বিশ্বনাথে দেড়যুগ পর ঐতিহ্যের ঘোড়ার দৌড়
চিরায়ত বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যের অনেক কিছুই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তারমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে ‘ঘোড়ার দৌড়’ বা ঘোড়দৌড়। কালের পরিক্রমায় আজ বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণমূলক এ খেলাটি। তবে দেশের কোথাও কোথাও এখনও এটি সবান্ধব উপস্থিতিতে গ্রাম-জনপদের প্রভাবশালী সংগঠকেরা এখনও এ খেলার আয়োজন করে বাংলার ঐতিহ্যটি ধরে রাখার নিরন্তর চেষ্টা করে থাকেন। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রাখতে দীর্ঘ দেড়যুগ পর সিলেটের বিশ্বনাথের চউলধলী হাওরে তিনদিন ব্যাপী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ প্রতিযোগিতার সমাপ্ত হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন দৌলতপুর গ্রামবাসী।
এসো দেশ বদলাই-পৃথিবী বদলাই স্লোগান নিয়ে সামনে রেখে শুরু হওয়া ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগীতায় ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন মাহিনরাজা ও রানারআপ সুনারপুতুল হয়েছে।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় গিয়ে দেখা যায়, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ ঘোড়ার দৌড় দেখতে হাজার হাজার দর্শক মিলিত হন। আর প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সিলেট বিভাগসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১২৬টি শখের ঘোড়া নিয়ে আসেন মালিকরা। জিতে নেন টিভি, ভেড়া, ইস্ত্রি, কলস, ছাতাসহ বিভিন্ন পুরুষ্কার। পাশাপাশি শোনা যায় সালমান শাহ, বাংলার ধন, সোনার মডেল, এমরান বাদশা, দুইবোনের মায়া, টিপু সুলতান, শাপলা, খান বাহাদুর, প্রীতিরাজ, হিরো আলম, জগৎবাদশা, লিভারপুল, সোনামানিক, লালগোলাপ, বনরাজসহ আকর্ষনীয় সব ঘোড়ার নাম।
সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে এমরান বাদশা নামের ঘোড়া নিয়ে এসেছেন সত্তরোর্ধ আরজুম আলী। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, তিনি ছোটকাল থেকেই ঘোড়া পালন করেন। এটা শুধুমাত্র শখের বসে।
ইশান মিয়া নামের এক যুবক বলেন, ছোটবেলায় দাদার মুখে শুনেছেন বিশ্বনাথের বিভিন্ন স্থানে ঘোড়দৌড় হতো। জীবনের প্রথম ঘোড়ার দৌড় দেখে খুবই আনন্দিত তিনি।
সৌখিন ঘোড়ামালিক ছালিয়া দশঘর গ্রামের বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, তিনি যুক্তরাজ্য থেকে এসেছেন। এ মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় তার ৫ লাখ টাকা দামের সোনার মডেল নামের ঘোড়া নিয়ে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিবেন।
প্রতিযোগিতা কমিটির অন্যতম দায়িত্বশীল সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ধন মিয়া যায়যায়দিনকে বলেন, চাউলধনী হাওরে প্রায় দেড়যুগ পরে এ ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠিত হলো। ৩ দিনের এ আয়োজন শেষে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া বিজয়ী ঘোড়ার সাওয়ারদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। গ্রামীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও মাদক মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে এ আয়োজন করা হয়।