাউসটি নির্মাণ না করে এলাকাবাসীর পরামর্শ নিয়ে একটু উঁচুতে এটি নির্মাণ করা হলে স্বাভাবিক বর্ষায় পানি উঠতোনা বলে এলাকাবাসীর অভিমত। একারণে লক্ষীবাওড় বা খরতির জঙ্গল নিয়ে এলাকাবাসীর পরামর্শের ভিত্তিতে সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন বলে করছেন এলাকাবাসী।অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খানসহ এলাকার অনেকেই এমন অভিযোগ ও অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, নতুবা সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে সরকারের অর্থ অপচয় ছাড়া জনকল্যাণকর কিছু হবেনা।

প্রায় ৬শ একর আয়তনের সম্পূর্ণ বনটি সিলেটের রাতারগুলের মতো সারাবছর জলমগ্ন থাকেনা বলে অনেকে লক্ষীবাওড়কে জলাবন হিসেবে মানতে নারাজ হলেও সরকার এটিকে ইচ্ছে করলে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে জলাবনে রূপান্তরিত করতে পারে বলে মনে করেন।এমনটি করলে লক্ষীবাওড় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলাবন এবং পৃথিবীর অন্যতম কয়েকটি জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্টের একটি হবে বলে তাদের ধারণা।

প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট লক্ষীবাওর বন একসময় ছিলো জমিদারী সম্পত্তি। বনের কিছু অংশ আজমিরীগঞ্জ ও কিছু অংশ বানিয়াচং উপজেলায় পড়েছে। ক্রয়সূত্রে এই বনের মালিকানা একসময় চলে আসে বানিয়াচং সইদ্দরটুলা সাত মহল্লা ছান্দ বা আবু ইউসুফ খান ওয়াকফ্ স্টেট’র।

তবে বনের মধ্যে কিছু ভূমি সরকারের খাস খতিয়ানভূক্ত থাকলেও সরকারী অংশও আবু ইউসুফ খান ওয়াকফ্ স্টেট বা সৈদ্যরটুলা সাত মহল্লা ছান্দ’র নিয়ন্ত্রণাধীন।  সাত মহল্লা ছান্দ’র সর্দার যিনি হন তিনি আবু ইউসুফ খান ওয়াকফ্ স্টেট’র মোতওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

অর্থাৎ লক্ষীবাওড়’র রক্ষণাবেক্ষণ বা আয়-ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব পালন করেন। একারণে সইদ্দরটুলা সাত মহল্লা ছান্দ’র সর্দার পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ছান্দ সর্দার নিয়োগকে কেন্দ্র করে ২০২২ সালের ৫ মে ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া বনাম বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান’র লোকজনের মধ্যে ভয়াবহ এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

প্রতিবছর ছান্দবাসী সম্মিলিতভাবে লক্ষীবাওড়ের গাছপালার ডালপালা ও মৎস্য সম্পদ (লক্ষীবাওড়ের অভ্যন্তরে থাকা অনেকগুলো ছোটবড় জলমহাল) নিলামে লীজ দিলেও ওই সংঘর্ষের কারণে সৃষ্ট বিরোধের ফলে লীজ নিয়ে পুনরায় সংঘর্ষের আশংকা দেখা দেয়।

পরে বানিয়াচং থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ছান্দের বিবদমান দু’পক্ষকে নোটিশ করে থানার নিয়ে ৬ আগস্ট বৈঠকে বসেন। দুইপক্ষের সম্মতিক্রমে ওই বৈঠকে ১নং বানিয়াচং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান ও সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনকেও আমন্ত্রণ জানিয়ে উপস্থিত রাখেন ওসি।

বৈঠকে ছান্দের দু’পক্ষের সম্মতিক্রমে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান ও সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের মাধ্যমে লক্ষীবাওড়ের জলমহাল ইজারা দেয়ার এবং ইজারা থেকে আয় হওয়া অর্থ তাদের মাধ্যমে ছান্দবাসীর মধ্যে বন্টনের সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১ আগস্ট পাঠানটুলা মক্তব প্রাঙ্গণে ছান্দ’র পঞ্চায়েত/সর্বসাধারণের সভা ডেকে প্রকাশ্য নিলামে ১ বছরের জন্য ১ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় লক্ষীবাওড়’র মৎস্য সম্পদ (জলমহাল) ইজারা দেয়া হয়।পরবর্তীতে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান ও সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের মাধ্যমে সইদ্দরটুলা ছান্দ’র ৭ মহল্লায় ৭দিনে পৃথকভাবে মহল্লা বাসীর মধ্যে এই টাকা বিতরণ করা হয়।

 

 

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.