সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে কাশবনের মোহনীয় সৌন্দর্যে মুগ্ধ প্রকৃতিপ্রেমীরা
শরতের নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। সেই দৃশ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রকৃতিও যেন সেজেছে অপরূপ সাজে। চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পাশের ছড়ার ধারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্র কাশফুল এখন দর্শনার্থীদের মনে ছুঁয়ে যাচ্ছে গভীরভাবে।
প্রতিদিনই সেখানে ভিড় করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। ছড়ার সোনালি বালুর ওপর জড়িয়ে থাকছে দর্শনার্থীদের পায়ের ছাপ। কেউ আসছেন একাকী, কেউ বা পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে ছবি তুলতে কিংবা প্রকৃতির কোলে কিছুটা সময় কাটাতে।
কাশফুল দেখতে আসা উদ্ভিদ গবেষক ড. সুভাষ চন্দ্র দেব বলেন, “যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে কাশবনের কাছে আসি। কাশফুলের শুভ্রতা মনকেও শুদ্ধ করে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য যেন আমাদের আরও যত্নশীল করে তোলে।”
হবিগঞ্জ শহর থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা নারী উদ্যোক্তা ইসরাত অপি জানান, “কাশফুলের সঙ্গে আমাদের এক নিবিড় সম্পর্ক। এখানের দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর, চারপাশে ছড়িয়ে আছে শুভ্রতার রেশ।”
সাহিত্যকর্মী আখতারুজ্জামান তরপদার বলেন, “বৃষ্টি আর রৌদ্রছায়ার খেলায় দুধসাদা ফুলে ভরে ওঠে কাশবন। মৃদু বাতাসে কাশ দোল খেলে মনে হয়। এ এক অপার সৌন্দর্যের পরম দান। তখন মন চায় রবিঠাকুরের সুরে গেয়ে উঠতে-‘তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে..।’
বাংলা সাহিত্যেও কাশবনের বর্ণনা অগণিতবার এসেছে। নদীর ধারে, জলাভূমি, চরাঞ্চল কিংবা পাহাড়ি এলাকায় বেড়ে ওঠে এই ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। কাশফুলের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ‘কুশ’-এর উল্লেখ পাওয়া যায় সনাতন ধর্মগ্রন্থ পুরাণেও। রবীন্দ্রনাথও কুশজাতক কাহিনী অবলম্বনে রচনা করেছিলেন নৃত্যনাট্য শাপমোচন।
উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ঝধপপযধৎঁস ঝঢ়ড়ৎঃধহবঁস, ইংরেজি নাম কধহং এৎধংং। কাশ তিন থেকে পনের মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। রুক্ষ সরল পাতা, গুচ্ছমূল, আর পালকের মতো নরম সাদা ফুলই এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। কাশফুলকে শুভ্রতার প্রতীক ধরা হয়, যা ভয় দূর করে শান্তি ও পবিত্রতার বার্তা দেয়। এজন্যই শুভ কাজে ব্যবহৃত হয় কাশফুল।
শরতের আগমনে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে কাশফুলের সাদা মেঘরাজি যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গেছে। এ সৌন্দর্য একবার চোখে পড়লে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে থমকে দাঁড়াবেই।
লেখক: কবি, প্রকাশক ও গণমাধ্যমকর্মী