শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:২২ অপরাহ্ন

সুনামগঞ্জ ধর্মপাশায় বাঁধের ৫০ফুট জুড়ে ফাটল

ধর্মপাশা সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের সামনে থাকা গুরমার বর্ধিতাংশ হাওরের শালদিঘা ফসলরক্ষা বাঁধের ১২৬নং প্রকল্প কাজটি যেনতেন ভাবে করার অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় গত শনিবার (৯এপ্রিল) সকালে ওই বাঁধের প্রায় ৫০ফুট স্থান জুড়ে ফাটল দেখা দেয়। ওই ইউনিয়নের আটটি গ্রামের তিন শতাধিক মানুষ ওইদিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কাজ করে বাঁধটি ফাটল স্থান মেরামত করেছেন। এই বাঁধটি মেরামত করায় এ উপজেলার গুরমার বর্ধিতাংশ হাওর ও গুরমা হাওরের ৫০০হেক্টর বোরো জমির ধান ফসলডুবির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল, :ধানকুনিয়া, ঘোড়াডোবা, জয়ধনা, সোনামড়ল, রুইবিল, গুরমা ,গুরমার বর্ধিতাংশ,কাইলানী এই হাওরগুলো সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন। পিআইসির সংখ্যা ১৫৮টি। কাজের বিপরীতে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় ৩০কোটি ৩৩লাখ ৪০হাজার টাকা। এর মধ্যে পিআইসিদের কে গড়ে বরাদ্দের শতকরা ৫৫ভাগ টাকা দেওয়া হয়েছে। উপজেলার গুরমার বর্ধিতাংশ হাওরের শালদিঘা ফসলরক্ষা বাঁধটির ১২৬নম্বর প্রকল্প কাজের দৈর্ঘ ৫৩১মিটার। এই কাজের জন্য বরাদ্দ ধরা হয় ১৭লাখ ৪০হাজার ৪২১টাকা। বরাদ্দের ৫৫ভাগ টাকা দেওয়া হয়েছে। এই বাঁধের প্রকল্প কাজটি জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে শুরু করা হয়। প্রকল্প কাজে পাউবোর নীতিমালা না মেনে পিআইসির কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব মিলে যেনতেন ভাবে ওই ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন।

গতকাল শনিবার (৯এপ্রিল) সকাল সাতটার দিকে এই বাঁধের ১২৬নম্বর প্রকল্প কাজে ফাটল দেখা দেয়। ধীরে ধীরে ৫০ফুট স্থান জুড়ে ফাটলের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের কাছ থেকে খবর পেয়ে সকাল আটটার দিকে সেখানে মোটরসাইকেলে নিয়ে ছুটে যান উপজেলার দক্ষিণউড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক বিপ্লব বিশ্বাস (৩২) ও বাসাউড়া গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক সুরঞ্জন সরকার (৪৫)। তাঁরা দুজন মিলে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করার ব্যবস্থা করেন। খবর পেয়ে উপজেলার বংশীকুন্ডা , কাউহানী, নিশ্চিন্তপুর, বাসাউড়া ,হাতপাটন ,নোয়াবন্দ,সানুয়া,মাকরদী গ্রামের তিনশতাধিক মানুষজন বাঁশ,কোদাল,বস্তা নিয়ে সেখানে জড়ো হয়ে ফাটল মেরামতের কাজ শুরু করেন। ফসলরক্ষা বাঁধে ফাটল ধরেছে এমন খবর পেয়ে ওইদিন বেলা একটার দিকে সেখানে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো.মুনতাসির হাসান। ওইদিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আটগ্রামের মানুষজন কাজ করে বাঁধের ফাটল মেরামত করেছেন।

গুরমা বর্ধিতাংশ হাওরের ১২৬নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আবদুল কদ্দুস বলেন, বাঁধের কাজটি সঠিকভাবেই করেছি। বাঁধের নীচের অংশ একটি কুড় থাকার কারণে পানি ঢুকে এটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে।

বংশীকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক শামিউল কিবরিয়া বলেন, এই হাওরে আমাদেরও জমি আছে। ওই বাঁধটির ফাটল মেরামত হলেও স্থানীয় শতাধিক লোকজন পালা করে বাঁধের অন্য অংশ যাতে কোনোরকম ক্ষতি না হয় সে জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। এ কাজ ফসলউঠার আগ পর্যন্ত চলমান থাকবে।

বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ ( ইউপি) চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ বলেন, এখানে ফসলরক্ষা বাঁধের হাইট,স্লোপ,কমপেকশন কোনো কিছুই সঠিকভাবে করা হয়নি। ফলে এই বাঁধটিকে ফাটল দেখা দিয়েছিল। এই্ ইউনিয়নের আটটি গ্রামের মানুষজনকে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে ফাটলটি মেরামত করা হলেও এখনো আমরা শতভাগ শঙ্কামুক্ত নই।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ও ধর্মপাশা উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও র্পযবেক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব মো.ইমরান হোসেন বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। বাঁধের সন্নিকটে একটি কুড় ( গর্ত) রয়েছে। এ কারণে বাঁধের নীচ দিয়ে পানি ছুয়ে ছয়ে যাওয়ায় এটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধটিতে মেরামত কাজ চলমান আছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.নাজমুল ইসলাম বলেন, এই বাঁধটি মেরামত করায় এখানকার গুরমা ও গুরমার বর্ধিতাংশ হাওরের ৫০০০হেক্টর বোরোজমির ধান ফসলডুবির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.মুনতাসির হাসান বলেন, হাওরের বোরো ফসলরক্ষায় বাঁধ মেরামত কাজে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.