ঢাকা ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo হবিগঞ্জে ছুরিকাঘাতে এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত Logo শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড Logo নবীগঞ্জে দুর্ঘটনা, নারীসহ নিহত ২ Logo মাধবপুর বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০ Logo হবিগঞ্জে ভুয়া চিকিৎসকের একমাসের কারাদণ্ড Logo স্বৈরাচার পতনে ১৬ বছর অপেক্ষা নয়, তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Logo বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। Logo হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা Logo নবীগঞ্জ মসজিদে মাইকিং করে পুলিশের ওপর হামলা, আসামি ছিনতাই আটক ১৩ Logo চুনারুঘাটে হত্যা মামলার আসমী আ. মান্নান আটক-তাবলীগ জামাতে গিয়ে অপহরণ মামলা সাজিয়েছেন

রাসেলস ভাইপার সাপটি আসলে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া

শায়েস্তাগঞ্জের বাণী ডেস্ক

সামাজিক মাধ্যম উত্তাল রাসেলস ভাইপার সাপের নামে। এই সাপের দংশনে সাথে সাথে মৃত্যু এমন প্রচারণাও আছে। সাপটি বাংলাদেশে নতুন, এমন প্রচার হচ্ছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সাপটি আগেও বাংলাদেশে ছিল, এবং আঞ্চলিকভাবে একে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামে ডাকা হতো।

রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্কের এক পর্যায়ে ফরিদপুরের একজন রাজনীতিবিদ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে প্রতিটির জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।

অনেকে বলছেন, রাসেলস ভাইপার খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে। ফলে সহসা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এই সাপের আধিক্য মানুষের জন্য হুমকি তৈরি করবে।

প্রশ্ন হ্ছে, রাসেল’স ভাইপার নিয়ে যে মাত্রায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে তা কতটা যৌক্তিক?

সাপ গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ প্রজাতির সাপ কামড়ালে তারও চিকিৎসা আছে এবং সময়মত চিকিৎসা নিতে পারলে মৃত্যু ঝুঁকি কমে আসে।

বেসরকারি সংস্থা ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন বলছে রাসেলস ভাইপার মোটেও দেশের সবচেয়ে বিষধর কিংবা প্রাণঘাতী সাপ নয়। বরং দেশে প্রতি বছর সাপের কামড়ে যত লোক মারা যায় তার অর্ধেকই মারা যায় পাতি কেউটে সাপের কামড়ে। তবে সময়মত চিকিৎসা না নিলে রাসেলস ভাইপারের কামড়েও মৃত্যু হতে পারে।

এদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম (সাপ কামড়ালে রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়) আছে এবং সব জায়গায় হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন উপাদানকে অ্যান্টিভেনম বলা হয়। দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে, অ্যান্টিভেনমের অ্যান্টিবডিগুলি বিষকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায় ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি জেলা রাসেলস ভাইপারের কামড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জের কিছু এলাকায় গত তিন মাসে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে অন্তত পাঁচজন মারা গেছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এরপর ভোলাসহ আরও কয়েকটি জেলায় এ ধরনের সাপ ধরে মারার খবর এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে ২০২৩ সালে চার লাখ সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সাড়ে সাত হাজার মানুষ মারা গেছে যাদের বেশিরভাগই কোবরা ও কেউটে প্রজাতি সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন। তবে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে ঠিক কতো জন মারা গেছে তার সুনির্দিষ্ট হিসেব পাওয়া যায়নি।

চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া বা রাসেলস ভাইপার নামের সাপের এই প্রজাতিটি বাংলাদেশ থেকে বহু বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু গত ১০-১২ বছর আগে থেকে আবারো এই সাপের কামড়ের ঘটনায় এগুলোকে আবার দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে একাধিক জেলায় সাপটি দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো. আবু সাইদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান সাপ বিষয়ে গবেষক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে সুপরিচিত। তারা দুজন বাংলাদেশের সাপ ও সর্প দংশন প্রতিরোধ ও চিকিৎসা বইটির রচয়িতা। তারা উভয়ই অবশ্য বলছেন যে রাসেলস ভাইপার নিয়ে যেভাবে আতঙ্কের কথা বলা হচ্ছে সেটি নিতান্তই ভয় থেকে এবং এটি অতিরঞ্জিত।

অধ্যাপক ফরিদ আহসান বলেছেন, অনেকে না জেনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সাপ দেখে সবাই ভয় পায় এবং এর কামড়ে মারা যায় এটাই মনে গেঁথে গেছে। চিকিৎসা নিলে যে ভালো হয় সেটা সবাই জানে না বলেই আতঙ্ক হয়। খুব দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেই সমাধান করা সম্ভব।

গবেষক মো. আবু সাইদ বলছেন, রাসেলস ভাইপার কামড় দিলেই রোগী মারা যায় এটিও সত্য নয়, বরং রোগী সহজে মারা যায় না। ন্যূনতম ৭২ ঘণ্টার আগে সহজে রোগী মারা যায় না। বাংলাদেশে এ সাপের কামড়ের পর ১৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে ছিল এমন তথ্যও আছে।

বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি ডা. মো. আবুল ফয়েজ সাপের দংশন ও এর চিকিৎসা নিয়ে লেখা বই লিখেছেন, গোখরো সাপের দংশনের গড় ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপের দংশনের গড় ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনের গড় ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি।

এই চন্দ্রবোড়া সাপটিই হলো রাসেলস ভাইপার। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায়, বিশেষ করে পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলে এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন বলছে, দেশের যে সব সাপের সাবকিউটেনাস মেডিয়ান লিথাল ডোজ জানা (বিষের মাত্রা) তাদের মধ্যে এটা সপ্তম (সামুদ্রিক সাপসহ)। তাই রাসেলস ভাইপার দেশের সবচেয়ে বিষধর বা সবচেয়ে প্রাণঘাতী সাপ নয় ।

মো. আবু সাইদ ২০১৯ সালে প্রকাশিত রাসেলস ভাইপার অফ বাংলাদেশ ইটস গ্রুমস অ্যান্ড থ্রেটস অন হিউম্যান বিয়িং শীর্ষক গবেষণার যৌথ গবেষকদের একজন। তিনি জানান, দেশের ২২-২৪টির মতো জেলার কিছু স্থানে রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি দেখা গেছে। যদিও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজেরে ভেনম রিসার্চ সেন্টারের হিসেবে এ সাপ আছে ২৭টির মতো জেলার কিছু কিছু জায়গায়। তার মতে, এটি কোবরা কিংবা কেউটের চেয়ে কম প্রাণঘাতী কিন্তু এই সাপের বিষে নানা ধরনের উপাদান বেশি। ফলে চিকিৎসায় বিলম্ব হলে বহুমাত্রিক জটিলতা তৈরি করে শরীরে। সেজন্য তখন আর অ্যান্টিভেনম দিয়ে কাজ হয় না। ক্রমান্বয়ে ফুসফুস, কিডনি আক্রান্ত হয়। এক পর্যায়ে অনেক রক্তক্ষরণ হয়, তখন আর রক্ত দিলে শরীরে তা থাকে না”।

অধ্যাপক ফরিদ আহসানের মতে, রাসেলস ভাইপার কামড়ালে একশ মিনিটের মধ্যে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারলে ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।

তিনি বলেন, কোবরা বা কেউটে কামড়ালে টেরও পাওয়া যায় না অনেক সময় কিন্তু রাসেলস ভাইপার কামড় দিলে জায়গাটা সাথে সাথে ফুলে যায় এবং সাপটি সাথে সাথেই চলে যায় না।

“সেজন্য কামড় দেওয়ার পর সাপটা দেখা যায় বলে রোগী বা অন্যরা নিশ্চিত হতে পারে। একজন চিকিৎসক দ্রুত অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে পারেন। সেটি হলে ঝুঁকিও কমে যায়। এ কারণেও এটি অন্য বিষধর সাপের চেয়ে কম আতঙ্কের”।

অবশ্য ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন বলছে বাংলাদেশে ব্যবহৃত পলিঅ্যান্টিভেনম দিয়ে রাসেলস ভাইপারের বিষের চিকিৎসা হয়।

তাই এন্টিভেনম নেই কথাটা সর্বৈব মিথ্যা। “তবে প্রশিক্ষিত ডাক্তার, অ্যান্টিভেনম সাপ্লাই এবং আইসিইউ এর স্বল্পতা আছে”।

জমি বা ক্ষেতে এই সাপ ছড়িয়ে পড়েছে বলে যে প্রচারণা চলছে সে বিষয়ে তিনি বলেন মানিকগঞ্জসহ কয়েকটি জায়গায় চরাঞ্চলে যেখানে আগে চর ছিল সেখানে সব পরিষ্কার করে খামার বানানো হয়েছে।

“ফলে সাপের থাকা ও খাবার সংকট তৈরি হয়েছে। আবার কিছু এলাকায় জমিতে এখন একাধিক ফসল হওয়ায় শিয়াল, খাটাশ, বেজি, গুইসাপ আর নেই বললেই চলে”।

“ইকোসিস্টেমটাই নষ্ট হয়ে গেছে আবাস থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা এখন কচুরি পানায় ভেসে পদ্মা মেঘনা যমুনায় ভেসে ছড়াচ্ছে। কিন্তু তারপরেও এ নিয়ে আতঙ্কের কোন কারণ ঘটেনি,” বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন মানুষ একটু সাবধান হলেই সাপের কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। রাসেলস ভাইপার তেড়ে এসে কামড়ায় বলে যে প্রচার চলছে সেটিও সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ফরিদ আহসান।

গবেষকরা বলছেন, রাসেলস ভাইপার ভালো সাঁতার কাটে এবং এই সাপ এক সাথে ৩-৬৩টি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে। এসব বাচ্চা দুই বছরে পরিপক্ব হয়। এদের গর্ভধারণকাল ছয় মাস। এই সাপটি সাধারণত নিশাচর বা রাতে চলাচল করতে পছন্দ করে এবং মানুষের বাড়িঘর এলাকায় সাধারণত এরা থাকে না। থাকার জন্য ঝোপ ঝাড়, ফসলের গোলা কিংবা জমির বড় গর্ত এদের পছন্দ।

অধ্যাপক ফরিদ আহসান বলছেন, এ সাপ যে পরিমাণ ইঁদুর খায় সেটি না হলে ফসল উৎপাদনেরই ক্ষতি হতো।

তিনি বলেন, ঘাস বনে, ঝোপ ঝাড়ে এরা থাকে। তাই এসব জায়গায় গেলে সাবধানতা অবলম্বন করা যেতে পারে। বড় লাঠি দিয়ে নাড়ালেই সাপ সরে যায়। কৃষকরা গামবুট পড়লে এবং জমিতে নামার আগে লাঠি দিয়ে নাড়ালেই এরা সরে যাবে। তাই অপ্রয়োজনীয় আতঙ্কের কোন কারণই নেই। তবে সতর্ক অবশ্যই থাকতে হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:৩২:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪
৯৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

রাসেলস ভাইপার সাপটি আসলে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া

আপডেট সময় ০৮:৩২:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪

সামাজিক মাধ্যম উত্তাল রাসেলস ভাইপার সাপের নামে। এই সাপের দংশনে সাথে সাথে মৃত্যু এমন প্রচারণাও আছে। সাপটি বাংলাদেশে নতুন, এমন প্রচার হচ্ছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সাপটি আগেও বাংলাদেশে ছিল, এবং আঞ্চলিকভাবে একে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামে ডাকা হতো।

রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্কের এক পর্যায়ে ফরিদপুরের একজন রাজনীতিবিদ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে প্রতিটির জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।

অনেকে বলছেন, রাসেলস ভাইপার খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে। ফলে সহসা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এই সাপের আধিক্য মানুষের জন্য হুমকি তৈরি করবে।

প্রশ্ন হ্ছে, রাসেল’স ভাইপার নিয়ে যে মাত্রায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে তা কতটা যৌক্তিক?

সাপ গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ প্রজাতির সাপ কামড়ালে তারও চিকিৎসা আছে এবং সময়মত চিকিৎসা নিতে পারলে মৃত্যু ঝুঁকি কমে আসে।

বেসরকারি সংস্থা ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন বলছে রাসেলস ভাইপার মোটেও দেশের সবচেয়ে বিষধর কিংবা প্রাণঘাতী সাপ নয়। বরং দেশে প্রতি বছর সাপের কামড়ে যত লোক মারা যায় তার অর্ধেকই মারা যায় পাতি কেউটে সাপের কামড়ে। তবে সময়মত চিকিৎসা না নিলে রাসেলস ভাইপারের কামড়েও মৃত্যু হতে পারে।

এদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম (সাপ কামড়ালে রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়) আছে এবং সব জায়গায় হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন উপাদানকে অ্যান্টিভেনম বলা হয়। দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে, অ্যান্টিভেনমের অ্যান্টিবডিগুলি বিষকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায় ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি জেলা রাসেলস ভাইপারের কামড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জের কিছু এলাকায় গত তিন মাসে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে অন্তত পাঁচজন মারা গেছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এরপর ভোলাসহ আরও কয়েকটি জেলায় এ ধরনের সাপ ধরে মারার খবর এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে ২০২৩ সালে চার লাখ সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সাড়ে সাত হাজার মানুষ মারা গেছে যাদের বেশিরভাগই কোবরা ও কেউটে প্রজাতি সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন। তবে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে ঠিক কতো জন মারা গেছে তার সুনির্দিষ্ট হিসেব পাওয়া যায়নি।

চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া বা রাসেলস ভাইপার নামের সাপের এই প্রজাতিটি বাংলাদেশ থেকে বহু বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু গত ১০-১২ বছর আগে থেকে আবারো এই সাপের কামড়ের ঘটনায় এগুলোকে আবার দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে একাধিক জেলায় সাপটি দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো. আবু সাইদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান সাপ বিষয়ে গবেষক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে সুপরিচিত। তারা দুজন বাংলাদেশের সাপ ও সর্প দংশন প্রতিরোধ ও চিকিৎসা বইটির রচয়িতা। তারা উভয়ই অবশ্য বলছেন যে রাসেলস ভাইপার নিয়ে যেভাবে আতঙ্কের কথা বলা হচ্ছে সেটি নিতান্তই ভয় থেকে এবং এটি অতিরঞ্জিত।

অধ্যাপক ফরিদ আহসান বলেছেন, অনেকে না জেনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সাপ দেখে সবাই ভয় পায় এবং এর কামড়ে মারা যায় এটাই মনে গেঁথে গেছে। চিকিৎসা নিলে যে ভালো হয় সেটা সবাই জানে না বলেই আতঙ্ক হয়। খুব দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেই সমাধান করা সম্ভব।

গবেষক মো. আবু সাইদ বলছেন, রাসেলস ভাইপার কামড় দিলেই রোগী মারা যায় এটিও সত্য নয়, বরং রোগী সহজে মারা যায় না। ন্যূনতম ৭২ ঘণ্টার আগে সহজে রোগী মারা যায় না। বাংলাদেশে এ সাপের কামড়ের পর ১৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে ছিল এমন তথ্যও আছে।

বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি ডা. মো. আবুল ফয়েজ সাপের দংশন ও এর চিকিৎসা নিয়ে লেখা বই লিখেছেন, গোখরো সাপের দংশনের গড় ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপের দংশনের গড় ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনের গড় ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি।

এই চন্দ্রবোড়া সাপটিই হলো রাসেলস ভাইপার। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায়, বিশেষ করে পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলে এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন বলছে, দেশের যে সব সাপের সাবকিউটেনাস মেডিয়ান লিথাল ডোজ জানা (বিষের মাত্রা) তাদের মধ্যে এটা সপ্তম (সামুদ্রিক সাপসহ)। তাই রাসেলস ভাইপার দেশের সবচেয়ে বিষধর বা সবচেয়ে প্রাণঘাতী সাপ নয় ।

মো. আবু সাইদ ২০১৯ সালে প্রকাশিত রাসেলস ভাইপার অফ বাংলাদেশ ইটস গ্রুমস অ্যান্ড থ্রেটস অন হিউম্যান বিয়িং শীর্ষক গবেষণার যৌথ গবেষকদের একজন। তিনি জানান, দেশের ২২-২৪টির মতো জেলার কিছু স্থানে রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি দেখা গেছে। যদিও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজেরে ভেনম রিসার্চ সেন্টারের হিসেবে এ সাপ আছে ২৭টির মতো জেলার কিছু কিছু জায়গায়। তার মতে, এটি কোবরা কিংবা কেউটের চেয়ে কম প্রাণঘাতী কিন্তু এই সাপের বিষে নানা ধরনের উপাদান বেশি। ফলে চিকিৎসায় বিলম্ব হলে বহুমাত্রিক জটিলতা তৈরি করে শরীরে। সেজন্য তখন আর অ্যান্টিভেনম দিয়ে কাজ হয় না। ক্রমান্বয়ে ফুসফুস, কিডনি আক্রান্ত হয়। এক পর্যায়ে অনেক রক্তক্ষরণ হয়, তখন আর রক্ত দিলে শরীরে তা থাকে না”।

অধ্যাপক ফরিদ আহসানের মতে, রাসেলস ভাইপার কামড়ালে একশ মিনিটের মধ্যে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারলে ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।

তিনি বলেন, কোবরা বা কেউটে কামড়ালে টেরও পাওয়া যায় না অনেক সময় কিন্তু রাসেলস ভাইপার কামড় দিলে জায়গাটা সাথে সাথে ফুলে যায় এবং সাপটি সাথে সাথেই চলে যায় না।

“সেজন্য কামড় দেওয়ার পর সাপটা দেখা যায় বলে রোগী বা অন্যরা নিশ্চিত হতে পারে। একজন চিকিৎসক দ্রুত অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে পারেন। সেটি হলে ঝুঁকিও কমে যায়। এ কারণেও এটি অন্য বিষধর সাপের চেয়ে কম আতঙ্কের”।

অবশ্য ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন বলছে বাংলাদেশে ব্যবহৃত পলিঅ্যান্টিভেনম দিয়ে রাসেলস ভাইপারের বিষের চিকিৎসা হয়।

তাই এন্টিভেনম নেই কথাটা সর্বৈব মিথ্যা। “তবে প্রশিক্ষিত ডাক্তার, অ্যান্টিভেনম সাপ্লাই এবং আইসিইউ এর স্বল্পতা আছে”।

জমি বা ক্ষেতে এই সাপ ছড়িয়ে পড়েছে বলে যে প্রচারণা চলছে সে বিষয়ে তিনি বলেন মানিকগঞ্জসহ কয়েকটি জায়গায় চরাঞ্চলে যেখানে আগে চর ছিল সেখানে সব পরিষ্কার করে খামার বানানো হয়েছে।

“ফলে সাপের থাকা ও খাবার সংকট তৈরি হয়েছে। আবার কিছু এলাকায় জমিতে এখন একাধিক ফসল হওয়ায় শিয়াল, খাটাশ, বেজি, গুইসাপ আর নেই বললেই চলে”।

“ইকোসিস্টেমটাই নষ্ট হয়ে গেছে আবাস থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা এখন কচুরি পানায় ভেসে পদ্মা মেঘনা যমুনায় ভেসে ছড়াচ্ছে। কিন্তু তারপরেও এ নিয়ে আতঙ্কের কোন কারণ ঘটেনি,” বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন মানুষ একটু সাবধান হলেই সাপের কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। রাসেলস ভাইপার তেড়ে এসে কামড়ায় বলে যে প্রচার চলছে সেটিও সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ফরিদ আহসান।

গবেষকরা বলছেন, রাসেলস ভাইপার ভালো সাঁতার কাটে এবং এই সাপ এক সাথে ৩-৬৩টি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে। এসব বাচ্চা দুই বছরে পরিপক্ব হয়। এদের গর্ভধারণকাল ছয় মাস। এই সাপটি সাধারণত নিশাচর বা রাতে চলাচল করতে পছন্দ করে এবং মানুষের বাড়িঘর এলাকায় সাধারণত এরা থাকে না। থাকার জন্য ঝোপ ঝাড়, ফসলের গোলা কিংবা জমির বড় গর্ত এদের পছন্দ।

অধ্যাপক ফরিদ আহসান বলছেন, এ সাপ যে পরিমাণ ইঁদুর খায় সেটি না হলে ফসল উৎপাদনেরই ক্ষতি হতো।

তিনি বলেন, ঘাস বনে, ঝোপ ঝাড়ে এরা থাকে। তাই এসব জায়গায় গেলে সাবধানতা অবলম্বন করা যেতে পারে। বড় লাঠি দিয়ে নাড়ালেই সাপ সরে যায়। কৃষকরা গামবুট পড়লে এবং জমিতে নামার আগে লাঠি দিয়ে নাড়ালেই এরা সরে যাবে। তাই অপ্রয়োজনীয় আতঙ্কের কোন কারণই নেই। তবে সতর্ক অবশ্যই থাকতে হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।