ঢাকা ০৭:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারকে ধ্বংস করছে জান্তা সরকার: জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলেও এখন মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ‘দেশটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না’। মিয়ানমারে সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চীনের মধ্যস্থতায় এ বছরের জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দেয়া হলেও সেটি জান্তার সদিচ্ছার অভাবে ভেস্তে গেছে। খবর আরব নিউজের।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। অভ্যুত্থান রক্তপাতহীনভাবে হলেও কয়েক দিন পর দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে রক্তাক্ত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অভ্যুত্থানের পর দেশটির উত্তরাঞ্চলে যে লড়াই ছড়িয়ে পড়েছিল, তা বন্ধে চীনের উদ্যোগে এ বছর জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়েছিল।

ওই চুক্তিকে অকার্যকর করে দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘুদের সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর একটি জোটের সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর জোট একের পর এক সীমান্তবর্তী শহর ও অঞ্চলের দখল নিচ্ছে।

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদকে অ্যান্ড্রুস বলেন, ‘জান্তা বাহিনীর সময় ফুরিয়ে আসছে। তাদের সেনাসদস্যরা মারা পড়ছেন, তাদের সামরিক সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, তারা সত্যিই হেরে যাচ্ছে। এখন এটাই মনে হচ্ছে, জান্তা বাহিনী একটি দেশকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যেটি তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।’

এদিকে জাতিসংঘ বলছে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হলে দেশটিতে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। জান্তা যেভাবে সাধারণ জনগণের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে তাতে দেশটি এখন নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্রগোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ২০২১ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপরই দেশটিতে সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে সাধারণ জনগণ। জোট গঠন করে তার সেনাদের বিভিন্ন রাজ্যে ইতোমধ্যে পরাজিত করেছে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুস মিয়ানমারের প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার কাছে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘জান্তা ক্রমেই দেশটির ওপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। তাদের বহু সেনা হতাহত হয়েছে। এটি আক্ষরিক অর্থেই জান্তার পরাজয়।’

টম আরো বলেন, ‘জান্তা ক্রমেই ধ্বংসাত্মক আচরণ করছে। গত ৬ মাসে দেশটিতে স্কুল, হাসপাতাল এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জান্তা দেশটিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে মেতেছে।

জান্তাবিরোধী জোট কয়েকদিনের সংঘর্ষের পর এই সপ্তাহের শুরুতে চীনের ইউনান প্রদেশের সঙ্গে সংযোগ আছে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক মহাসড়ক ও এর পার্শ্ববর্তী শহর নিজেদের দখলে নিয়েছে।

উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে জুনের শেষের দিকে যুদ্ধ ব্যাপক আকার ধারণ করে। জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন করে হামলা চালায়।

পরে চলমান সংঘর্ষ বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এলেও সেটি নাকচ করে দিয়েছে আরাকান আর্মি, মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সমন্বিত জোট।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:০৭:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪
২৬ বার পড়া হয়েছে

মিয়ানমারকে ধ্বংস করছে জান্তা সরকার: জাতিসংঘ

আপডেট সময় ০৮:০৭:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলেও এখন মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ‘দেশটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না’। মিয়ানমারে সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চীনের মধ্যস্থতায় এ বছরের জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দেয়া হলেও সেটি জান্তার সদিচ্ছার অভাবে ভেস্তে গেছে। খবর আরব নিউজের।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। অভ্যুত্থান রক্তপাতহীনভাবে হলেও কয়েক দিন পর দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে রক্তাক্ত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অভ্যুত্থানের পর দেশটির উত্তরাঞ্চলে যে লড়াই ছড়িয়ে পড়েছিল, তা বন্ধে চীনের উদ্যোগে এ বছর জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়েছিল।

ওই চুক্তিকে অকার্যকর করে দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘুদের সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর একটি জোটের সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর জোট একের পর এক সীমান্তবর্তী শহর ও অঞ্চলের দখল নিচ্ছে।

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদকে অ্যান্ড্রুস বলেন, ‘জান্তা বাহিনীর সময় ফুরিয়ে আসছে। তাদের সেনাসদস্যরা মারা পড়ছেন, তাদের সামরিক সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, তারা সত্যিই হেরে যাচ্ছে। এখন এটাই মনে হচ্ছে, জান্তা বাহিনী একটি দেশকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যেটি তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।’

এদিকে জাতিসংঘ বলছে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হলে দেশটিতে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। জান্তা যেভাবে সাধারণ জনগণের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে তাতে দেশটি এখন নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্রগোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ২০২১ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপরই দেশটিতে সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে সাধারণ জনগণ। জোট গঠন করে তার সেনাদের বিভিন্ন রাজ্যে ইতোমধ্যে পরাজিত করেছে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুস মিয়ানমারের প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার কাছে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘জান্তা ক্রমেই দেশটির ওপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। তাদের বহু সেনা হতাহত হয়েছে। এটি আক্ষরিক অর্থেই জান্তার পরাজয়।’

টম আরো বলেন, ‘জান্তা ক্রমেই ধ্বংসাত্মক আচরণ করছে। গত ৬ মাসে দেশটিতে স্কুল, হাসপাতাল এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জান্তা দেশটিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে মেতেছে।

জান্তাবিরোধী জোট কয়েকদিনের সংঘর্ষের পর এই সপ্তাহের শুরুতে চীনের ইউনান প্রদেশের সঙ্গে সংযোগ আছে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক মহাসড়ক ও এর পার্শ্ববর্তী শহর নিজেদের দখলে নিয়েছে।

উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে জুনের শেষের দিকে যুদ্ধ ব্যাপক আকার ধারণ করে। জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন করে হামলা চালায়।

পরে চলমান সংঘর্ষ বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এলেও সেটি নাকচ করে দিয়েছে আরাকান আর্মি, মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সমন্বিত জোট।