ঢাকা ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo হবিগঞ্জে ছুরিকাঘাতে এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত Logo শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড Logo নবীগঞ্জে দুর্ঘটনা, নারীসহ নিহত ২ Logo মাধবপুর বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০ Logo হবিগঞ্জে ভুয়া চিকিৎসকের একমাসের কারাদণ্ড Logo স্বৈরাচার পতনে ১৬ বছর অপেক্ষা নয়, তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Logo বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। Logo হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা Logo নবীগঞ্জ মসজিদে মাইকিং করে পুলিশের ওপর হামলা, আসামি ছিনতাই আটক ১৩ Logo চুনারুঘাটে হত্যা মামলার আসমী আ. মান্নান আটক-তাবলীগ জামাতে গিয়ে অপহরণ মামলা সাজিয়েছেন

শায়েস্তাগঞ্জে জহুরচাঁন বিবি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট দানবীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আব্দুল কবিরের ইন্তেকাল

শায়েস্তাগঞ্জের বাণী ডেস্ক ,

হবিগঞ্জের শিক্ষা বিস্তারে অনবদ্য রেখে না ফেরার দেশে চলে গেছেন শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার সাবাসপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আব্দুল কবির (৭১)। সোমবার (৩ মার্চ) সকাল সোয়া দশটায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আব্দুল কবির হবিগঞ্জের শিক্ষাবিস্তােের ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। তিনি জায়গা ও অর্থ দিয়ে নিজ গ্রামে মায়ের নামে ‘জহুর চান বিবি মহিলা কলেজ’ এবং হবিগঞ্জের আনন্দপুরে নিজের নামে কবির কলেজিয়েট একাডেমি স্থাপন করেন। সাবাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাবাসপুর জামে মসজিদ, শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজে মসজিদুল আমিন, বাবার নামে বিরামচর গ্রামে আশরাফ উল্লাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসাসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তিনি নির্মাণ করেছেন নিজ অর্থে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আব্দুল কবির ১৯৫৩ সালে ৩১ ডিসেম্বর সাবাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বৃন্দাবন সরকারি কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭১ সালে তিনি শায়েস্তাগঞ্জ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি ক্যাপেটন এজাজ আহমদ চৌধুরীর অধীনে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজরের বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্রে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। স্বাধীনাতার পরে তিনি ব্যবসার সাথে জড়িত হন। ১৯৭৬ সালে তিনি আশরাফিয়া লাইব্রেরী ও ১৯৮৪ সালে নিশান ওভারসীজ পরে আইডিয়াল বিজনেস সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি জনশক্তি রপ্তানীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। হবিগঞ্জ সমিতি, জালালাবাদ এসাসিয়েশন ও হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের তিনি আজীবন সদস্য ছিলেন।
ধর্মভীরু আাব্দুল কবির নিজের পৈত্রিক ভিটাও মসজিদে দান করেছেন। যার ভাড়ায় মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিজের সম্মানি দেওয়া হয়। তাঁর মৃত্যুতে মরহুমের নিজ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। মরহুম আলহাজ মুহাম্মদ আব্দুল কবির জীবদ্দশায় ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুশাসনগুলো মেনে চলার আমৃত্যু চেষ্টা করে গেছেন। সদালাপী, দানশীল, পরোপকারী ও সহজ-সরল প্রকৃতির আব্দুল কবির অসংখ্যবার পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেছেন এবং নিজ টাকায় এলাকার অনেককে হজ্ব করার সুযোগ দিয়েছেন। তিনি সবসময় অগ্রসর চিন্তা করতেন। ব্যবসায়িক মনোভাবকে উপেক্ষা করে তিনি কেবল ভবিষ্যত প্রজন্মকে জ্ঞানের আলোয় শিক্ষিত করতেই প্রতিষ্ঠা করেছেন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও অসংখ্য মসজিদ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। মানবসেবায় ব্রতী আব্দুল কবির নিজে সংসারী না হলেও রেখে গেছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী, অসংখ্য শিক্ষক, আত্মীয়-স্বজনসহ বহু গুণগ্রাহী। চির কুমার মুক্তিযোদ্ধা কবির অগণিত শিক্ষার্থীকেই মনে করতেন তাঁর সন্তান। মরহুমের বড় ভাই সিরাজ হক ছিলেন সুসাহিত্যিক, জেলা শিক্ষা অফিসার ও বানিয়াচং সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। মেঝো ভাই আব্দুস শহীদ একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানো ও সর্বশেষ একনজর তাঁকে দেখার জন্য তাঁর মরদেহ তাঁর নিজ হাতে গড়া জহুর চান বিবি মহিলা কলেজ মাঠে রাখা হবে। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল এগারোটায় জহুর চান বিবি মহিলা কলেজ মাঠে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে এই সূর্য সন্তানেকে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৪:৫৪:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫
৪৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

শায়েস্তাগঞ্জে জহুরচাঁন বিবি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট দানবীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আব্দুল কবিরের ইন্তেকাল

আপডেট সময় ০৪:৫৪:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫

হবিগঞ্জের শিক্ষা বিস্তারে অনবদ্য রেখে না ফেরার দেশে চলে গেছেন শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার সাবাসপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আব্দুল কবির (৭১)। সোমবার (৩ মার্চ) সকাল সোয়া দশটায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আব্দুল কবির হবিগঞ্জের শিক্ষাবিস্তােের ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। তিনি জায়গা ও অর্থ দিয়ে নিজ গ্রামে মায়ের নামে ‘জহুর চান বিবি মহিলা কলেজ’ এবং হবিগঞ্জের আনন্দপুরে নিজের নামে কবির কলেজিয়েট একাডেমি স্থাপন করেন। সাবাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাবাসপুর জামে মসজিদ, শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজে মসজিদুল আমিন, বাবার নামে বিরামচর গ্রামে আশরাফ উল্লাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসাসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তিনি নির্মাণ করেছেন নিজ অর্থে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আব্দুল কবির ১৯৫৩ সালে ৩১ ডিসেম্বর সাবাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বৃন্দাবন সরকারি কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭১ সালে তিনি শায়েস্তাগঞ্জ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি ক্যাপেটন এজাজ আহমদ চৌধুরীর অধীনে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজরের বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্রে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। স্বাধীনাতার পরে তিনি ব্যবসার সাথে জড়িত হন। ১৯৭৬ সালে তিনি আশরাফিয়া লাইব্রেরী ও ১৯৮৪ সালে নিশান ওভারসীজ পরে আইডিয়াল বিজনেস সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি জনশক্তি রপ্তানীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। হবিগঞ্জ সমিতি, জালালাবাদ এসাসিয়েশন ও হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের তিনি আজীবন সদস্য ছিলেন।
ধর্মভীরু আাব্দুল কবির নিজের পৈত্রিক ভিটাও মসজিদে দান করেছেন। যার ভাড়ায় মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিজের সম্মানি দেওয়া হয়। তাঁর মৃত্যুতে মরহুমের নিজ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। মরহুম আলহাজ মুহাম্মদ আব্দুল কবির জীবদ্দশায় ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুশাসনগুলো মেনে চলার আমৃত্যু চেষ্টা করে গেছেন। সদালাপী, দানশীল, পরোপকারী ও সহজ-সরল প্রকৃতির আব্দুল কবির অসংখ্যবার পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেছেন এবং নিজ টাকায় এলাকার অনেককে হজ্ব করার সুযোগ দিয়েছেন। তিনি সবসময় অগ্রসর চিন্তা করতেন। ব্যবসায়িক মনোভাবকে উপেক্ষা করে তিনি কেবল ভবিষ্যত প্রজন্মকে জ্ঞানের আলোয় শিক্ষিত করতেই প্রতিষ্ঠা করেছেন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও অসংখ্য মসজিদ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। মানবসেবায় ব্রতী আব্দুল কবির নিজে সংসারী না হলেও রেখে গেছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী, অসংখ্য শিক্ষক, আত্মীয়-স্বজনসহ বহু গুণগ্রাহী। চির কুমার মুক্তিযোদ্ধা কবির অগণিত শিক্ষার্থীকেই মনে করতেন তাঁর সন্তান। মরহুমের বড় ভাই সিরাজ হক ছিলেন সুসাহিত্যিক, জেলা শিক্ষা অফিসার ও বানিয়াচং সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। মেঝো ভাই আব্দুস শহীদ একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানো ও সর্বশেষ একনজর তাঁকে দেখার জন্য তাঁর মরদেহ তাঁর নিজ হাতে গড়া জহুর চান বিবি মহিলা কলেজ মাঠে রাখা হবে। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল এগারোটায় জহুর চান বিবি মহিলা কলেজ মাঠে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে এই সূর্য সন্তানেকে।