শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৫ অপরাহ্ন

খবরের শিরোনাম:
তাপপ্রবাহের কারণে সব স্কুল-কলেজ সাত দিন বন্ধ ঘোষণা বৃন্দাবন কলেজে জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপনের ঘোষণা-এমপি আবু জাহির শায়েস্তাগঞ্জে ৩০তম বঙ্গবন্ধু কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত জিকে গউছের ৫৭তম জন্মদিন আজ -বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামী জীবনের অধিকারী দেশকে সবদিক থেকেই সমৃদ্ধ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার-এমপি আবু জাহির মৌলভীবাজারে অভিযান চালিয়ে ১৩ জুয়ারি আটক সারাদেশে ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কেন শোনানো হয়নি তার জন্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন এমপি চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহবান তরুণদের প্রতি-এমপি আবু জাহির দুর্নীতিমুক্ত জেলা পরিষদ গঠনের ঘোষণা দিলেন আলেয়া আক্তার

শহীদ জিয়া এ দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা বোধ জাগিয়ে তোলা মানুষের নিবেদিত প্রাণ

মঈনুল হাসান রতন
আজ ১৯ জানুয়ারি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী। ৮৭তম জন্মদিনে জিয়াউর রহমানকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে বাংলাদেশের মানুষ । এই নামটি জড়িয়ে আছে এদেশের ইতিহাসের সঙ্গে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে লিখতে গিয়ে আমার একটা কথা মনে আসছে শহীদ জিয়া যে সব গুণের অধিকারী ছিলেন সেই গুণগুলোর জন্য আজ এ দেশের মানুষের কাছে তিনি বেঁচে আছেন এবং বেছে থাকবেন সারা জীবন। সেই গুণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তাহার সততা ও দেশ প্রেম। বাংলাদেশের বহু দলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক, সাবেক প্রেসিডেন্ট, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ মানুষের অতিপ্রিয় নাম জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ শে জানুয়ারি বগুড়া জেলার বাগবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ জিয়াউর রহমানের পিতা মাতা ছোট বেলা থেকেই আদর করে তাকে কমল নামে ডাকতেন। তাই তার ডাক নাম ছিল কোমল। তার পিতা ছিলেন মনসুর রহমান মাতা জাহানারা খাতুন। জিয়াউর রহমান ছিলেন তার পিতা মাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। তার পাঁচ ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। শহীদ জিয়াউর রহমান ছোট বেলা থেকেই ছিলেন সাদামাটা লোভহীন ব্যাক্তিসত্তা। শহীদ জিয়া সবসময় মনে করতেন মানুষের কল্যাণ করাই তার জীবনের মূল লক্ষ্য। তার জীবনের মূল সুর ছিল মানবতার সেবা ও দারিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নতি সাধন। সততায় তিনি ছিলেন উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতন। জিয়াউর রহমানের শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছিল কলকাতা থেকে। তিনি প্রথমে কলকাতা শিশু শিক্ষা বিদ্যাপীঠ নামে একটি স্কুলে ভর্তি হন। ছোট বেলা থেকেই জিয়াউর রহমান খুব মেধাবী ছিলেন। ১৯৪২ সালে তখন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ চলছিল। সমস্ত ভারতবর্ষে তখন যুদ্ধের ঢেউ লাগে। তখন শহরের মানুষ দিশেহারা হয়ে গ্রামের দিকে ছুটে যায়। শহীদ জিয়ার পিতা তার গ্রামের বাড়ি বাগবাড়িতে চলে আসেন। ওই সময় শহীদ জিয়াকে বাগবাড়ি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করে দেওয়া হয়। ওই স্কুলে শহীদ জিয়া দুই বছর লেখাপড়া করেন। তার পর শহীদ জিয়া তার বাবার সাথে আবার কলকাতা চলে আসেন। তাকে সেখানকার খ্রিষ্টান মিশনারী দ্বারা পরিচালিত হেয়ার স্কুলে ভর্তি করানো হয়। তারপর ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি হলে তার বাবা মনসুর রহমান করাচীতে চলে যায়। ১৯৪৮ সালে ১ জুলাই একাডেমী স্কুলে ফোর্থ দি ষ্টান ক্লাসে ভর্তি হয়। জিয়াউর রহমান ১৯৫২ সালে করাচী একাডেমী স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাশ করেন। শহীদ জিয়াউর রহমানের ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা। কিন্তু কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তার মনে পরিবর্তন আসে। জিয়াউর রহমান ভাবলেন ডাক্তার না হয়েও দেশ ও জাতীর সেবা করতে পারে একজন সৈনিক। কারণ সৈনিকের হাতে শুধু মানুষ নয় দেশ রক্ষার মহান দায়িত্বও ন্যস্ত থাকে। তাই জিয়াউর রহমান ১৯৫৩ সালে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। জিয়াউর রহমান এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সাফল্যের সাথে দয়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তিনি ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কমান্ডার ছিলেন। একজন বীর সৈনিক হিসাবে তার জীবনের সূত্রপাত ঘটলেও তিনি এদেশের রাজনীতিতে এক অপার বিস্ময় এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কিংবদন্তি সফল রাষ্ট্র নায়ক। সে কারণে অস্ত্র হাতে নিয়ে ছিলেন জাতীয় মুক্তি প্রত্যয়ে তার দৃঢ় ঘোষনার মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এ দেশের আপামর জনতা ঝাপিয়ে পরে মাতৃভূমি রক্ষায় স্বশস্ত্র। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়। স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ।

জিয়াউর রহমান শাসন বার গ্রহনের পর ১৯৭৬ সালে ২৮ শে জুলাই রাজনৈতিক দল বিধি জারি করেন। ১৯৭৭ সালে বিচারপতি আব্দুর ছাত্তারকে আহ্বায়ক করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) গঠন করেন। আর সময়ের দাবী মেটানোর জন্যই জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জন্ম হয়েছিল। তখন রাজনীতি শূন্যতা ছিল। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে ১লা সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী বিশ্বাসী একটি আলাদা প্লাটফরমে একত্রিত করার জন্যই গড়ে ছিলেন জাতীয়তাবাদী দল। শহীদ জিয়া ছিলেন আধুনিক কর্মমুখর বাংলাদেশের রূপকার। জিয়াউর রহমানের দুরদর্শী চিন্তা চেতনার ফসল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। বিএনপি জন্ম দিয়ে উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি উপহার দিয়েছিলেন শহীদ জিয়া। ১৯৭৭ সালে ২১শে এপ্রিল জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণের পর প্রথমেই এক দলীয় শাসনের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করে মানুষের বাগ স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রে স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন তিনি। শহীদ জিয়া চুড়ান্তভাবে দেশের শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ১৮ই ফেবুয়ারী ১৯৭৯ সালে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে ৩১টি দলের অংশগ্রহন করেন। এদের থেকে ৩শ আসনের বিএনপি ২০৫টি আসন জয়ী হন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের জনগন ও দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মনে করতেন গণতন্ত্র সর্বৎকৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা। যা দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে এদেশে মানুষের কাছে জননন্দিত রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে পরিচিত। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধগত আদর্শের দ্বারাই বিশ্বাসী বলেই বিএনপি এখোনো এ দেশের মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। শহীদ জিয়া উন্নয়ন আর উৎপাদনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। শহীদ জিয়া মনে করতেন গণতন্ত্র হলো জনসাধারণের ক্ষমতা দ্বারা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থা। দেশের সকল নাগরিকের কল্যাণ সাধন এর প্রধান লক্ষ্যে হলো গণতন্ত্র। তাই এ দেশের মানুষের কাছে শহীদ জিয়া গনতন্ত্রের সিংহপুরুষ।  শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার কর্মের দ্বারাই এদেশের আপামর জনতার প্রাণপ্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি দক্ষ, যোগ্য ও সুনিপুন নেতৃত্বের মাধ্যমে এদেশের মানুষের মন জয় করে। নেতৃত্ব এক অন্যান্য ও অসাধারণ গুণ ছিল তার। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরব করেছিলেন। তিনি মনে করতেন ব্যক্তিত্ব ও মনুষ্যত্বের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জুড়ি নেই। আর গনতন্ত্র মানুষের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের সেই লক্ষ্যে পৌছে দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করেগেছেন। বাংলাদেশের ঘটনাবহুল রাজনীতিতে এই দলটি অতিক্রম করেছে। শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি দেশের বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক দল।

সামরিক জীবনে জিয়া রহমান ছিলেন সাহসী ও সফল বীর সৈনিক। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সততা ও দেশ প্রেমকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। শহীদ জিয়া আজ কেবল একটি ব্যাক্তির নাম নয়। তিনি আজ একটি বিশ্বাস, একটি অনুভূতি, একটি চেতনা। শহীদ জিয়া বাংলাদেশের সৃষ্টির অস্তিত্বের সঙ্গে আজ তা অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় এক বীর সৈনিক। শহীদ উন্নয়নের দ্বারা যখন অব্যহতি ছিল তখনই ষড়যস্ত্রকারীরা নির্মমভাবে রাতের অন্ধকারে এই মহান রাষ্ট্র নায়কের জীবন কেড়ে নিল। শহীদ হলেন বিরোধী উন্নয়ন বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে। তিনি আজ আমদের মধ্যে নেই। আছে তার মহান কৃতি আদর্শ ও উন্নয়নের দিক নির্দেশনা। একজন লেখক হিসেবে নয় এদেশের ষোল কোটি মানুষের অংশ হিসেবে শহীদ জিয়া বাঙ্গালী জাতীয় মহান রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে বেঁচে থাবেন। শহীদ জিয়া এ দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা বোধ জাগিয়ে তোলা মানুষের নিবেদিত প্রাণ
লেখক ও সাংবাদিক

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.