বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৩ অপরাহ্ন

২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

মনোনয়পত্র বৈধ হওয়ার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একক এ প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন নির্বাচনী কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে নির্বাচনী কর্তার কাযালয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি। সোমবারই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য এই পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ থেকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শুরু করেন মো. আবদুল হামিদ। একই বছরের ২২শে এপ্রিল তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২৪শে এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মো. আবদুল হামিদ। সেই অনুযায়ী, তার ৫ বছরের মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে।

সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটার। বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থী ছিল না।

মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনের জন্য সংসদের সভা বা ভোটের প্রয়োজন হয়নি।

এর আগে রাষ্ট্রপতি পদে দলের হয়ে সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাকে নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দপ্তরে যান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তার সঙ্গে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সেখানে মনোনয়ন ফরম জমা দেন তারা। তা যাচাই-বাছাই শেষে সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ফলে তিনিই হলেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদেরও সদস্য।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী সাহাবুদ্দিন একাধারে আইনজীবী, অধ্যাপক, সাংবাদিক ও বিচারক ছিলেন।

৭৫’র পরে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় ২০ আগস্ট সামরিক আইনের ৭ ধারায় আটক হয়ে প্রায় তিন বছর কারাগারের কাটিয়েছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।

তার জন্ম ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায়। তার বাবা মরহুম শরফুদ্দীন আনসারী এবং মা মোসাম্মৎ খায়রুন্নেছা।

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। ছাত্রাবস্থায় ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীন বাংলা ছাত্রপরিষদের পাবনা জেলার নেতা হিসেবে পাবনায় স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারীদের অন্যতম মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পাবনা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৭১ সালে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ১৯৯৫ সালে জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। কর্মজীবনে তিনি সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও জেলা জজ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যাপকও ছিলেন তিনি।

অধুনালুপ্ত বাংলার বাণী পত্রিকার পাবনা জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। এছাড়া প্রেষণে আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। তখন সরকারের কাছে এ বিষয়ে ১৩৯৭ পৃষ্ঠার রিপোর্ট পেশ করেছিলেন তিনি।

তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে সরকারের যুগ্ম সচিব থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তাদের একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.