মহসিন হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে বক্তারা -শায়েস্তাগঞ্জে হাইওয়ে পুলিশ চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত সড়কের নিরাপত্তায় নেই
হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশ চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত রয়েছে। তারা মহাসড়কে গাড়ী আটক করে কাগপত্র যাচাই-বাছাইয়ের নামে চাঁদা আদায় করছে। তারা মহাসড়কের নিরাপত্তায় নেই। এ কারণেই মহাসড়কে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। রাতে তাদের টহল তেমন একটা নেই বলেই ডাকাতদলের হামলায় বিএনপি নেতা ব্যবসায়ী মহসিন মিয়া হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। এভাবে একটা শহর চলতে পারে না। হাইওয়ে ও শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসিদেরকে বদলি করতে হবে। এখানে নতুন যোগ্য ওসিদের নিয়োগ করতে হবে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ডাকাতদলের হামলায় হবিগঞ্জ শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন রোডের ব্যবসায়ী গ্রামীণ টেলিকম এন্ড ইলেক্ট্রনিক্সের মালিক বিএনপি নেতা মোঃ মহসিন মিয়া হত্যার সুবিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা বলেন- মহসিনের জানাজায় ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। এখানে পুলিশ ডাকাতির সাথে জড়িতদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
শুক্রবার পর্যন্ত সময় দিয়ে বক্তারা বলেন- চিহ্নিত অপরাধীরা গ্রেপ্তার না হলে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ছোট এ শহরে শায়েস্তাগঞ্জ থানা, হাইওয়ে থানা, র্যাব ক্যাম্প, রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও ট্রাফিক জোনের কার্যক্রম থাকার পরও মহাসড়কে কিভাবে ডাকাতি সংঘটিত হচ্ছে। তাদের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সর্বস্তরের নাগরিক সমাজের উদ্যোগে এ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপি সভাপতি নূরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী বেলাল, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু তাহের, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব নূরুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আ স ম আফজল আলী, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুল আজিজ ফরহাদ, উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক অলি উল্লাহ জহির, সেক্রেটারী মোঃ ইয়াছির খাঁন, ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল সহিদ, মেম্বার আব্দুস সালাম, মেম্বার মোঃ খলিলুর রহমান, সমাজসেবক ইব্রাহিম মিয়া, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ ইলিয়াস মিয়া, শায়েস্তাগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মঈনুল হাসান রতন, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মিজানুর রহমান সুমন, ব্যবসায়ী নেতা শফিক মিয়া ভান্ডারী, আব্দুল কাইয়ূম তালুকদার সেলিম, মনিরুল হক তালুকদার রানা, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সানাউল হক তালুকদার, সাবেক কাউন্সিলর মোঃ মাসুক মিয়া, জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। মানববন্ধনে নিহত মহসিন মিয়ার দুই শিশু পুত্র উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এতে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিকসহ তৃণমূল পর্যায়ের লোকেরা অংশগ্রণ করেন।
এর আগে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা খেলার মাঠের কাছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ডাকাতদের হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় আহত মহসিন মিয়াকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্বজনরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এর নিকট আবেদন করে ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ বাড়ি নিয়ে এসে দাফন করেন। মহসিন মিয়া জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নিশাপট গ্রামের মৃত হাজী আব্দুর রহিম মাস্টারের বড় ছেলে ও উপজেলা বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক।
স্থানীয়রা জানান, রোববার মধ্যরাতে মোটরসাইকেল করে বাড়িতে যাওয়ার সময় ডাকাতদলের কবলে পড়েন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ ইলিয়াস মিয়া ও ব্যবসায়ী বিএনপি নেতা মহসিন মিয়া। এ সময় ডাকাতদল মোটরসাইকেল, মোবাইল ও টাকা লুট করে নেয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানা, হাইওয়ে থানাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে এলে ডাকাতদের হাত থেকে মোঃ ইলিয়াস মিয়া প্রাণে রক্ষা পান। কিন্তু ব্যবসায়ী মহসিন মিয়াকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাকে উপজেলার খেলার মাঠে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ খেলার মাঠের কাছে মড়রা-কাজিরগাঁও রাস্তার মুখে একাধিকবার ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। থানার সামনে এ রাস্তায় এভাবে ডাকাতির ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার টহল কার্যক্রম নিয়েও। রাতে তাদের টহল কোথায় থাকে। হাইওয়ে পুলিশের নিয়মিত টহল থাকলে ডাকাতি হওয়ার কথা নয়।
শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কান্ত নাথ জানান- বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। ডাকাতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। একজনকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে। এ ঘটনা জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম মাহমুদুল হক বলেন- মহাসড়কে আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত এরিয়া ৫৬ কিলোমিটার। সড়কে সার্বক্ষণিক টহল রয়েছে। কোন প্রকারের অবহেলা করা হচ্ছে না। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দেওয়া হচ্ছে। সড়কে টহল আরো জোরদার করা হয়েছে। গাড়ী আটক করে চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।