ঢাকা ০৬:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আব্বার কথা মনে পড়ে

তারেক চৌধুরী ----

আব্বার কথা মনে পড়ে …

আসসালামু আলাইকুম ।গতকাল ২১শে সেপ্টেম্বর ছিল আমার আব্বার ১৬তম মৃত্যু বার্ষিকী ।

মরহুম মোহাম্মদ আব্দুন নুর চৌধুরী আমার বাবা কে ডাকতাম ‘ আব্বা’। আল্লাহর বাড়ি চলে গেছেন অনেক বছর হলো । আব্বাকে বেশ মনে পড়ছে ।

আব্বা কে মনে হতো ম্যাজিস্ট্রেট এর মতো। এখনকার মত এতো বাপ্ ছেলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক কখনোই ছিল না। ভয় পেতাম, ভালোবাসতাম তবে মাখামাখি কোন সম্পর্ক ছিল না. সম্পর্কটা ছিল শ্রদ্ধার আর স্নেহের। স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন তিন দশকের বেশি আর মোট শিক্ষকতায় ছিলেন চার দশকের বেশি সময় ।

১৯৪২ সালে এস এস সি এবং ১৯৪৪ সালে এইচ এস সি পাশ করেন কৃতিত্বের সাথে । চল্লিশের দশকে শিক্ষকতা শুরু করেন, সেই সময়ে গ্রাজুয়েশন করেন তিনি । ছাত্ররা বাঘের মত ভয় পেত. যত দূর সম্ভব তার চোখের সামনে না পড়ার চেষ্টা করতো সবাই. সে অপরাধ করুক বা না করুক।রাস্তায় সাইকেল নিয়ে আসলে সামনে দিক দিয়ে আসুক বা পেছন দিক দিয়ে আসুক কমপক্ষে কয়েক শ গজ দূর থেকে বা অনেক দূর থেকে সাইকেল হাঁটিয়ে নিয়ে যেতো ছাত্ররা।

আব্বা মৌলভী ছিলেন না অনেকে মৌলভী ভাবতো। আরবী বা ইংরেজি পড়ায় ভুল থাকলে অন্য রুম থেকে ভুল ধরতে পারতেন। আমরা জোরে জোরে পড়তাম. ঘরে বেশির ভাগ সময় জামাতে নামাজ হতো। আব্বা ইমামতি করতেন বাসায় এবং স্কুলে যখন ধর্মীয় শিক্ষক থাকতেন না।

রোজা মাসে আব্বা বাসায় সূরা তারাবি পড়াতেন. টায়ার্ড হয়ে যেতাম , প্রতি দুই রাকাতের শুরুতে বসে থাকতাম একদম রুকুতে যাওয়ার সময় নামাজে জয়েন করতাম. এসব কিছু আব্বা হয়তো দেখতেন না.

বাসায় শেষের দিকে টেলিভিশন ছিল। নামাজের জন্য বা আব্বার উপস্হিতির জন্য কত প্রিয় নাটক দেখতে পারি নাই তার হিসাব নাই. টেলিভিশন দেখবো এই কথা আব্বাকে রিকুয়েস্ট করার মতো সাহসী লোক বাসায় ছিল না আম্মা ছাড়া . আম্মাকে দিয়ে তদবির করিয়ে হয়ত মাঝে মধ্যে কিছু দেখা হয়েছে , তাও ঈদ বা উপলক্ষ থাকলে । পড়া, নামাজ, সকালে ঘুম থেকে উঠা, সন্ধ্যার পূর্বে বাসায় ফেরা ,দেরি হলে কৈফিয়ত দেয়া এগুলো ছিল নিয়ম। কোন কিছুর জন্য পাল্টা যুক্তি দেয়া সংবিধানে ছিল না। শাসনের জন্য ‘হাত তোলা’ এগুলো শুধু অনেকের পরিবারে শুনেছি। আমাদের পরিবারে আব্বার কথাই ছিল আইন। এখনো নিজেকে আব্দুন নূর চৌধুরীর ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি।

গ্রীষ্মের ছুটি ঘোষণার দিন স্কুলের ক্লাস গুলোতে শিক্ষকদের সম্মাননা দেয়া হতো।প্রতিটি ক্লাস শিক্ষকরা পরিদর্শন করতেন , ছাত্ররা শিক্ষকদের মাল্য ভূষিত করতো ক্লাস পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হতো। ছাত্র ছাত্রীরা বিভিন্ন ধরণের ফলমূলের ছবি অঙ্কন করতো, শিক্ষকরা মারকিং করতেন এখন হয় কি না জানি না। ফুলের মালা / কাগজের মালা নেয়ার জন্য আমি ও মাঝে মধ্যে আব্বার সঙ্গে যেতাম।

নামাজ জীবনে বাদ দিয়েছেন দেখি নাই। আল্লাহর প্রতি তার ছিল অগাধ বিশ্বাস। নীতির সঙ্গে আপোষ করতেন না. সাহসী ছিলেন।

লেখা পড়া টুকটাক করেছি কিন্ত আব্বার গুনের অনেক কিছুই অর্জন বা আয়ত্ব করতে পারিনি। লিখতে গিয়ে বিচ্ছিন্ন অনেক কিছুই মনে পড়ছে। আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ জায়গা মঞ্জুর করবেন এই দুআ করি। সকলের মা বাবা কে পরম করুনাময় তার আরশের ছায়া তলে স্থান দিবেন এই মিনতি করছি।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০১:২৪:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
১৬ বার পড়া হয়েছে

আব্বার কথা মনে পড়ে

আপডেট সময় ০১:২৪:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আব্বার কথা মনে পড়ে …

আসসালামু আলাইকুম ।গতকাল ২১শে সেপ্টেম্বর ছিল আমার আব্বার ১৬তম মৃত্যু বার্ষিকী ।

মরহুম মোহাম্মদ আব্দুন নুর চৌধুরী আমার বাবা কে ডাকতাম ‘ আব্বা’। আল্লাহর বাড়ি চলে গেছেন অনেক বছর হলো । আব্বাকে বেশ মনে পড়ছে ।

আব্বা কে মনে হতো ম্যাজিস্ট্রেট এর মতো। এখনকার মত এতো বাপ্ ছেলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক কখনোই ছিল না। ভয় পেতাম, ভালোবাসতাম তবে মাখামাখি কোন সম্পর্ক ছিল না. সম্পর্কটা ছিল শ্রদ্ধার আর স্নেহের। স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন তিন দশকের বেশি আর মোট শিক্ষকতায় ছিলেন চার দশকের বেশি সময় ।

১৯৪২ সালে এস এস সি এবং ১৯৪৪ সালে এইচ এস সি পাশ করেন কৃতিত্বের সাথে । চল্লিশের দশকে শিক্ষকতা শুরু করেন, সেই সময়ে গ্রাজুয়েশন করেন তিনি । ছাত্ররা বাঘের মত ভয় পেত. যত দূর সম্ভব তার চোখের সামনে না পড়ার চেষ্টা করতো সবাই. সে অপরাধ করুক বা না করুক।রাস্তায় সাইকেল নিয়ে আসলে সামনে দিক দিয়ে আসুক বা পেছন দিক দিয়ে আসুক কমপক্ষে কয়েক শ গজ দূর থেকে বা অনেক দূর থেকে সাইকেল হাঁটিয়ে নিয়ে যেতো ছাত্ররা।

আব্বা মৌলভী ছিলেন না অনেকে মৌলভী ভাবতো। আরবী বা ইংরেজি পড়ায় ভুল থাকলে অন্য রুম থেকে ভুল ধরতে পারতেন। আমরা জোরে জোরে পড়তাম. ঘরে বেশির ভাগ সময় জামাতে নামাজ হতো। আব্বা ইমামতি করতেন বাসায় এবং স্কুলে যখন ধর্মীয় শিক্ষক থাকতেন না।

রোজা মাসে আব্বা বাসায় সূরা তারাবি পড়াতেন. টায়ার্ড হয়ে যেতাম , প্রতি দুই রাকাতের শুরুতে বসে থাকতাম একদম রুকুতে যাওয়ার সময় নামাজে জয়েন করতাম. এসব কিছু আব্বা হয়তো দেখতেন না.

বাসায় শেষের দিকে টেলিভিশন ছিল। নামাজের জন্য বা আব্বার উপস্হিতির জন্য কত প্রিয় নাটক দেখতে পারি নাই তার হিসাব নাই. টেলিভিশন দেখবো এই কথা আব্বাকে রিকুয়েস্ট করার মতো সাহসী লোক বাসায় ছিল না আম্মা ছাড়া . আম্মাকে দিয়ে তদবির করিয়ে হয়ত মাঝে মধ্যে কিছু দেখা হয়েছে , তাও ঈদ বা উপলক্ষ থাকলে । পড়া, নামাজ, সকালে ঘুম থেকে উঠা, সন্ধ্যার পূর্বে বাসায় ফেরা ,দেরি হলে কৈফিয়ত দেয়া এগুলো ছিল নিয়ম। কোন কিছুর জন্য পাল্টা যুক্তি দেয়া সংবিধানে ছিল না। শাসনের জন্য ‘হাত তোলা’ এগুলো শুধু অনেকের পরিবারে শুনেছি। আমাদের পরিবারে আব্বার কথাই ছিল আইন। এখনো নিজেকে আব্দুন নূর চৌধুরীর ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি।

গ্রীষ্মের ছুটি ঘোষণার দিন স্কুলের ক্লাস গুলোতে শিক্ষকদের সম্মাননা দেয়া হতো।প্রতিটি ক্লাস শিক্ষকরা পরিদর্শন করতেন , ছাত্ররা শিক্ষকদের মাল্য ভূষিত করতো ক্লাস পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হতো। ছাত্র ছাত্রীরা বিভিন্ন ধরণের ফলমূলের ছবি অঙ্কন করতো, শিক্ষকরা মারকিং করতেন এখন হয় কি না জানি না। ফুলের মালা / কাগজের মালা নেয়ার জন্য আমি ও মাঝে মধ্যে আব্বার সঙ্গে যেতাম।

নামাজ জীবনে বাদ দিয়েছেন দেখি নাই। আল্লাহর প্রতি তার ছিল অগাধ বিশ্বাস। নীতির সঙ্গে আপোষ করতেন না. সাহসী ছিলেন।

লেখা পড়া টুকটাক করেছি কিন্ত আব্বার গুনের অনেক কিছুই অর্জন বা আয়ত্ব করতে পারিনি। লিখতে গিয়ে বিচ্ছিন্ন অনেক কিছুই মনে পড়ছে। আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ জায়গা মঞ্জুর করবেন এই দুআ করি। সকলের মা বাবা কে পরম করুনাময় তার আরশের ছায়া তলে স্থান দিবেন এই মিনতি করছি।