ঢাকা ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি এমবাপ্পে-রোনাল্ডো

স্পোর্টস ডেস্ক

আগামীকাল ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে পর্তুগাল। এই ম্যাচের মাধ্যমে আবারো দুই পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী নিজেদের মধ্যকার প্রতিযোগিতা ঝালিয়ে নেবার সুযোগ পাচ্ছে। সব ছাপিয়ে অবশ্য দুই দলের দুই অধিনায়ক ও সুপারস্টার কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর উপরই পুরো বিশে^র নজড় থাকবে।

হামবুর্গে শেষ আটের এই লড়াইয়ে ইউরোপের দুই ফুটবল পাগল জাতি নিজেদের এগিয়ে নেবার জন্যই মাঠে নামবে। কিন্তু দুই দলের কেউই এখন পর্যন্ত জার্মানিতে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। ফ্রান্স গত সাতটি বড় টুর্নামেন্টের ছয়টিতে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোন খেলোয়ারই পেনাল্টি ছাড়া ওপেন প্লেতে কোন গোল করতে পারেনি। এনিয়ে চার ম্যাচে তারা মাত্র তিনটি গোল করেছে। এর মধ্যে এমাবাপ্পে একটি করেছে পেনাল্টি থেকে। বাকি দুটি হয়েছে আত্মঘাতি গোল। শেষ ষোলতে ইয়ান ভারটোনগেনের আত্মঘাতি গোলে বেলজিয়ামকে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পেয়েছে ফ্রান্স।

অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নাক ভেঙ্গে যাওয়ায় এমবাপ্পে খুব একটা স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারছেন না। তার উপর মাস্ক পড়ে খেলা সবসময়ই অস্বস্তির। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে ফ্রান্স গোলশুন্য ড্র করেছিল। ইনজুরির কারনে এই ম্যাচটি খেলতে পারেননি এমবাপ্পে। পোল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে মাঠে ফিরে স্পট কিক থেকে এক গোল করেন। এটাই এমবাপ্পের এখনো পর্যন্ত ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে সাত ম্যাচে প্রথম গোল।

ফ্রান্সের সহকারী কোচ গাই স্টিফেন বলেছেন, ‘প্রথম ম্যাচের ইনজুরি তাকে পিছিয়ে দিয়েছে। যদিও এটা কোন যুক্তি নয়, কিন্তু ঐ ট্রমা থেকে তিনি বেরুতে পারেননি। মাস্ক পড়ে খেলা মোটেই সহজ নয়, এটা এমবাপ্পে নিজেও স্বীকার করেছেন। মৌসুমের শেষে এমবাপ্পে কিছুটা পরিশ্রান্তও ছিলেন। কিন্তু কিলিয়ানের তুলনা তিনি নিজেই। ২০২১ সালের পর থেকে প্রায় প্রতি ম্যাচেই সে দলের হয়ে গোল করেছে।’এ পর্যন্ত চার ম্যাচে ফ্রান্স একটি মাত্র গোল হজম করেছে। সেটাও আবার পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে রবার্ট লিওয়ানদোস্কির গোল ছিল।অন্যদিকে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলতে ১২০ মিনিট গোলশুন্য থাকার পর শ্যুট আউটে জয়ী হয়ে পর্তুগাল শেষ আটের টিকেট পেয়েছে। গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তা স্লোভেনিয়ার তিনটি শটই রুখে দিয়ে পর্তুগালকে জয় উপহার দিয়েছেন। অতিরিক্ত সময়ে রোনাল্ডো পেনাল্টি মিস করায় ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারনে পেনাল্টি শ্যুট আউটের প্রয়োজন হয়। ঐ ম্যাচে বেশ কিছু গোলের সুযোগ নষ্ট করায় ৩৯ বছর বয়সী রোনাল্ডোর নামের পাশে সবচেয়ে বেশী বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোতে গোল করার রেকর্ডটি যোগ হয়নি। এই গোল মিস হবার পর রোনাল্ডো কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। দলে আরো অনেক প্রতিভা থাকলেও পর্তুগাল যখনই মাঠে নামে তখনই সবার দৃষ্টি থাকে সাবেক এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকার উপর। রোনাল্ডো নিজেও জানেন তার উপর পুরো দল কতটা নির্ভর করে। কোচ রবার্তো মার্টিনেজও রোনাল্ডোকে ছাড়া কিছুই চিন্তা করতে পারেননা।

শেষ ষোলর ম্যাচের পর মার্টিনেজ বলেছেন, ‘একজন খেলোয়াড় যে কিনা সব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, দেশের জন্য অনেক কিছু অর্জন করেছেন তার জন্য এই ধরনের আবেগ স্বাভাবিক। তার এই আবেগ না দেখালেও চলতো। এ কারনেই আমি তাকে এতটা পছন্দ করি। রোনাল্ডো এমনই।’

ডিফেন্ডার নুনো মেনডেস বলেছেন, ‘আমাদের দলে সবাই একসাথে একটি দল হিসেবে খেলতে নামি। এটাই এই দলের শক্তি। সকলের এই একাত্মতার কারনেই কস্তা তিনটি পেনাল্টি সেভ করেছে।’

গ্রুপের প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও চেক প্রজাতন্ত্রকে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করেছিল পর্তুগাল। এরপর তুরষ্ককে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয়। সে কারনে বলাই যায় ফ্রান্সের তুলনায় তারা গোল করার ক্ষেত্রে অন্তত এগিয়ে রয়েছে। যদিও উজ্জীবিত জর্জিয়ার কাছে ২-০ গোলের হারের মধ্য দিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করেছিল পর্তুগীজরা। যদিও তার আগেই গ্রুপের শীর্ষস্থান নিশ্চিত হয়েছিল দলটির।

শক্তিশালী ও জেদী ফরাসি রক্ষনভাগকে ফাঁকি দিয়ে এখন পর্তুগাল গোলের পথ খোঁজার চেষ্টার করবে। ২০২২ বিশ^কাপ রানার্স-আপ দলের কোচ দিদিয়ের দেশ্যমকে অবশ্য নিষেধাজ্ঞায় থাকা তারকা আদ্রিয়েন রাবোয়িতের স্থানে মধ্যমাঠে বদলী খেলোয়াড় বেছে নিতে হবে।

তিন বছর আগে এই দুই দল ইউরোতে গ্রুপ পর্বে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। পেনাল্টি থেকে রোনাল্ডো জোড়া গোল করলেও ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে অমিমাংসিত ছিল। নক আউট পর্বে যখনই এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছে তখনই বিজয়ী দল শিরোপা জিতেছে। প্যারিসে ২০১৬ ইউরো ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের গোলে পর্তুগাল জয়ী হয়েছিল। ইউরো ৮৪’তে মিশেল প্লাতিনির অতিরিক্ত সময়ের গোলে সেমিফাইনালে ফ্রান্স জয়ী হয়েছিল। ২০০০ সালের সেমিফাইনালে জিনেদিন জিদানের পেনাল্টিতে গোল্ডেন গোলে ফ্রান্স জয়ী হয়েছিল।

এছাড়াও ঠিক ১৮ বছর আগে মিউনিখে ২০০৬ বিশ^কাপের সেমিফাইনালে আবারো জিদান ফ্রান্সকে জয় উপহার দিয়েছিলেন। এবারের ইউরোই রোনাল্ডোর শেষ ইউরোপীয়ান আসর হতে যাচ্ছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৭:৪৭:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪
৩২ বার পড়া হয়েছে

কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি এমবাপ্পে-রোনাল্ডো

আপডেট সময় ০৭:৪৭:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

আগামীকাল ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে পর্তুগাল। এই ম্যাচের মাধ্যমে আবারো দুই পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী নিজেদের মধ্যকার প্রতিযোগিতা ঝালিয়ে নেবার সুযোগ পাচ্ছে। সব ছাপিয়ে অবশ্য দুই দলের দুই অধিনায়ক ও সুপারস্টার কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর উপরই পুরো বিশে^র নজড় থাকবে।

হামবুর্গে শেষ আটের এই লড়াইয়ে ইউরোপের দুই ফুটবল পাগল জাতি নিজেদের এগিয়ে নেবার জন্যই মাঠে নামবে। কিন্তু দুই দলের কেউই এখন পর্যন্ত জার্মানিতে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। ফ্রান্স গত সাতটি বড় টুর্নামেন্টের ছয়টিতে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোন খেলোয়ারই পেনাল্টি ছাড়া ওপেন প্লেতে কোন গোল করতে পারেনি। এনিয়ে চার ম্যাচে তারা মাত্র তিনটি গোল করেছে। এর মধ্যে এমাবাপ্পে একটি করেছে পেনাল্টি থেকে। বাকি দুটি হয়েছে আত্মঘাতি গোল। শেষ ষোলতে ইয়ান ভারটোনগেনের আত্মঘাতি গোলে বেলজিয়ামকে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পেয়েছে ফ্রান্স।

অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নাক ভেঙ্গে যাওয়ায় এমবাপ্পে খুব একটা স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারছেন না। তার উপর মাস্ক পড়ে খেলা সবসময়ই অস্বস্তির। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে ফ্রান্স গোলশুন্য ড্র করেছিল। ইনজুরির কারনে এই ম্যাচটি খেলতে পারেননি এমবাপ্পে। পোল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে মাঠে ফিরে স্পট কিক থেকে এক গোল করেন। এটাই এমবাপ্পের এখনো পর্যন্ত ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে সাত ম্যাচে প্রথম গোল।

ফ্রান্সের সহকারী কোচ গাই স্টিফেন বলেছেন, ‘প্রথম ম্যাচের ইনজুরি তাকে পিছিয়ে দিয়েছে। যদিও এটা কোন যুক্তি নয়, কিন্তু ঐ ট্রমা থেকে তিনি বেরুতে পারেননি। মাস্ক পড়ে খেলা মোটেই সহজ নয়, এটা এমবাপ্পে নিজেও স্বীকার করেছেন। মৌসুমের শেষে এমবাপ্পে কিছুটা পরিশ্রান্তও ছিলেন। কিন্তু কিলিয়ানের তুলনা তিনি নিজেই। ২০২১ সালের পর থেকে প্রায় প্রতি ম্যাচেই সে দলের হয়ে গোল করেছে।’এ পর্যন্ত চার ম্যাচে ফ্রান্স একটি মাত্র গোল হজম করেছে। সেটাও আবার পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে রবার্ট লিওয়ানদোস্কির গোল ছিল।অন্যদিকে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলতে ১২০ মিনিট গোলশুন্য থাকার পর শ্যুট আউটে জয়ী হয়ে পর্তুগাল শেষ আটের টিকেট পেয়েছে। গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তা স্লোভেনিয়ার তিনটি শটই রুখে দিয়ে পর্তুগালকে জয় উপহার দিয়েছেন। অতিরিক্ত সময়ে রোনাল্ডো পেনাল্টি মিস করায় ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারনে পেনাল্টি শ্যুট আউটের প্রয়োজন হয়। ঐ ম্যাচে বেশ কিছু গোলের সুযোগ নষ্ট করায় ৩৯ বছর বয়সী রোনাল্ডোর নামের পাশে সবচেয়ে বেশী বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোতে গোল করার রেকর্ডটি যোগ হয়নি। এই গোল মিস হবার পর রোনাল্ডো কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। দলে আরো অনেক প্রতিভা থাকলেও পর্তুগাল যখনই মাঠে নামে তখনই সবার দৃষ্টি থাকে সাবেক এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকার উপর। রোনাল্ডো নিজেও জানেন তার উপর পুরো দল কতটা নির্ভর করে। কোচ রবার্তো মার্টিনেজও রোনাল্ডোকে ছাড়া কিছুই চিন্তা করতে পারেননা।

শেষ ষোলর ম্যাচের পর মার্টিনেজ বলেছেন, ‘একজন খেলোয়াড় যে কিনা সব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, দেশের জন্য অনেক কিছু অর্জন করেছেন তার জন্য এই ধরনের আবেগ স্বাভাবিক। তার এই আবেগ না দেখালেও চলতো। এ কারনেই আমি তাকে এতটা পছন্দ করি। রোনাল্ডো এমনই।’

ডিফেন্ডার নুনো মেনডেস বলেছেন, ‘আমাদের দলে সবাই একসাথে একটি দল হিসেবে খেলতে নামি। এটাই এই দলের শক্তি। সকলের এই একাত্মতার কারনেই কস্তা তিনটি পেনাল্টি সেভ করেছে।’

গ্রুপের প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও চেক প্রজাতন্ত্রকে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করেছিল পর্তুগাল। এরপর তুরষ্ককে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয়। সে কারনে বলাই যায় ফ্রান্সের তুলনায় তারা গোল করার ক্ষেত্রে অন্তত এগিয়ে রয়েছে। যদিও উজ্জীবিত জর্জিয়ার কাছে ২-০ গোলের হারের মধ্য দিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করেছিল পর্তুগীজরা। যদিও তার আগেই গ্রুপের শীর্ষস্থান নিশ্চিত হয়েছিল দলটির।

শক্তিশালী ও জেদী ফরাসি রক্ষনভাগকে ফাঁকি দিয়ে এখন পর্তুগাল গোলের পথ খোঁজার চেষ্টার করবে। ২০২২ বিশ^কাপ রানার্স-আপ দলের কোচ দিদিয়ের দেশ্যমকে অবশ্য নিষেধাজ্ঞায় থাকা তারকা আদ্রিয়েন রাবোয়িতের স্থানে মধ্যমাঠে বদলী খেলোয়াড় বেছে নিতে হবে।

তিন বছর আগে এই দুই দল ইউরোতে গ্রুপ পর্বে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। পেনাল্টি থেকে রোনাল্ডো জোড়া গোল করলেও ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে অমিমাংসিত ছিল। নক আউট পর্বে যখনই এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছে তখনই বিজয়ী দল শিরোপা জিতেছে। প্যারিসে ২০১৬ ইউরো ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের গোলে পর্তুগাল জয়ী হয়েছিল। ইউরো ৮৪’তে মিশেল প্লাতিনির অতিরিক্ত সময়ের গোলে সেমিফাইনালে ফ্রান্স জয়ী হয়েছিল। ২০০০ সালের সেমিফাইনালে জিনেদিন জিদানের পেনাল্টিতে গোল্ডেন গোলে ফ্রান্স জয়ী হয়েছিল।

এছাড়াও ঠিক ১৮ বছর আগে মিউনিখে ২০০৬ বিশ^কাপের সেমিফাইনালে আবারো জিদান ফ্রান্সকে জয় উপহার দিয়েছিলেন। এবারের ইউরোই রোনাল্ডোর শেষ ইউরোপীয়ান আসর হতে যাচ্ছে।