ঢাকা ১১:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কঠোর নির্দেশনা দিয়ে ইসির নতুন নীতিমালা Logo নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক: মির্জা ফখরুল Logo হবিগঞ্জ-১: বিএনপিতে প্রার্থী জট, মনোনয়ন দৌড়ে প্রবাসীরাও Logo ৫২৩ বছরের ঐতিহ্য শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগর জামে মসজিদ Logo নবীগঞ্জে পাখি শিকারীর কাছ থেকে উদ্ধার করা বন্য বালিহাস পাখি অবমুক্তি,পাখি শিকারীকে অর্থদন্ড Logo আবারও প্রকৃতিপ্রেমীদের হাতছানি দিচ্ছে চুনারুঘাটের শাপলা বিল Logo বাহুবল শিশুদের ঝগড়া থেকে বড়দের সংঘর্ষ, আহত ৫০ Logo হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান, ৯ জনকে কারাদন্ড Logo হবিগঞ্জ পৌরসভার কোটি টাকার অব্যবহৃত যানে গজিয়েছে গাছ Logo দুটি স্পেশাল ট্রেন চালুসহ ৯ দফা দাবীতে শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনে মানববন্ধন পালন

হবিগঞ্জের ৩০ নদ-নদী দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জেলার অধিকাংশ নদ-নদী। জেলায় ৫০ টির বেশি নদী থাকলেও বর্তমানে অস্তিত্ব মিলেছে প্রায় ৩০টির। কালের পরিক্রমায় একে একে হারিয়ে যাচ্ছে নদী গুলো। যে গুলো রয়েছে সেগুলোও মৃতপ্রায়। অনেক নদীর দু’পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। দখল-দূষনের কবলে পড়ে একদিকে নদীর প্রবাহ বাধা গ্রস্থ হচ্ছে, অন্যদিকে নদী হারাচ্ছে তার নাব্যতা।

সত্তরের দশকে হবিগঞ্জে ৫০টির বেশি নদী ছিল। তবে এখন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় আছে মাত্র ৩০টি নদীর নাম। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে হবিগঞ্জ থেকে প্রায় অর্ধেক নদীর নামই মুছে গেছে।অস্তিত্ব নেই নদীর সঙ্গে মিশে থাকা শত শত খালের। এসব নদী ও খাল দখল করে গড়ে উঠেছে বসতি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা। দীর্ঘ সময় ধরে খনন না করায় সমতল ভূমিতে পরিণত হওয়া নদীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

যে ৩০টি নদী এখনও টিকে আছে সেগুলোও পরিণত হয়েছে খাল বা নালায়। সেই সঙ্গে নদী শাসনে মহা সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে কুশিয়ারা, কালনী, খোয়াই, সুতাং, রত্মা এবং করাঙ্গীর মতো বড় নদীগুলোও। এগুলোর দু’ পাশে গড়ে উঠেছে বড় বড় স্থাপনা। দূষনে কবলিত হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এসব নদী। এক সময়ের খরস্রোতা নদী ছিল শাখা বরাক। নদীতে চলাচল করতো লঞ্চ ও ট্রলার। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এই এলাকার বাসিন্দারা। যে নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহর। এলাকার ব্যবসা বানিজ্যের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই নদী পথ। কালের পরিক্রমায় গেল ৪ দশকে এই নদী হারিয়েছে তার যৌবন।

দখল-দূষণের কারনে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে নদীটি এখন পরিণত হয়েছে মরাখালে। সুতাং নদীর অবস্থা আরও ভয়াবহ। শিল্পবর্জ্যে দূষনে নদীটি এখন মৃত প্রায়। দখলের কবলে বিলীনের পথে বাহুবলের করাঙ্গী ও মাধবপুরের সোনাই, আর শুঁটকি নদী। চরম সংকটে রয়েছে রত্মা এবং হবিগঞ্জ শহরকে ঘিরে থাকা খোয়াই নদীটিও। শাখা বরাক নদী পাড়ের আওড়া গ্রামের বাসিন্দা রমিজ আলী বলেন, নদীতে বড় বড় লঞ্চ ও ট্রলার চলাচল করতো। দুই পাশে শত শত নৌকা বাঁধা থাকত। এসব নৌকা বিভিন্ন এলাকা থেকে কত মালামাল নিয়ে আসত নবীগঞ্জে। এতে ব্যবসা বানিজ্য ছিল জমজমাট। এখন নদীটি ছোট হয়ে গেছে। নদীর কোন কোন এলাকা দেখে মনে হচ্ছে খাল’।

খোয়াই নদী পাশ^বর্তী নিউ মুসলিম কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা এডভোকেট হাসবী সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘এক সময়ে খরস্রোতা খোয়াই নদীটি এখন অস্তিত্ব হারিয়েছে। ময়লা আবর্জনা ও বিভিন্নস্থানে দখল ও ভরাটের কারণে নদী হারিয়েছে গতিপথ। নদীটি দ্রুত খনন করে স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরে আনা প্রয়োজন’। একই এলাকার মামুন মিয়া বলেন, নদীটির বিভিন্ন এলাকার দখলের কারনে আমরা অনেক ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছি। সামান্য বৃষ্টি এলেই শহরে পানি উঠে যায়, এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আমরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছি’। সুতাং নদীর পাড়ের বাসিন্দা লিলু মিয়া বলেন, ‘নদীটি দেখলে মনে হবে খাল। দূষিত বর্জ্যে নদীর পানি কালো রং ধারণ করে। এতে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নদীর পানি পান করার ফলে মারা যাচ্ছে গরু-ছাগল।

এছাড়া কৃষি কাজে এ নদীর পানি ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে উঠেছে’। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ-এর সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি বলেন, ‘নদী হল জীবন্ত সত্তা। নদীকে ঠিকিয়ে রাখতে হবে। নদী রক্ষায় সকলকে সচেতন হতে হবে। নদীতে ময়লা আবর্জনা না ফেলে এর গতিপথ স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন।’ নিদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও দ্রুত খননসহ কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘জেলায় প্রায় ৩০টি নদীর পরিচয় পাওয়া গেছে। অনেক নদীর দু’ পাশে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে ছোট নদীতে পরিণত হয়েছে। কোন এলাকায় নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। প্রত্যেক উপজেলায় নদী চিন্নিত করতে প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নদী দখল মুক্ত করতে এবং নদীর সৌন্দর্য্য ও স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে নদীর খনন ও উচ্ছেদ অভিযানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে’।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১১:৪১:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
১২৫ বার পড়া হয়েছে

হবিগঞ্জের ৩০ নদ-নদী দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে

আপডেট সময় ১১:৪১:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জেলার অধিকাংশ নদ-নদী। জেলায় ৫০ টির বেশি নদী থাকলেও বর্তমানে অস্তিত্ব মিলেছে প্রায় ৩০টির। কালের পরিক্রমায় একে একে হারিয়ে যাচ্ছে নদী গুলো। যে গুলো রয়েছে সেগুলোও মৃতপ্রায়। অনেক নদীর দু’পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। দখল-দূষনের কবলে পড়ে একদিকে নদীর প্রবাহ বাধা গ্রস্থ হচ্ছে, অন্যদিকে নদী হারাচ্ছে তার নাব্যতা।

সত্তরের দশকে হবিগঞ্জে ৫০টির বেশি নদী ছিল। তবে এখন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় আছে মাত্র ৩০টি নদীর নাম। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে হবিগঞ্জ থেকে প্রায় অর্ধেক নদীর নামই মুছে গেছে।অস্তিত্ব নেই নদীর সঙ্গে মিশে থাকা শত শত খালের। এসব নদী ও খাল দখল করে গড়ে উঠেছে বসতি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা। দীর্ঘ সময় ধরে খনন না করায় সমতল ভূমিতে পরিণত হওয়া নদীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

যে ৩০টি নদী এখনও টিকে আছে সেগুলোও পরিণত হয়েছে খাল বা নালায়। সেই সঙ্গে নদী শাসনে মহা সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে কুশিয়ারা, কালনী, খোয়াই, সুতাং, রত্মা এবং করাঙ্গীর মতো বড় নদীগুলোও। এগুলোর দু’ পাশে গড়ে উঠেছে বড় বড় স্থাপনা। দূষনে কবলিত হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এসব নদী। এক সময়ের খরস্রোতা নদী ছিল শাখা বরাক। নদীতে চলাচল করতো লঞ্চ ও ট্রলার। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এই এলাকার বাসিন্দারা। যে নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহর। এলাকার ব্যবসা বানিজ্যের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই নদী পথ। কালের পরিক্রমায় গেল ৪ দশকে এই নদী হারিয়েছে তার যৌবন।

দখল-দূষণের কারনে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে নদীটি এখন পরিণত হয়েছে মরাখালে। সুতাং নদীর অবস্থা আরও ভয়াবহ। শিল্পবর্জ্যে দূষনে নদীটি এখন মৃত প্রায়। দখলের কবলে বিলীনের পথে বাহুবলের করাঙ্গী ও মাধবপুরের সোনাই, আর শুঁটকি নদী। চরম সংকটে রয়েছে রত্মা এবং হবিগঞ্জ শহরকে ঘিরে থাকা খোয়াই নদীটিও। শাখা বরাক নদী পাড়ের আওড়া গ্রামের বাসিন্দা রমিজ আলী বলেন, নদীতে বড় বড় লঞ্চ ও ট্রলার চলাচল করতো। দুই পাশে শত শত নৌকা বাঁধা থাকত। এসব নৌকা বিভিন্ন এলাকা থেকে কত মালামাল নিয়ে আসত নবীগঞ্জে। এতে ব্যবসা বানিজ্য ছিল জমজমাট। এখন নদীটি ছোট হয়ে গেছে। নদীর কোন কোন এলাকা দেখে মনে হচ্ছে খাল’।

খোয়াই নদী পাশ^বর্তী নিউ মুসলিম কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা এডভোকেট হাসবী সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘এক সময়ে খরস্রোতা খোয়াই নদীটি এখন অস্তিত্ব হারিয়েছে। ময়লা আবর্জনা ও বিভিন্নস্থানে দখল ও ভরাটের কারণে নদী হারিয়েছে গতিপথ। নদীটি দ্রুত খনন করে স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরে আনা প্রয়োজন’। একই এলাকার মামুন মিয়া বলেন, নদীটির বিভিন্ন এলাকার দখলের কারনে আমরা অনেক ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছি। সামান্য বৃষ্টি এলেই শহরে পানি উঠে যায়, এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আমরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছি’। সুতাং নদীর পাড়ের বাসিন্দা লিলু মিয়া বলেন, ‘নদীটি দেখলে মনে হবে খাল। দূষিত বর্জ্যে নদীর পানি কালো রং ধারণ করে। এতে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নদীর পানি পান করার ফলে মারা যাচ্ছে গরু-ছাগল।

এছাড়া কৃষি কাজে এ নদীর পানি ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে উঠেছে’। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ-এর সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি বলেন, ‘নদী হল জীবন্ত সত্তা। নদীকে ঠিকিয়ে রাখতে হবে। নদী রক্ষায় সকলকে সচেতন হতে হবে। নদীতে ময়লা আবর্জনা না ফেলে এর গতিপথ স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন।’ নিদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও দ্রুত খননসহ কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘জেলায় প্রায় ৩০টি নদীর পরিচয় পাওয়া গেছে। অনেক নদীর দু’ পাশে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে ছোট নদীতে পরিণত হয়েছে। কোন এলাকায় নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। প্রত্যেক উপজেলায় নদী চিন্নিত করতে প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নদী দখল মুক্ত করতে এবং নদীর সৌন্দর্য্য ও স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে নদীর খনন ও উচ্ছেদ অভিযানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে’।