ঢাকা ০২:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo সাতছড়ি, রেমা-কালেঙ্গাঘেরা চুনারুঘাটে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা, অভাব পরিকল্পনার Logo দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে হবিগঞ্জের নদ-নদী Logo শায়েস্তাগঞ্জ অলিপুর পুলিশ ক্যাম্প চালু হওয়ায় শিল্প এলাকার বেড়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা Logo নবীগঞ্জে টমটম-সিএনজি ভাড়া নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত অর্ধশত Logo পর্যটন শিল্পে সম্ভবনাময় উপজেলা চুনারুঘাট Logo বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিতে জানে, চক্রান্ত করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না- জি কে গউছ Logo মাধবপুরে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ আটক ২ Logo শায়েস্তাগঞ্জে মামলার জেরে দুই পরিবারকে সমাজচ্যুতের অভিযোগ Logo বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হবিগঞ্জ বিএনপির সভাপতি হচ্ছেন গউছ Logo হবিগঞ্জে পৃথক ঘটনায় ২ জন নিহত

ভাষার কান্ডারী ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ৫৫তম প্রয়াণ দিবস আজ

শায়েস্তাগঞ্জের বাণী ডেস্ক ,

অজানাকে জানা বা নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পড়ার প্রতি এতটাই আগ্রহ ছিলো যে, একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে আটকা পড়ে যান। বইয়ের ঘোর নেশায় পরে পৃথিবীর আলো সরে গিয়ে কখন যে অন্ধকার নেমে এসেছিলো তা টের পাননি। যতক্ষণে টের পান ততক্ষণে লাইব্রেরির দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দিব্যজ্ঞান সন্ধানে নিমগ্ন থাকা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ৮৪বছর জীবনের পুরোটাই ব্যয় করেছেন কেবল জানা এবং জানানোর উদ্দেশ্যে।

আত্মিক জ্ঞান চর্চা তাঁকে উপহার দিয়েছে অনন্য এক জীবন। পৃথিবীর প্রায় ২৪ টি ভাষার দখলদারিত্ব নিজের কাছে রেখে ছিলেন।ভাষা গবেষণা, সম্পাদনা, অনুবাদ, কখনওবা সুফিবাদের জ্ঞানের আলো প্রচারে নিজেকে বিলিয়েছেন পূর্নরূপে। যে কারণে তাঁকে ডাকা হতো “চলমান বিশ্বকোষ” বলে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা গবেষণায় নিজের উপস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রেখেছেন।

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন একাধারে ভাষাবিদ, গবেষক, লোকবিজ্ঞানী, অনুবাদক, পাঠক সমালোচক, সৃষ্টিধর্মী সাহিত্যিক, কবি ও ভাষাসংগ্রামী।ভারতীয় উপমহাদেশে ইরানি কবি ওমর খৈয়াম ও হাফিজকে বাংলা ভাষায় প্রথম পরিচয় ঘটিয়ে দেন তাদেরকে অনুবাদ করে। নিজের ভাষার প্রতি আগ্রহ ও শ্রদ্ধা রেখে সম্পাদনা করেছেন আলাওলের পদ্মাবতী ও পূর্ব পাকিস্তানি আঞ্চলিক ভাষার অভিধান। মাসিক আল ইসলাম, ত্রৈমাসিক বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা ও শিশুদের মাসিক পত্রিকা আঙুরের সম্পাদনা করেছেন জ্ঞানতাপস শহীদুল্লাহ্। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলা সাহিত্যের কথা (দুই খণ্ড)’ এবং ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’।

ভাষার একাডেমিক জ্ঞান, গবেষণা, পরিচর্যার জন্য নিজস্ব জায়গা থাকার প্রয়োজনীয়তা থেকে তিনিই প্রথম বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলা একাডেমি।

ঢাকা সংস্কৃত পরিষদ থেকে বিদ্যাবাচস্পতি’ খ্যাত বহুভাষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ৫৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ৮৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের কাছে ঐতিহাসিক মুসা মসজিদের উত্তর-পশ্চিম পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। ভাষাক্ষেত্রে তাঁর অমর অবদানের জন্য সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘শহীদুল্লাহ হল’।১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিম বাংলার চব্বিশ পরগনার বশিরহাট মহকুমার পেয়ারা গ্রামের এক প্রখ্যাত সুফি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ।

১৯০৪ সালে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং ১৯০৬ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ (বর্তমান এইচএসসির সমমান) পাস করেন। ১৯১০ সালে কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে বিএ অনার্স এবং ১৯১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। এরপর উচ্চতর ডিগ্রির জন্য চলে যান ইউরোপে।

এরপর প্যারিসের সরোবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল, বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

পাকিস্তানের প্রাইড অব পারফরম্যান্স পদকসহ হিলাল ই ইমতিয়াজ খেতাব, নাইট অব দ্য অর্ডারস অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স, স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কার, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, প্যারিসের সরোবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডি. লিট উপাধি লাভ করেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০১:০৫:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪
২৫৫ বার পড়া হয়েছে

ভাষার কান্ডারী ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ৫৫তম প্রয়াণ দিবস আজ

আপডেট সময় ০১:০৫:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

অজানাকে জানা বা নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পড়ার প্রতি এতটাই আগ্রহ ছিলো যে, একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে আটকা পড়ে যান। বইয়ের ঘোর নেশায় পরে পৃথিবীর আলো সরে গিয়ে কখন যে অন্ধকার নেমে এসেছিলো তা টের পাননি। যতক্ষণে টের পান ততক্ষণে লাইব্রেরির দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দিব্যজ্ঞান সন্ধানে নিমগ্ন থাকা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ৮৪বছর জীবনের পুরোটাই ব্যয় করেছেন কেবল জানা এবং জানানোর উদ্দেশ্যে।

আত্মিক জ্ঞান চর্চা তাঁকে উপহার দিয়েছে অনন্য এক জীবন। পৃথিবীর প্রায় ২৪ টি ভাষার দখলদারিত্ব নিজের কাছে রেখে ছিলেন।ভাষা গবেষণা, সম্পাদনা, অনুবাদ, কখনওবা সুফিবাদের জ্ঞানের আলো প্রচারে নিজেকে বিলিয়েছেন পূর্নরূপে। যে কারণে তাঁকে ডাকা হতো “চলমান বিশ্বকোষ” বলে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা গবেষণায় নিজের উপস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রেখেছেন।

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন একাধারে ভাষাবিদ, গবেষক, লোকবিজ্ঞানী, অনুবাদক, পাঠক সমালোচক, সৃষ্টিধর্মী সাহিত্যিক, কবি ও ভাষাসংগ্রামী।ভারতীয় উপমহাদেশে ইরানি কবি ওমর খৈয়াম ও হাফিজকে বাংলা ভাষায় প্রথম পরিচয় ঘটিয়ে দেন তাদেরকে অনুবাদ করে। নিজের ভাষার প্রতি আগ্রহ ও শ্রদ্ধা রেখে সম্পাদনা করেছেন আলাওলের পদ্মাবতী ও পূর্ব পাকিস্তানি আঞ্চলিক ভাষার অভিধান। মাসিক আল ইসলাম, ত্রৈমাসিক বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা ও শিশুদের মাসিক পত্রিকা আঙুরের সম্পাদনা করেছেন জ্ঞানতাপস শহীদুল্লাহ্। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলা সাহিত্যের কথা (দুই খণ্ড)’ এবং ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’।

ভাষার একাডেমিক জ্ঞান, গবেষণা, পরিচর্যার জন্য নিজস্ব জায়গা থাকার প্রয়োজনীয়তা থেকে তিনিই প্রথম বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলা একাডেমি।

ঢাকা সংস্কৃত পরিষদ থেকে বিদ্যাবাচস্পতি’ খ্যাত বহুভাষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ৫৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ৮৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের কাছে ঐতিহাসিক মুসা মসজিদের উত্তর-পশ্চিম পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। ভাষাক্ষেত্রে তাঁর অমর অবদানের জন্য সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘শহীদুল্লাহ হল’।১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিম বাংলার চব্বিশ পরগনার বশিরহাট মহকুমার পেয়ারা গ্রামের এক প্রখ্যাত সুফি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ।

১৯০৪ সালে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং ১৯০৬ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ (বর্তমান এইচএসসির সমমান) পাস করেন। ১৯১০ সালে কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে বিএ অনার্স এবং ১৯১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। এরপর উচ্চতর ডিগ্রির জন্য চলে যান ইউরোপে।

এরপর প্যারিসের সরোবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল, বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

পাকিস্তানের প্রাইড অব পারফরম্যান্স পদকসহ হিলাল ই ইমতিয়াজ খেতাব, নাইট অব দ্য অর্ডারস অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স, স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কার, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, প্যারিসের সরোবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডি. লিট উপাধি লাভ করেন।