বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৬ অপরাহ্ন

১২ বছর পর বাবাকে পেয়েও কাছে যেতে পারল না ছেলে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ হেলাল হোসেন। যিনি একাধিক হত্যা মামলার আসামি। তবে নিজেকে আড়াল করতে ধারণ করেন ছদ্মবেশ। নামও বদলে ফেলেন। বিচ্ছিন্ন হন পরিবার থেকেও। বাউল বেশে ঘুরে বেড়ান দিগ্বিদিক। কিন্তু এত রূপ বদলালেও ফাঁকি দিতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ। ধরা পড়েছেন র‌্যাবের জালে। গ্রেফতারের পর ঢাকায় আনলেও তাকে বগুড়া থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব।

গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় হেলালকে বগুড়া সদর থানায় হস্তান্তর করে র‍্যাব-১২। পরে বগুড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিস্কৃতি হাগিদকের আদালতে হাজির করা হয়।

বগুড়ার কোর্ট ইন্সপেক্টর সুব্রত কুমার জানান, হেলালকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। পরে তাকে প্রথমে ওই আদালতের দোতলার হাজতখানায় নেয়া হয়। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা করতে যান ছেলে হেদায়েতুল ইসলাম শিমুল, মা বিলকিস বেওয়াসহ নিকটাত্মীয়রা।

বাবাকে দেখতে আসা হেলালের ছেলে শিমুল জানান, তার জন্ম ২০০২ সালের এপ্রিলে। তার বয়স যখন ৮-৯ বছর তখন শেষবার তার বাবাকে দেখেছিলেন। এরপর আর দেখেননি। তবে কয়েকদিন ধরে তার বাবাকে টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে বলে তাকে জানানো হয়।

কারাগারে পাঠানোর আগে বাবার সঙ্গে দেখার জন্য হাজতখানার বারান্দায় অপেক্ষমাণ শিমুল বলেন, আব্বাকে এখনো সরাসরি দেখিনি। এ কয়েকদিন শুধু টেলিভিশনেই তাকে দেখেছি। এছাড়া আব্বার কোনো স্মৃতিও আমার কাছে নেই।

শহরের ফুলবাড়ী কারিগরপাড়া বাসিন্দা হেলাল। হেলালের মা বিলকিস বেওয়া জানান, বহু বছর হলো ছেলের সঙ্গে তার কোনো দেখা নেই। সর্বশেষ কবে দেখা হয়েছে সেটিও তিনি মনে করতে পারছেন না। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে হেলাল দ্বিতীয়।

হেলাল জানান, তিনি ২০১৫ সালে চুরির একটি মামলায় জামিন নিয়ে বগুড়া ছেড়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কাজ করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন বলে দাবি করেছেন। এছাড়া মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎ হত্যা মামলা ছাড়া তার আর কোনো মামলা নেই বলেও দাবি তার।

কথা বলার একপর্যায়ে তিনি বলেন, আমার মাথা ঠিক নেই। আপনি চলে যান। আমার ছেলে ও মাসহ আত্মীয়-স্বজনরা এসেছে তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। তবে কী কথা হয়েছে সেটি না বলেই দ্রুত আদালত চত্বর ত্যাগ করেন হেলালের ছেলে, মা, বউসহ আত্মীয়-স্বজনরা।

নিজেকে আড়াল করতে ২০ বছর ধরে বাউল ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন বিভিন্ন হেলাল। বুধবার কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন থেকে হেলালকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

র‍্যাব জানায়, হেলালের বিরুদ্ধে যে তিনটি হত্যা মামলা রয়েছে, সবগুলোই বগুড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। তিনি বগুড়ায় একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০১ সালে বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তিনি। এছাড়া ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার আসামি হেলাল।

২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় করা একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করা হয়। ২০০০ সালে বগুড়া শহরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে হেলালের বাম হাতে জখম হয়। এতে তার বাম হাত পঙ্গু হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি এলাকায় হাত লুলা হেলাল নামেও পরিচিত ছিলেন।

চুরির মামলায় ২০১৫ সালে জামিন পেয়ে কৌশলে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। এরপর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম যান। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর ছদ্মবেশ ধারণ করে সিলেটে কিছুদিন থাকেন হেলাল। বিভিন্ন সময় তিনি নাম-পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে থাকতেন। প্রায় সাত বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারি জীবনযাপন করেন।

বগুড়া কারাগারের জেলার এসএম মহিউদ্দীন হায়দার জানান, হেলালকে শুক্রবার সন্ধ্যার পরপরই কারাগারে আনা হয়। তিনি এখন এ জেলের একজন বন্দি।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.