মাধবপুরে সরকারের দুই চা বাগানে শ্রমিকের রেশন তলব বন্ধ
হবিগঞ্জের মাধবপুরে সরকার মালিকানাধীন জগদীশপুর ও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে টাকার অভাবে বাগানে কর্মরত শ্রমিকের রেশন তলব পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ন্যাশনাল টি কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদ বাগানে ম্যানেজারদের টাকা না দেওয়ায় দুটো বাগানের শত শত শ্রমিকের পাওনা বকেয়া রয়েছে।
দরিদ্র শ্রমিক পরিবার এখন তাদের মজুরি ও রেশন না পেয়ে তাদের পরিবার খুব কষ্টে জীবিকানির্বাহ করছে। এ নিয়ে চা বাগানে শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
জগদীশপুর ও তেলিয়াপাড়া চা বাগানের শ্রমিকরা জানান, ১৭০ টাকা দৈনিক হাজিরায় তারা চা বাগানে ৮ ঘণ্টা কাজ করে আসছে। এই সামান্য মজুরি এবং সপ্তাহে যে পরিমাণ আটা দেওয়া হয় তা দিয়ে কোন ভাবেই তাদের সংসার চলে না। এরপরও বিকল্প কোন কাজ না থাকায় অবহেলিত শ্রমিকরা স্বল্প সুবিধায় বাগানে বাধ্য হয়ে কাজ করছে। স্বল্প মজুরি দিয়ে পরিবারের অন্যান্য খরচ মেটানো খুবই কঠিন। এখন কাজ করার পরও গত ৩/৪ সপ্তাহ ধরে বাগানে শ্রমিকদের সাপ্তাহিক রেশন তলব পরিশোধ করা হচ্ছে না। বাগান কর্তৃপক্ষ আর্থিক সংকটের অজুহাত দেখিয়ে এখন শ্রমিকের মজুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে চা বাগানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কারণ দুটো চা বাগানে প্রায় ১০ হাজার হাজার পরিবার বাগানের কাজের ওপর নির্ভরশীল। কাজ বন্ধ হয়ে গেলে বাগানে মারাত্মক অভাব দেখা দেবে।
জগদীশপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা রমেশ কৈরি বলেন, বাগানের মানুষ সপ্তাহ যে রেশন তলব পায় তা দিয়ে এক সপ্তাহ টেনেটুনে কোন রকম সংসার চালায়। এখন দ্রব্যমূল্যের দাম খুব বেশি তাই দৈনিক ১৭০ টাকার তলবে কোন ভাল খাবার কিনে খাওয়া যায় না। শ্রমিকরা কোন রকম খাবার খেয়ে জীর্ণশীর্ণ কুঁড়েঘর জীবন কাটায়।
জগদীশপুর চা বাগানে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রেশন তলব বন্ধ রয়েছে। কোম্পানির অর্থ সংকট থাকায় ব্যাংক থেকে এখন টাকা মিলছে না। এ কারণে শ্রমিকের টাকা দেওয়া হচ্ছেনা। মজুরি রেশন না পেয়েও শ্রমিকরা কাজ করে যাচ্ছে।
তেলিয়াপাড়া চা বাগানের শ্রমিক নেতা বীরেন বুনার্জি বলেন, চা বাগানে শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা না পেয়ে তারা অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। মজুরি রেশন না শ্রমিকরা বাগানে আন্দোলন করছে।
জগদীশপুর চা বাগানের ম্যানেজার লিমন ফকির বলেন, প্রতি বছর এখন চা বাগানে মোটা অংকের লোকসান হয়। কারণ দিন দিন চায়ের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু চায়ের দর বাড়ছে না। এখন শ্রমিকদের মজুরি রেশনসহ যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করতে কোম্পানিকে কঠিন বেগ পেতে হচ্ছে। কোম্পানির টাকা না থাকায় এখন বাগানে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করতে কোম্পানি আন্তরিক রয়েছে। টাকা ম্যানেজ হলেই তাদের সমস্যা মিটে যাবে।