শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০১ পূর্বাহ্ন

খবরের শিরোনাম:
মৌলভীবাজারে অভিযান চালিয়ে ১৩ জুয়ারি আটক সারাদেশে ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কেন শোনানো হয়নি তার জন্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন এমপি চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহবান তরুণদের প্রতি-এমপি আবু জাহির দুর্নীতিমুক্ত জেলা পরিষদ গঠনের ঘোষণা দিলেন আলেয়া আক্তার ওয়ারিশান ও এসএ খতিয়ান জ্বালিয়াতি বিরুদ্ধে চার্জশীট প্রদান করল পিবিআই দুর্ঘটনা কবলিত পিকআপ উদ্ধারের সময় বাস চাপায় নিহত ২ হবিগঞ্জে সড়কের পাশ থেকে তরুণীর মরদেহ উদ্ধার ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপার ঘটনায় নবদম্পতিসহ একই পরিবারের ৬ জন নিহত

হবিগঞ্জে চোখে পড়ল গ্রাম বাংলার বিলুপ্ত প্রায় করাতি পেশা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ এক সময় হবিগঞ্জে বানিয়াচঙ্গের যেকোনো পাড়া/মহল্লায় গেলেই চোখে পড়তো হাত করাত দিয়ে করাতিদের গাছ চিড়ার দৃশ্য। সনাতনী পদ্ধতিতে করাতিদের গাছ কাটার সেই দৃশ্য এখন আর চোখে পড়েনা বললেই চলে।গাছগাছালিতে ভরপুর বানিয়াচঙ্গে একসময় করাতি পেশায় প্রচুর লোক নিয়োজিত ছিলেন। তারা শুধু এলাকায় নয়, এলাকার বাহিরে গিয়েও করাতির কাজ করতেন। কারণ তাদের চাহিদা ছিলো প্রচুর।কালের বিবর্তনে গাছ চিড়ায় যান্ত্রিকায়ন বেড়ে যাওয়ায় জীবন-জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করতে বাধ্য হন অনেক করাতি। ফলে বর্তমানে হাত করাত দিয়ে বানিয়াচঙ্গে গাছ চিড়ার দৃশ্য চোখে পড়েনা বললেই চলে।এরকম একটি দুর্লভ কাজ ৩ জন মিলে করতে দেখা গেলো বানিয়াচং বিএডিসি অফিসের দক্ষিণের পুকুরের পূর্ব পাড়ে ১নং বানিয়াচং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান’র পৈত্রিক নয়াবাড়িতে। বড় একটি কড়ই গাছ তারা চিড়ছেন।

গাছের উপর দাড়িয়ে একজন করাত টেনে উঠাচ্ছেন এবং নিচ থেকে দু’জন টেনে নামাচ্ছেন। এভাবে চিড়ছেন গাছ। তাদের সাথে আলাপকালে জানা গেলো, বানিয়াচঙ্গের মতো একসময় সারা বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে করাতি সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করতেন। তাদের পেশাই ছিলো গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করে গাছ কাটার কাজ নেয়া। সে সময় গাছ কাটতে হলে করাতিদের অপেক্ষায় থাকতেন গৃহস্থরা।

বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে লাভজনক অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় করাতি পেশা আজ বিলুপ্ত প্রায়। তবুও জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে এখনো দেশের কোনও কোনও অঞ্চলে এ পেশাকে ধরে রেখেছেন কেউ কেউ। নব্বই দশকের আগেও করাতিদের গাছ কাটার দৃশ্য দেখতে পাড়ার ছেলেরা ভিড় করতেন।গানের সুরে তাল মিলিয়ে তারা করাতিদের কাজে হাত দিতেন। আর করাতিরা সকাল সকাল গুড়-পান্তা খেয়ে কাজে নেমে পড়তেন। ওই সময় করাতি দলের তিন সদস্য গাছ কাটায় নিয়োজিত থাকলেও অন্যজন ব্যস্ত হয়ে পড়তেন রান্নার কাজে। এভাবে পুরো শুষ্ক মৌসুম কাটিয়ে দিতেন তারা।

জানা যায়, সে সময় করাতিরা মাটিতে গর্ত করে বা কাঠের কাঠামো তৈরি করে করাত চালিয়ে গাছ কাটতেন। এই ধরনের করাত চালাতে উপরে আর নিচে অন্তত দুই বা ততোধিক লোকের প্রয়োজন হয়। হাতলযুক্ত করাত দিয়ে উপর-নিচ টেনে একটি গাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের কাঠ চিড়ানো হয়। তৈরিকৃত বিম আর তক্তা দিয়ে ঘরের ছাউনি ও নানা রকম আসবাবপত্র তৈরি করা হয়।সে সময় কাঠ চিড়তে আকার ও প্রকারভেদে বর্গফুট হিসেবে মজুরি নিতেন করাতিরা। একটি মাঝারি সাইজের গাছ কাটা ও চিরানোতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ পড়তো। আর তাতে সময় লাগতো তিন দিনেরও বেশি। বর্তমানে আধুনিকতার উৎকর্ষে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এক সময়ের করাতি।

গ্রামে এখন ঢেউ লেগেছে যান্ত্রিক করাতের। বিভিন্ন হাট-বাজারের করাতকলে অতি কম খরচে অল্প সময়ের মধ্যে চাহিদা মাফিক কাঠ চিড়ানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে আসবাবপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় যান্ত্রিক করাতকলের কদর বেড়েছে। বানিয়াচঙ্গে বর্তমানেও কয়েকজন করাতি পেশায় যুক্ত রয়েছেন।তাদের দলনেতা হলেন বাবুর বাজার এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা অনীল দাস ওরফে রমাকান্ত দাস। তিনি জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে এ পেশা। মাঝে মধ্যে বড় গাছগুলো যখন মেশিনে তোলা কষ্টকর হয়, তখন আমাদের প্রয়োজন হয়; আমরা এগুলোকে ছোট সাইজ করে দেই।

 

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.