ঢাকা ১১:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

সুনামগঞ্জ-তাহিরপুরে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ, পর্যটকদের ভোগান্তি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি,

টানা তৃতীয় বারের মতো তলিয়েছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের কয়েকটি অংশ। এতে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগে ওই পথ দিয়ে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা পর্যটকদের পারাপার করতে নৌকা ভাড়া বেশি নিচ্ছে স্থানীয়রা।

শুক্রবার (১২ জুলাই) দিনভর এ পথে হাজারো পর্যটককে ২০ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি গুনতে হয়েছে। রিজার্ভ নিতে চাইলেও জোর করে টাকা আদায় করা হচ্ছে।

শুক্র-শনিবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় তাহিরপুরে পর্যটকদের উপস্থিতি বেশি থাকে। এ সময় সড়কে পানি ওঠার সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে এরা।

ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে গত এক মাসের মাঝেই তৃতীয়বারের মতো তলিয়েছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক। শুক্রবার বিকেলে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে পানি বাড়ায় পর্যটন উপজেলা তাহিরপুরের সঙ্গে জেলা শহরের সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভেঙে ভেঙে যানবাহন পরিবর্তন করতে করতে যেতে হয়েছে পর্যটকদের। এতে পর্যটকরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুরে মোটরসাইকেল করে যেতে খরচ করতে হয় দেড়শ টাকা।

সড়কের শক্তিয়ারখলা অংশে পানি উঠায় এখানে চলছে ফেরি নৌকা। এখানেও ২০ টাকার স্থলে ৮০ টাকা দিতে হচ্ছে। এ ছাড়াও এই সড়কের আনোয়ারপুর অংশেও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ যান চলাচল। ফেরি-নৌকায় পার হতে হচ্ছে। এখানেও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।

শুক্রবার সরেজমিনে এসব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। বড় দল গঠন করে যারা এসেছেন, তারা সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে শক্তিয়ারখলা অংশে আসছেন। এখানে জনপ্রতি একশ থেকে দেড়শ টাকা গুনতে হচ্ছে। এখান থেকে অনেকে বড় নৌকা ভাড়া করে আনোয়ারপুরে চলে আসছেন। এক্ষেত্রে নৌকা রিজার্ভ করতে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যন্ত দিতে হয়েছে। আবার আনোয়ারপুর থেকে তাহিরপুর যেতে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ভাড়া জনপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকা থেকে আসা পর্যটক রিমন বলেন, আমরা বৃহস্পতিবার রাতের বাসে ঢাকা থেকে ২০ জন একসঙ্গে তাহিরপুরে ঘুরতে এসেছি। এখনো পথে রয়েছি। সুনামগঞ্জ থেকে সরাসরি যেতে পারছি না তাহিরপুরে। ভেঙে ভেঙে একাধিক পরিবহন পরিবর্তন করতে হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়াও দিতে হয়েছে।

জামালপুরের পর্যটক মো. সিপন বললেন, দুর্যোগের সুযোগে পরিবহনচালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। সিন্ডিকেট করে ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। আমরা যেহেতু এতদূর থেকে এলাম, তাই বেশি টাকা লাগলেও তাহিরপুরে যেতেই হবে।

নৌকাচালক মো. জসিম উদ্দিন স্বীকার করলেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথা। তিনি বললেন, জনপ্রতি যাত্রীদের কাছ থেকে ৮০ টাকা করে আদায় করছি। শক্তিয়ারখলা থেকে আনোয়ারপুর আসতে অনেক সময় লাগে। তাই ভাড়াও বেশি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যায় থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। ওসিকে বলেছি, ওখানে গিয়ে আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ করে দেব। যারা সে অনুযায়ী ভাড়া নেবে, তারা কেবল যাত্রী পারাপার করতে পারবে। অন্যরা যারা বশি নিতে চাইবে, তারা এখানে যাত্রী পারাপার করতে পারবে না।

এদিকে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে আবারও নদীর পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে কখনো বাড়ছে কখনো কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৫৫ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার তথ্য মতে, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা সকাল ৯টায় ৩০ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। গত ৯ ঘণ্টায় ২৩ সেন্টিমিটার পানি কমেছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ ও উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও কোথাও কোথাও অবনতি হতে পারে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১২:৫৬:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪
৩৯ বার পড়া হয়েছে

সুনামগঞ্জ-তাহিরপুরে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ, পর্যটকদের ভোগান্তি

আপডেট সময় ১২:৫৬:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

টানা তৃতীয় বারের মতো তলিয়েছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের কয়েকটি অংশ। এতে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগে ওই পথ দিয়ে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা পর্যটকদের পারাপার করতে নৌকা ভাড়া বেশি নিচ্ছে স্থানীয়রা।

শুক্রবার (১২ জুলাই) দিনভর এ পথে হাজারো পর্যটককে ২০ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি গুনতে হয়েছে। রিজার্ভ নিতে চাইলেও জোর করে টাকা আদায় করা হচ্ছে।

শুক্র-শনিবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় তাহিরপুরে পর্যটকদের উপস্থিতি বেশি থাকে। এ সময় সড়কে পানি ওঠার সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে এরা।

ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে গত এক মাসের মাঝেই তৃতীয়বারের মতো তলিয়েছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক। শুক্রবার বিকেলে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে পানি বাড়ায় পর্যটন উপজেলা তাহিরপুরের সঙ্গে জেলা শহরের সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভেঙে ভেঙে যানবাহন পরিবর্তন করতে করতে যেতে হয়েছে পর্যটকদের। এতে পর্যটকরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুরে মোটরসাইকেল করে যেতে খরচ করতে হয় দেড়শ টাকা।

সড়কের শক্তিয়ারখলা অংশে পানি উঠায় এখানে চলছে ফেরি নৌকা। এখানেও ২০ টাকার স্থলে ৮০ টাকা দিতে হচ্ছে। এ ছাড়াও এই সড়কের আনোয়ারপুর অংশেও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ যান চলাচল। ফেরি-নৌকায় পার হতে হচ্ছে। এখানেও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।

শুক্রবার সরেজমিনে এসব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। বড় দল গঠন করে যারা এসেছেন, তারা সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে শক্তিয়ারখলা অংশে আসছেন। এখানে জনপ্রতি একশ থেকে দেড়শ টাকা গুনতে হচ্ছে। এখান থেকে অনেকে বড় নৌকা ভাড়া করে আনোয়ারপুরে চলে আসছেন। এক্ষেত্রে নৌকা রিজার্ভ করতে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যন্ত দিতে হয়েছে। আবার আনোয়ারপুর থেকে তাহিরপুর যেতে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ভাড়া জনপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকা থেকে আসা পর্যটক রিমন বলেন, আমরা বৃহস্পতিবার রাতের বাসে ঢাকা থেকে ২০ জন একসঙ্গে তাহিরপুরে ঘুরতে এসেছি। এখনো পথে রয়েছি। সুনামগঞ্জ থেকে সরাসরি যেতে পারছি না তাহিরপুরে। ভেঙে ভেঙে একাধিক পরিবহন পরিবর্তন করতে হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়াও দিতে হয়েছে।

জামালপুরের পর্যটক মো. সিপন বললেন, দুর্যোগের সুযোগে পরিবহনচালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। সিন্ডিকেট করে ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। আমরা যেহেতু এতদূর থেকে এলাম, তাই বেশি টাকা লাগলেও তাহিরপুরে যেতেই হবে।

নৌকাচালক মো. জসিম উদ্দিন স্বীকার করলেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথা। তিনি বললেন, জনপ্রতি যাত্রীদের কাছ থেকে ৮০ টাকা করে আদায় করছি। শক্তিয়ারখলা থেকে আনোয়ারপুর আসতে অনেক সময় লাগে। তাই ভাড়াও বেশি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যায় থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। ওসিকে বলেছি, ওখানে গিয়ে আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ করে দেব। যারা সে অনুযায়ী ভাড়া নেবে, তারা কেবল যাত্রী পারাপার করতে পারবে। অন্যরা যারা বশি নিতে চাইবে, তারা এখানে যাত্রী পারাপার করতে পারবে না।

এদিকে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে আবারও নদীর পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে কখনো বাড়ছে কখনো কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৫৫ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার তথ্য মতে, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা সকাল ৯টায় ৩০ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। গত ৯ ঘণ্টায় ২৩ সেন্টিমিটার পানি কমেছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ ও উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও কোথাও কোথাও অবনতি হতে পারে।