শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:০৯ অপরাহ্ন

খবরের শিরোনাম:
ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদরে যারা শাহাদাত বরণ করেন জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ: প্রতিমন্ত্রী মাধবপুর প্রেসক্লাবের ইফতার ও দোয়া মাহফিল হবিগঞ্জে র‌্যাব এর অভিযানে বিপুল পরিমাণ ট্রেনের টিকেটসহ চক্রের ৩ জন গ্রেফতার সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেনের দাফন সম্পন্ন আজমিরীগঞ্জে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় শালিকে কোপাল দুলাভাই শহীদ মিনার নয়, যেন ডেটিং পার্ক! নিরস্ত্র ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর বালিচাপা দিল ইসরায়েলি সেনারা একনেকে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন পরিবেশদূষণে দেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু

সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার বৈচিত্রতা ও সামাজিক মূল্যবোধ

মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ
সময়টা ছিল ২০১২ সাল, প্রাতিষ্ঠানিক কর্তব্য পালনে যাত্রা শুরু করি পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায়, যদিও ইতিপুর্বে যুক্তরাজ্য ও এর পার্শ্ববর্তী দেশের তথাকথিত অতিউন্নত পরিবেশ সম্পর্কে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ছিল। মুলত সংস্কৃতি এবং সভ্যতা সম্পর্কে চিন্তার পরিধির ব্যপ্তি তানজানিয়ার নাতিশিতোষ্ণ অঞ্চলের সুবিশাল প্রাকৃতিক পরিবেশ আর অধিবাসিদের বিচিত্র ইতিবাচক মনোভাব থেকেই শুরু হয়, যা পরবর্তিতে ঐ অঞ্চল সম্পর্কে ইতিপুর্বে ভিন্ন প্রকৃতির নেতিবাচক ধারনায় আবদ্ধ (Stereotyped) মানসিকতাকে পরিবর্তন করে দেয়। সাধারণত আফ্রিকা বলতে পিছিয়ে পড়া ক্ষুধামন্দায় আবৃত এক করুণ চিত্রই আমাদের মানসপটে দৃশ্যমান হয়, কিন্তু এই চিত্র আফ্রিকার সব অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য নয়। যখন ২০১৪ সালে স্থায়ীভাবে কর্মদায়িত্ব পালনে তানজানিয়ার বানিজ্যিক রাজধানী দারএস্সালামের বিমানবন্দরে অবতরণের সময় উড়োজাহাজের জানালা দিয়ে রাশি রাশি মেঘের আড়ালে নিগাঢ় সবুজ গাছ গাছালি আর উঁচু উঁচু পাহাড় পর্বতের অতি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখছিলাম সত্যিই বিমোহিত না হয়ে পারছিলামনা। তবে বেশিই বিমোহিত হয়েছিলাম আফ্রিকা মহাদেশের সবছেয়ে উঁচু এবং পৃথিবীর ৬ নম্বর উঁচু পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট কিলিমানজারুর সুস্নিগ্ধ শীতল বিস্তীর্ণ চূড়া দেখে, যার চূড়াটি দেখতে ছিল ধবলসাদা তুষার দিয়ে আবৃত অতী মনমুগ্ধকর বিশাল পৃষ্ট, যা দেখে মনে হচ্ছিল কেউ সাদা রেশমী চাঁদর দিয়ে আদর করে বিচিয়ে রেখেছে তার গায়ে। যখন উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরে অবতরণ করে নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হলো তখন দুনিয়ার সব দুশ্চিন্তা ও শংকা মাথায় ভর করছিল- এই ভেবে যে, সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশ, অচেনা মানুষজন, অচেনা ভাষা, অপরিচিত আচরণ, এসমস্তকিছুকে রপ্ত করে সবকিছুকে জয় করা যুদ্ধ জয়ের চাইতে কম নয়। বিমান বন্দরের অভ্যন্তরে অভিবাসন (Immigration) অফিসের সামনে আসতেই একটু সাহস ফিরে পেলাম, অতি ভদ্রোচিত শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের মাধ্যমে একজন অভিবাসন কর্মকর্তা আমাকে সম্বোধন করে বললেন “Welcome you to Tanzania (আপনাকে তানজানিয়ায় স্বাগতম”, “How can I help you (আপনাকে কি করে সাহায্য করতে পারি) সবার কাছ থেকে ইতিবাচক আচরণে কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবেশটাকে নিজের মত করে ভাবতে শুরু করলাম। কালো কালো মানুষগুলো প্রথম দেখাতে ভয়ই লাগছিল কিন্তু তাদের ভদ্রশোলভ কথাবার্তা আর ইতিবাচক আচরণ একটার পর একটা শংকা দূর করে দিচ্ছিল।
শুরু হলো পেশাজীবনের কঠিন অধ্যায়। সমস্ত প্রতিকুল পরিবেশে একটা সংস্থার কার্যক্রমের সুত্রপাত আর একে প্রতিষ্ঠিত করার অক্লান্ত প্রচেষ্টা সামগ্রিক অভিজ্ঞতার ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করছিল। এভাবেই বিচিত্র মানব সমাজের অগণিত অভিজ্ঞতা দিয়ে মানবজীবন পরিপূর্নতা লাভ করে। কখনো জীবনের চলার পথ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে অভিজ্ঞতা আসে, কখনো অন্যের প্রয়োগভংগি দেখে, আবার চিন্তাভাবনার সৃজনশীলতার যথার্থ প্রয়োগ থেকে মানুষ অভিজ্ঞ হয়ে উঠে। অভিজ্ঞতালব্ধ এসমস্ত জ্ঞান আর যোগ্যতা কেউ ইতিবাচকভাবে কাজে লাগায়, কেউ নেতিবাচকভাবে লাগায় আবার কেউ কাজে লাগানোর সুযোগই পায়না। তবে সমস্ত প্রায়োগিক যোগ্যতা আসে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মেধা মননশীলতা থেকে। যেভাবেই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান আসুকনা কেন এ জ্ঞানকে পরাজিত করা অনেক দুস্কর। আচরণে এই ইতিবাচক জ্ঞান সংযুক্তির মাধ্যমে মানবজীবন প্রস্ফুটিত হয় আবার অপব্যবহারের কারণে সংকুচিত হয়, সামাজিক মূল্যায়নে এটাই আমার উপলব্ধি।
সৃষ্টিজগতের সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি হলো মানুষ। মানুষের জন্ম, কাঠামো, অবয়ব, শারিরীক গঠন, রং এসব সৃষ্টকর্তার নিয়মেই হয় কিন্তু মানবজীবনের স্বার্থকতা এবং সফলতা আসে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা আর এর যথোপযুক্ত প্রয়োগের মাধ্যমে। বস্তুতঃ সবকিছুর উর্ধ্বে মানব আচরণের প্রকৃষ্ট উপমা ও শিষ্টাচারের মধুর্য্যতা আফ্রিকা মহাদেশের এই দেশটির সামগ্রিক আনুষ্ঠানিকতা ও নাগরিকদের সভ্য আচরণে পরিলক্ষিত হয়, যা অতী সভ্যতার দাবিদারদের থেকেও এধরনের অনুশীলন পাওয়া দুস্কর। সর্বোপরি একটা জাতিকে শুধু অবয়বগত কৃষ্ণবর্ণ আর সরলতার কারণে কতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এদেশের প্রতিটি প্রত্নতাত্বিক ও সামাজিক কাঠামো এর প্রমাণ বহন করে।
কাজের অংশ হিসেবে দেশের প্রতিটা স্থান আর অবকাঠামো সম্পর্কে সুস্পস্ট ধারনা রাখা ছিল দায়িত্বের একটা বড় অংশ, তাই প্রতিনিয়ত ভ্রমণ করতে হতো বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রতিটা অঞ্চলকেই অন্য অঞ্চলের চাইতে প্রাকৃতিকভাবে ভিন্ন ও বৈচিত্র মনে হতো, তাই প্রতিটা এলাকা থেকেই নতুন অভিজ্ঞতা নেয়ার অবারিত সুযোগ থাকত, কোন কিছুই বিরক্তিকর মনে হতোনা। প্রাথমিকভাবে অনেক ছোট ছোট সমস্যাগুলো পাহাড়সম মনে হতো, কিন্তু সময়ের আবর্তে পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে খাপ খেয়ে মানুষের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করার সুবাদে এখন কোনকিছুই অতী চ্যালেঞ্জিং মনে হয়না। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহজ সরল চলাফেরা এবং তাদের অভ্যাসগতভাবেই একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানোর সংস্কৃতি নিজেকে তাদেরই একজন মনে হয় আর বাসিন্দারাও আপনজনের বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।
আয়তনে দেশটি ৯৪৫,০৮৭ বর্গকিলোমিটার যার অধিকাংশ অধিবাসীদের ভাষা সোয়াহিলি, যদিও অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ইংরেজী অন্তর্ভূক্ত আছে।বাসিন্দাদের প্রধান খাবারের তালিকায় আছে উগালি (ভুট্টার মন্ড), কাসাবা (এক ধরনের আলু), ভাত ও বিভিন্ন ধরনের পোরিজ।
এপর্যায়ে তানজানিয়ার বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও সামাজিক সৌন্দর্যের কিছু দিক তুলে ধরা যাক-
দেশটির অধিকাংশ এলাকাই পাহাড়ী, মানুষগুলো গুচ্ছ গুচ্ছ ভাবে বাস করছে বিভিন্ন সুবিধাজনক জায়গায়। বিশেষ করে প্রকৃতিগতভাবে যেখানে ফলমূল আর ফসলাদির গাছগাছালি বেশি পরিমানে আছে ঐ এলাকাতেই মানুষের বসবাসের পরিমান একটু বেশি। প্রায় সবধরনের ফল ও শস্যাদি এদেশে দেখতে পাওয়া যায়, ফলের মধ্যে আম, জাম, কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা, নারিকেল, ছবেদা, তীন, জায়তুন, ডালিম, পেঁপে, পেয়ারা, আপেল, আংগুর প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। তবে এখনো লিচুর দেখা পাইনি। আম ফলটি বারোমাসই পাওয়া যায়, যদিও স্বাদের দিক থেকে অতটা বেশি সুস্বাদু মনে হয়নি।তবে অন্যান্য নাম না জানা অনেক ফলমূল আছে যা স্থানীয় বাসিন্দারা বনান্চল থেকে সংগ্রহ করে। তবে প্রচুর পরিমানে মধু পাওয়া যায়, কেউ বন থেকে সংগ্রহ করে আবার কেউ বানিজ্যিকভাবে উৎপন্ন করে।
ভ্রমনে বের হলে দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে চোখে পরবে বিশাল বিশাল পাহাড় স্তুপ স্তুপ মেঘমালা তার গাঁয়ে আঁচরে পরে আছে। লম্বা উঁচু নিচু রাস্তাই চিনিয়ে নিয়ে যাবে গন্তব্যে। বনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে জীরাফ আর জেব্রা রাস্তা ক্রস করবে, হরিনগুলো এক লাফে রাস্তা পার হয়ে চলে যাবে বনের ভেতর। হাতীর দলগুলো রাস্তা আটকানোর ফন্দি আঁটে, এক্ষেত্রে গাড়ীর স্টার্ট বন্ধ করে নিরিবিলি দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা আক্রমণ করেনা। মাঝে মাঝে বানর আর হনুমানের দল পিছু নেয়, বনগরু আর বিশাল আকৃতি মহিশগুলো ঘাস আর লতাপাতা খেতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে ময়ুর আর বনমুরগ চোখে পরে, এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের পাখীর কলকাকলিতে প্রকৃতির নিখুঁত সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। মূলতঃ প্রাকৃতিক সম্পদে সয়ংসম্পুর্ণ দেশটির বিশাল এলাকাজুরে অবারিত সবুজ মাঠ আর সাইসেল (এক ধরনের আঁশ জাতীয়) গাছের দিগন্তজুড়া গাঢ় সবুজ বাগান চোখ জুড়িয়ে যায়। অনেক দূর থেকেই ভেসে উঠে মাউন্ট কিলিমান্জারুর তুষার আবৃত চূড়া মেঘের স্তর ভেদ করে একদম আকাশের দিকে উত্থিত। কিলিমান্জারো পর্বতের আশেপাশের বিশাল অঞ্চল সংরক্ষিত বন যাকে সাফারি পার্ক হিসেবে গণ্য করা হয়। অসংখ্য পশু পাখী আর বিচিত্র ধরণের বৃক্ষরাজীতে পরিপূর্ণ বনাঞ্চলটি পাহাড় আর লেইকের সমন্বয়ে পরিপূর্ণরূপে সজ্জিত একটি আকর্ষনীয় সাফারি পার্ক যা পর্যটকদের মোহিত করে। কিলিমান্জারো পর্বতের ভেতরে রয়েছে বিপূল প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার, এর মধ্যে সবছেয়ে আকর্ষণীয় এবং অতী মূল্যবান খনিজ সম্পদ হলো তানজানাইট ডায়মন্ড (হীরক)। খনিজ সম্পদ সংগ্রাহকেরা পর্বতের আশেপাশে খনন করে তানজানাইট হীরক সংগ্রহ করেন। তানজানাইট ডায়মন্ড (হীরক) এর উদ্ভাবনে রয়েছে অনেক লম্বা ইতিহাস। অন্য পর্বে এর বিস্তারিত আলোচনা হবে।
তানজানিয়ারই একটি স্বায়ত্ব শাসিত দ্বীপ জান্জিবার। দ্বীপটি ২৪৬১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের, প্রায় ৮ লাখ জনসংখ্যার বসবাস। জান্জিবারকে “স্পাইসল্যান্ড” ও বলা হয়ে থাকে, এজন্য যে এখানে প্রচুর পরিমানে মসলা পাওয়া যায়। এর মধ্যে এলাচি, দারুচিনি, লং, গুলমরিচ, আদা, লেমনগ্র্যাস অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন- চিনা বাদাম, পেস্তাবাদাম, কাজু বাদাম, আখরোট, হাজেলনাট, আলমন্ড ইত্যাদি বিখ্যাত। অন্যদিকে তান্জানিয়ার বিশেষ আকর্ষন জান্জিবার দীপপুন্জের অসাধারণ নীল পানি মনের মধ্যে নিয়ত ঢেউ খেলে, বার বার আকর্ষণ করে টেনে নিয়ে যায়। স্থানিয়ভাবে জান্জিবারের ৯৯% বাসিন্দারা মুসলিম হওয়াতে তান্জানিয়ার মূল ভূমি থেকে তাদের সংস্কৃতি অনেকটাই ভিন্ন। জান্জিবারের মূল আকর্ষণ হলো- সেখানকার সমুদ্রের জলরাশি অতী পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ, বিচিত্র ধরণের নীলাভ আভায় মিশ্রিত পানির স্তরভেদে একেক রংয়ের নীলের সৌন্দর্য্য প্রকাশ করছে। প্রথম দেখাতে অবিশ্বাস্যই মনে হতে পারে, এত সুন্দর অকৃত্রিম ভিন্ন ধরণের নীল রং পানির স্তরে স্তরে সাজানো টলটলে জলরাশি আর মৃদুমন্দ ঝিরিঝিরি বাতাস অসম্ভব ভাল লাগায় মনটাকে প্রশান্ত করে দেয় যা প্রত্যক্ষ উপভোগ করা ব্যতিত উপলব্ধি করা দুস্কর।
এদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্রের পাশাপাশি অধিবাসীদের আচার ব্যবহার ও শিস্টাচারের সৌন্দর্য্যও দেশটির সংস্কৃতির বিশেষত্বকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এদেশের শিষ্টাচারের রীতিতে সাধারণত যে কোন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ বা সম্বোধণের পূর্বে ধর্মীয় অথবা প্রথাগত অভিবাদন জানিয়ে কথাবার্তা শুরু করতে হয়, যা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিষয়াদির মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনা পরিবার পরিজন সন্তানাদি কাজকর্ম সুখ দুঃখসহ সবকিছুর খবরাখবর নেয়া হয় কুশলাদি জানানোর মাধ্যমে। যেকোন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে আর্থিক অনুদান দিয়ে সহায়তা করা একটি স্বাভাবিক রীতি, তবে খুবই গুরুত্বসহকারে প্রতিবেশী ও আত্নীয় স্বজনের মধ্য থেকে কেউ মারা গেলে মৃতের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেয়ার প্রচলনটি সৌজন্যমূলক ও ইতিবাচক সামাজিক বন্ধনের সহাবস্থান প্রকাশ করে। অনেকগুলো উপজাতীয় গোত্র এবং সামাজিক সম্প্রদায়ের মিশ্রণে তানজানিয়ার সামাজিক কাঠামো গঠিত। গোত্রগুলোর সামাজিক অবস্থান এবং সংস্কৃতি ভিন্ন হলেও তাদের একে অপরের মাঝে বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়নি।
তবে জনসাধারণের আচরণের সবচাইতে নেতিবাচক দিকটি হলো যথেস্ট শারীরিক ও মানসিক সামর্থ থাকা সত্বেও নিজ দায়িত্বে কাজ করার প্রতি আগ্রহ ও আন্তরিকতা কম, তবে কাজের ধারা দেখিয়ে দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে সুচারুভাবেই কাজের ফল পাওয়া যায়।
সামগ্রিকভাবে সামাজিক সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র, আর প্রাকৃতিক প্রাচুর্য্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো তানজানিয়া।একটি জাতীর সহজ সরল জীবন যাপন, উন্নত মূল্যবোধ, ভদ্রতাপূর্ণ সংস্কৃতি আর সীমাবদ্ধ সক্ষমতায় সুখী শান্তিপূর্ণ সাম্প্রদায়িক সহাবস্থান থেকে আগত প্রজন্মের জন্য রয়েছে শিক্ষা। ইতিবাচক দৃষ্টিভংগির মাধ্যমে যে কোন জাতীর শিষ্টাচারের উন্নত দিকগুলো গ্রহন করে নেতিবাচক দিকগুলো বর্জন করে আগত প্রজন্মকে সুশীল জাতী হিসেবে গড়ে উঠার সুস্পষ্ট পন্থা দেখানো যায় আর প্রকৃতির অসাধারণ সৌন্দর্য্য ও প্রাচুর্য্যকে সৃজনশীল পন্থায় ব্যবহার করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে জাতীয় টেকসই উন্নয়ন তরান্বিত করা যায়। এছাড়াও উন্নত জাতী গঠনে শিষ্টাচার ও প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত উন্মুক্ত জ্ঞান ও এর অনুশীলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.