শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৬ অপরাহ্ন

৯জন নারীর কাঁধেই হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবসে প্রশাসন ক্যাডারে ৯ জন সফল নারী সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। হবিগঞ্জ জেলার সর্বোচ্চ নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইশরাত জাহান। আর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (এডিএম) দায়িত্বে রয়েছেন প্রিয়াংকা পাল নামে আরেক নারী।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আরও ৩ নারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করছেন। আর জেলার ৯ উপজেলার চারটির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন ৪ নারী।

প্রকৃতপক্ষে হবিগঞ্জের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের অধিকাংশই পালন করছেন নারীরা। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে তাদের দক্ষতা ও সততাও পুরুষের চেয়ে ঈর্ষণীয়।

হবিগঞ্জের দ্বিতীয় নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইশরাত জাহান। তার আগে সাবিনা আলমকে প্রথম নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে পায় হবিগঞ্জবাসী।

২২তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা ইশরাত জাহান ২০২১ সালের ৬ মার্চ হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি যখন জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন করোনার মারাত্মক প্রকোপ ছিল। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

তারপরও তিনি সেই ক্রান্তিকাল সুন্দরভাবে অতিক্রম করেছেন। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন দুর্যোগ মুহূর্তে সফলতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
৩১তম বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে প্রিয়াংকা পাল হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (এডিএম) দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর এই পদে যোগদান করেন।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন আয়েশা আক্তার নামে আরেক নারী। ৩৪তম বিসিএস ব্যাচের এই কর্মকর্তা ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর ওই পদে যোগ দিয়েছিলেন।

হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নাহিদা সুলতানা দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ৩৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা। এ বছরের ৯ জানুয়ারি এ পদে যোগদান করেন।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন নাজরাতুন নাঈম। তিনি বিসিএস ৩৪ ব্যাচের কর্মকর্তা।

বিসিএস ৩৪ ব্যাচের কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন ফাতেমা রয়েছেন জেলার বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে। তিনি ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে রয়েছেন ৩৮তম বিসিএস কর্মকর্তা মোছা. তাসনিম জাহান। তিনি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আইসিটি শাখা, শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা, পর্যটন সেল, করোনা সেল, শুদ্ধাচার সংক্রান্ত দপ্তরের দায়িত্বে পালন করছেন।

সুস্মিতা সাহা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ৪০তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জে যোগদান করেন।
একই ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা সুমি রানী বল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের লাইব্রেরি ফরম ও স্টেশনারি শাখার দায়িত্বে রয়েছেন। এই নারী কর্মকর্তা ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর যোগ দেন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, আমার মনে হয় প্রত্যেক মানুষ বিভিন্নভাবে নিজেকে বিভিন্ন গণ্ডিতে সফল বলে মনে করেন। কেউ হয়ত চিন্তা করেন একটা পেশাগত জীবনে তার নিজের একটা আকাঙ্ক্ষা থাকে, সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলে নিজেকে সফল মনে করেন।

আমরা যারা প্রশাসনে আছি আমরা এভাবে চিন্তা করি, আমরা সবসময়ই বলি জনমুখী প্রশাসন, তাই আমরা যখন দেখি আমাদের সেবায় মানুষ সন্তুষ্ট, জনগণ সন্তুষ্ট, তাহলে আমরা মনে করি সফলভাবে সেবা দিতে পেরেছি। এখানে নিজেকে সফল বলে মনে করি।

ইশরাত জাহান নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তিনি সবসময় আমাদের নারী সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমাদের কর্মজীবনে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনেও যদি বলি নারীর ক্ষমতায়ন, নারীকে কর্মে নিযুক্ত করা, প্রতিটা ক্ষেত্রে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

তার কারণেই আসলে আমরা আজকে জেলা প্রশাসকসহ বড় বড় পর্যায়ে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের দেশের মেয়েরা। সেই পরিবেশটা তিনি তৈরি করে দিয়েছেন। এখন একজন মেয়ের যেকোনো কাজ করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

যদি নিজের ইচ্ছা থাকে তাহলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা এবং যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বা দায়িত্বশীল জায়গায় এখন মেয়েরা কাজ করতে পারে। সেই অবস্থা এখন তৈরি হয়েছে। আগের মতো সেই পরিস্থিতি কিন্তু নেই।

কর্মক্ষেত্রে নারী হিসেবে কী রকম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন এ প্রশ্নের উত্তরে ইশরাত জাহান বলেন, মাঝে মধ্যে কিছু প্রতিবন্ধকতা আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। হয়ত এমন হয় যে, একসঙ্গে আমাদের অফিসের কাজ করতে হচ্ছে, আমাদের পরিবার-পরিজনদের দেখাশোনা করতে হয়।

রাতে হঠাৎ দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে যেতে গেলে নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে হয়। কিন্তু তারপরও এগুলো আমরা এখন মোকাবিলা করতে সক্ষম হচ্ছি। এখন কিন্তু প্রত্যেক মেয়ে দেখবেন যে যার যার জায়গা থেকে সব কাজেই কিন্তু তারা যাচ্ছে। তাদের কোনোভাবেই দুর্বল ভাবার কোনো সুযোগ নেই।

লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নাহিদা সুলতানা বলেন, নারীদের ক্ষমতায়নে পুরুষরাই সবচেয়ে বড় বাধা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা এখনো সমধিকার পায়নি। তবে আমার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অন্যরকম। আমার এ অবস্থানে আসার পেছনে অবদান রয়েছে আমার পিতা আর স্বামীর।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.